বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলছেন, সামনে বিদেশি বিনিয়োগ এলে বাজার ‘আরও ভালো’ হবে।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দুই পুঁজিবাজারেই সূচক বেড়েছে; যদিও লেনদেন ছিল আগের দিনের চেয়ে কম।
দিনের লেনদেন শুরুর পর প্রথম আধা ঘণ্টায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও পরে বিপরীত যাত্রা দেখা যায়।
দিন শেষ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে আবার ৬ হাজার ১২২ হয়েছে।
এর আগে বুধবার সূচক কমে ৩০ পয়েন্ট, মঙ্গলবার ৭১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ১২৮ পয়েন্টে উঠেছিল, যা সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে একদিনে ডিএসইক্সের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।
কিন্তু তার আগে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার সামান্য বৃদ্ধি ছাড়া টানা ১০ কার্যদিবসে ডিএএসইএক্স প্রায় ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কমে সোমবার এই সূচক ছয় হাজার পঞ্চাশের ঘরে নেমে যায়।
এই পতনের মধ্যে অনেকে বলছিলেন যে পুঁজিবাজরে তারল্য সঙ্কট রয়েছে ।
তবে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজরে কোনো সমস্যা দেখছেন না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।
তিনি বলেন, “এটি স্বাভাবিক পতন, এর মধ্যে তারল্য সঙ্কটের কোনো বিষয় নেই।
“উত্থান-পতন পুঁজিবাজারের একটি খুব স্বাভাবিক ঘটনা, সূচক অনেক বেড়ে যাওয়াতে অনেকেই মুনাফা তুলে নিতে শুরু করেছে তাই বিক্রির চাপ বেড়েছে, কিছু শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় সূচক কমে গিয়েছিল।”
“আমি মনে করি পুঁজিবাজার সামনে ভলে করবে,” বলেন শাকিল রিজভী।
বিএমবিএর সাবেক সভাপতি হাফিজ বলেন, “সামনে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো সময় অপেক্ষা করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী আসলে তারা পুঁজিবাজারে নতুন নতুন প্রডাক্ট আনবে, বাজারের গভীরতা বাড়বে।”
তারল্য সঙ্কটের বিষয়টি সঠিক নয় বলে মনে করেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলীও।
ব্যাংক খাতে এখনও ৯১ হাজার কোটি টাকা অলস পরে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছু ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট আছে, তার সংখ্যা খুবই কম।”
তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী একটি সংগঠনের নেতা রুহুল আমিন বলেন, বিনিয়োগকারীরা হতাশ ।
“আমরা গত দুই তিন মাস ধরে মুনাফা করতে পারছি না।”
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের উপর আস্থা হারাচ্ছেন বলে তার দাবি।
“আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই, যখন দেখি বড় বড় যায়গা থেকে পুঁজিবাজার নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা হচ্ছে।”
রুহুল আমিনের মতে, “ব্যাংকগুলোর মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে বলে তার একটা প্রভাব ব্যাংকের শেয়ারে আছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নেওয়া সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজরে প্রভাব ফেলেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত সীমার (এডিআর) অনুপাত কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এডিআর কমিয়ে আনলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৮ কোটি টাকা ৯৬ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কমে।
টাকা অংকে চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও ব্যাংক শেয়ারের।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৩৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২টির, কমেছে ১৩৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৮টির।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানি হল- স্কয়ার ফার্মা, ড্রাগন সোয়েটার, ইফাদ অটোস, গ্রামীণফোন, বিডি থাই, সিটি ব্যাংক, গোল্ডেন হারভেস্ট, আইপিডিসি, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রজ ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হল- রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ইস্টার্ণ লুব্রিকেন্টস, গ্রীন ডেল্টা ইন্সু, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, লিব্রা ইনফিউশন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মুন্নু স্টাফলার, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ১ম মি. ফা., রিলায়েন্স ওয়ান ও সেন্ট্রাল ইন্সু
অন্যদিকে দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হল- এসইএমএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ড, ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড, নাহী এলুমিনিয়াম, বিডি অটোকারস, শেফার্ড ইন্ডাঃ, সায়হাম টেক্স, ডেল্টা লাইফ ইন্সুঃ, বিডি থাই, এমারেল্ড ওয়েল ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কমে ২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
লেনদেনে থাকা ২৩৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৯টির, কমেছে ১০৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির দর।
দিন শেষে সিএসই সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) প্রায় ৩৭ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৮৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।