‘বিক্রির চাপ, তারল্য ঘাটতিতে’ দরপতন

নতুন বছরের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে দরপতনের যে ধারা শুরু হয়েছিল, গত সপ্তাহের শেষ  কার্যদিবসের নগন্য উত্থান ছাড়া তাই অব্যাহত রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 01:28 PM
Updated : 14 Jan 2018, 01:34 PM

রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেনে শেষে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই শেয়ারের প্রধান মূল্য সূচক প্রায় এক শতাংশ হারে কমেছে।

আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমার পাশাপাশি বাজারে হাতবদল হওয়া বেশিরভাগ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়া এবং তারল্য প্রবাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় পতন শুরু হয়েছে।  

গত সাত কাযদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০০ পয়েন্টের বেশি বা তিন দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ১১৭ পয়েন্টে।

এ সময়ে শুধু একদিন সূচক বাড়লেও ছয়দিনই কমেছে।

রোববার ডিএসইতে প্রায় চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক বা ডিএসইএক্স ৬১ পয়েন্ট বা প্রায় দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে।

এর আগে ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ পতন হয়েছিল। সেদিন ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সূচক পতন হয়েছিল।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইয়াওয়ার সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুঁজিবাজারে কিছু শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে গেয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা সেসব শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন, যার ফলে বিক্রির চাপ বেড়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে।”

ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুদ্রা বাজারে একটু তারল্যের অভাব দেখা দিয়েছে। আমানতে সুদের হার বৃদ্ধি শুরু হয়েছে।

“আমানতে সুদের হার বাড়লে পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংকের দিকে বিনিয়োগ যাওয়া শুরু করে।”

এ কারণেই পুঁজিবাজারে টাকার অভাব দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমার পাশাপাশি বাজারে হাতবদল হওয়া বেশিরভাগ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর কমেছে।

হাতবদল হওয়া ৩৩৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৮টির, কমেছে ২৫৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছ ৩৪টির।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা ১৪ শতাংশ কম।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরুর পর থেকেই সূচক কমতে থাকে এবং দিনের শেষ পর্যন্ত পতনের ধারায় চলতে থাকে।

দিন শেষে ডিএসইএস বা ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমে প্রায় একহাজার ৩৮৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৭ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট কমে প্রায় ২ হাজার ২৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও প্রকৌশল খাত লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে। বাজারের মোট লেনদেনের ২৩ শতাংশ হয়েছে এখাতে। ব্যাংক খাতে ১৯ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ১৩ হয়েছে ১৩ শতাংশ।

লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে প্রকৌশল খাতের তিন কোম্পানি। এগুলো হলো- বিডি থাই, ইফাড অটোজ, ন্যাশনাল টিউবস। এর পরেই রয়েছে ঔষধ ও রসায়ন খাতের কেয়া কসমেটিকস ও স্কয়ারফার্মা।

এদিকে পতনের বাজারে দরবৃদ্ধিতে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির আধিপত্য দেখা গেছে। দরবৃদ্ধিকে শীর্ষস্থানে রয়েছে- বিডি অটোকারস, আজিজ পাইপস, তাল্লু স্পিনিং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং।

বিদেশি কোম্পানিকে সঙ্গে নেয়ার খবরে দরবৃদ্ধির পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে বার্জার পেইন্টস।

দর হারানোর শীর্ষে রয়েছে- আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফ্যাস ফাইন্যান্স, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও ওয়ান ব্যাংক।    

এদিকে রোববার দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা কমে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

লেনদেনে থাকা ২৪০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ১৭৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর।

দিন শেষে সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই প্রায় ১৮৩ দশমিক ০২ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৯১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।