আহ্বান, আশ্বাসেও থামেনি দরপতন

রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুজবে কান দিয়ে শেয়ার না বেচতে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানালো হলেও তাতে কাজ হয়নি, পুঁজিবাজারে অব্যাহত রয়েছে দরপতন।

রিয়াজুল বাশার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2018, 12:31 PM
Updated : 1 Feb 2018, 01:08 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বা ডিএসইএক্স ১৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৩০ শতাংশ কমে প্রায় ৬ হাজার ২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে; শরিয়াহ সূচক ১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে প্রায় একহাজার ৩৯৭ পয়েন্টে ঠেকেছে এবং ডিএস৩০ ১১ দশমিক ০২ পয়েন্ট কমে প্রায় ২ হাজার ২২৭ পয়েন্টে ঠেকেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায় ও তারল্য সংকটসহ কয়েকটি ঘটনায় বাজারে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। 

এনিয়ে গত তিনদিনে ডিএসইএক্স সূচক ১৫৫ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশে নেমে এল।

বাজারের এ অবস্থা দেখে বুধবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খায়রুল বাশার।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছাড়তে বারণ করে তিনি বলেন, “সামনে দেশে কী যেন একটা হতে যাচ্ছে- এমন একটি গুজব বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলেছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল এক ধারণা, ওই তারিখটা (৮ ফেব্রুয়ারি) চলে গেলেই আপনারা বুঝতে পারবেন, আসলে কিছুই হয়নি।”

তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু মনে করেন, একের পর এক কয়েকটি ঘটনায় বাজারে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, “৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি হয় তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেই। যে কোনও ধরনের অনিশ্চয়তার চাপ বাজার নিতে পারে না।”

এছাড়াও ঋণ-আমানত (এডি) অনুপাত কমানোর চাপও বাজারে এসেছে বলে মনে করেন টিটু।

তিনি বলেন, এডি অনুপাত কমানোয় ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলো আমানত বাড়াতে সুদের হার দুই শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এতে ব্যাংক আমানতে দিকে যে অর্থ যাবে সেগুলো পুঁজিবাজারে আসবে না।

তবে বাজারে ইতিবাচক দিকও রয়েছে বেলে মনে করেন মনা ফাইনান্সিয়াল কনসালট্যান্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজের এই পরিচালক।

তিনি বলেন, এক বছর আগের তুলনায় বাজার এখনো প্রায় ছয়শ পয়েন্ট বেড়ে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩০ শতাংশের বেশি বা ১৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা কম।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৭, কমেছে ১৫১ টির ও অপরিবর্তিত রয়েছ ৪৮ টির।

বুধবার দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা ভালো আসার খবরে বাজারে দরবৃদ্ধির শীর্ষে চলে এসেছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানির শেয়ারটির দর এদিন ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ১২৫ টাকা ৯০ পয়সায় পৌঁছেছে। গত চারদিনে শেয়ারটির দর বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।

দরবৃদ্ধির দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে জেড ক্যাটগরির ইমাম বাটন। এদিন শেয়ারটির দর ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা পৌঁছেছে। দরবৃদ্ধির শীর্ষে এর পরের তিনটি শেয়ারও জেড ক্যাটগরির। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুলামিয়া কটন, মেঘনা কনডেন্ডনস মিল্ক ও মেঘনা পেট।

এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমে যাওয়ায় দর হারানোর শীর্ষে রয়েছে অ্যাপেক্স ট্যানারি। প্রায় চার দশমিক কমে ১৩৭ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন শেষ করেছে শেয়ারটি।

দর হারানোর তালিকায় আরো রয়েছে- স্যালভো কেমিক্যাল, আইসিবিএএমসিএলদ্বিতীয়, এসপিসিএল ও আইসিবিসোনালীপ্রথম মিউচুয়াল ফান্ড।

এদিকে লেনদেনে শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোন দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে ৫০২ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন শেষ করেছে। এর পরেই লেনদেনে রয়েছে- মুন্নু সিরামিক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার ফার্মা।

এদিকে বৃহস্পতিবার দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৭৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বেড়ে ১২০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

লেনদেনে থাকা ২৩২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ১২৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দর।

দিন শেষে সিএসই সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) প্রায় ৬৭ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৬২৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।