মুদ্রানীতির পরদিন পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

ঋণের লাগাম টেনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার পরদিন বাংলাদেশের দুই পুঁজিবাজারেই বড় দরপতন হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2018, 02:37 PM
Updated : 4 April 2018, 04:32 AM

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৮ পয়েন্ট বা ০.৭৮ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবিক সূচক সিএএসপিআই ৮৮ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে দুই বাজারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার জানুয়ারি-জুন মেয়াদের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, সেখানে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে আগের ছয় মাসে ঋণ প্রবাহ ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।

গত জুলাই মাসে অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। এই হিসাবে দেখলে নতুন মুদ্রানীতির ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আগেরবারের চেয়ে বেশি।

কিন্তু জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঋণ প্রবাহে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ১৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে তার চেয়ে কম লক্ষ্য ঠিক করায় ‘ঋণের লাগাম’ টেনে ধরার কথা বলা হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলছেন, হিসাবের এই মারপ্যাঁচেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং তাতে মঙ্গলবার পুঁজিবাজরে দরপতন হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কিছু কিছু ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করে নির্ধারিত সীমার চেয়েও বেশি হারে ঋণ বিতরণ করেছে। নতুন মুদ্রানীতিতে সেই ঋণের লাগাম টানা ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে উপায় ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই কাজটি না করত, তাহলে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিত।

“আমি মনে করি মুদ্রানীতিতে ঠিক পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে, বিনিয়োগারীরা অযথাই ভয় পাচ্ছেন। এর নেতিবাচক প্রভাবেই দরপতন হয়েছে।”

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৯৯ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কম।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৩৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৬টির, কমেছে ২০১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছ ৪০টির দাম।

ডিএসইর প্রধান সূচক বা ডিএসইএক্স ৪৮ পয়েন্ট কমে প্রায় ৬ হাজার ১২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে; ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪১৪ পয়েন্টে ঠেকেছে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৬ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে হয়েছে ২ হাজার ২৬৭ পয়েন্ট।

ঢাকার পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধনের প্রায় ১৬ শতাংশ রয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বড় কোম্পানি গ্রামীণফোনের হাতে। এ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন মঙ্গলবারের সূচক পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গ্রামীণফোনের শেয়ার দর এদিন ৫১০ টাকা থেকে ১ শতাংশ কমে ৫০৫ টাকা হয়েছে। আর ডিএসইর প্রধান সূচক এদিন কমেছে ০.৭৮ শতাংশ।

মঙ্গলবার সকালে ডিএসইর ওয়েবসাইটে গ্রামীণফোনের ২০৫% লভ্যাংশ (মধ্যবর্তীসহ) এবং ২০ টাকা ৩১ পয়সা ইপিএসের ঘোষণা আসার পরও দিনশেষে এই দরপতন হয়।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ইয়াওয়ার সায়ীদ মনে করেন, গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম গত কয়েক দিনে বেশ কিছুটা বেড়েছিল। মঙ্গলবার অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়ায় লভ্যাংশ দেওয়ার পরও দাম কমেছে।

“আজ মুনাফা তোলার কারণেই পুঁজিবাজরে সূচক কমেছে বলে আমার মনে হয়। তবে বাজারে কিছুটা অস্থিরতা আছে। সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বিনিয়োগকারীরা তা দেখছে।”

ঢাকার বাজারে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানি হল- গ্রামীণ ফোন, সিটি ব্যাংক লিমিটেড,  মুন্নু সিরামিকস, নাহী অ্যালুমিনিয়াম, বিডি ফাইন্যান্স, আমরা নেটওয়ার্ক, স্কয়ার ফার্মা, ন্যাশনাল টিউবস, পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স, ইফাদ অটোস ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।

দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ ১০ কোম্পানি হল মুন্নু স্টাফলার, খান ব্রাদার্স পিপি, মেট্রো স্পিনিং, মুন্নু সিরামিকস, তাক্কাফুল ইন্সুরেন্স, নূরানী ডাইং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আমরা নেটওয়ার্ক, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স ও আরএসআরএম স্টিল। 

অন্যদিকে বঙ্গজ লিমিটেড, শাইনপুকুর সিরামিকস, ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড, বেক্সিমকো সিন্থেটিক্স, ইমাম বাটন, সায়হাম কটন, নাহী অ্যালুমিনিয়াম, দেশ গার্মেন্টস, এসিআই ফর্মুলেশন ও সিটি ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে এদিন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার দিন শেষে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কমে ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

লেনদেনে থাকা ২৩৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১২৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির দর।

দিন শেষে সিএসই সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) ৮৮ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৯৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারল্য সঙ্কটের কারণে বাজারে আগে কিছুটা নিম্নমুখী ধারা ছিল। এখন আবার সেই ধারায় ফেরত এসেছে।”

নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে এক ধরনের ‘ভয়ের’ কারণেই মঙ্গলবার বাজারে দরপতন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।