তারল্য সংকটের শংকায় সপ্তাহজুড়ে দরপতন

ঋণ-আমানতের অনুপাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাগাম টানতে যাচ্ছে এমন খবরে পর ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের শংকায় নতুন বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রায় পুরোটা দরপতনের মধ্য দিয়ে পার করল দেশের পুঁজিবাজার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2018, 11:27 AM
Updated : 12 Jan 2018, 12:06 PM

পাঁচ কাযদিবসের মধ্যে শুধু শেষ দিন শেয়ারের মূল্য সূচকের সামান্য বৃদ্ধি বিবেচনা না নিলে গত সপ্তাহের পুরোটাই নেতিবাচক ছিল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে।

এর মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় দুই শতাংশ বা ১২৩ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ১৭৯ পয়েন্টে নেমেছে।

ডিএসইতে বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির নিয়ে তৈরি সূচক ডিএসই৩০ দেড় শতাংশ বা ৩৫ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

তবে সূচক কমলেও ডিএসইতে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ; হাতবদল হয়েছে দুই হাজার ২৩১ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড।

গত ৩ জানুয়ারি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর ফজলে কবির ঋণ-আমানতের (এডি) অনুপাত কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।

ঋণ প্রবাহে এই সংকোচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মুদ্রানীতিতে ঘোষণা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই খবরের পর থেকে ডিএসইতে টানা পাঁচ দিনে ১৪৬ পয়েন্ট হারানোর পর শেষ কাযদিবসে বৃহস্পতিবার ছয় পয়েন্টের কিছুটা বেশির বেড়েছে।

এডি রেশিও ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়ায় পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে বলেও মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক দরপতনে সবচেয়ে বেশি ঝড় গেছে ব্যাংক খাতের ওপর দিয়ে। এক সপ্তাতেই ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন তিন দশমিক ৯২ শতাংশ কমেছে, সিমেন্ট খাতের কমেছে তিন দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজার মূলধন হারিয়েছে ৩ দশমিক সাত শতাংশ।

তবে এই দরপতনের মধ্যে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, প্রকৌশল ও বস্ত্রসহ অধিকাংশ খাতেরই বাজার মূলধন কমলেও ওষুধ খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে দশমিক ৩২ শতাংশ; কিছুটা বেড়েছে সিরামিক খাতেরও।

গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম কমেছে ২৪২টির, বেড়েছে ৭৮টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির এবং লেনদেন হয়নি দুইটি।

দরপতনের বাজারের দর বাড়ার দৌড়ে ছিল জেড ক্যাটাগরির দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারগুলোর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জুট স্পিনার্স, মেঘনা পেট, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, বিডি অটোকারস ও আজিজ পাইপস।

এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিজ পাইপস ১১ বছর পর বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে বুধবার থেকে বি ক্যাটগরিতে উন্নীত হয়েছে।

দর হারানোর শীর্ষে রয়েছে- আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, শাহজালাল ব্যাংক, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, ইউনাইটেড এয়ার ও নর্দার্ন।

নতুন পণ্য চালুর ঘোষণায় লেনদেনে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে ইফাড অটোস। এর পরেই রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ন্যাশনাল টিউব ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং।

গত সপ্তাহে বাজারে লেনদেনে শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে ব্যাংক। মোট লেনদেনের ১৯ শতাংশ হয়েছে এখানে। ১৮ শতাংশ লেনদেন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত এবং ১৬ শতাংশ লেনদেন হওয়া বস্ত্র খাত রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে।

এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২ শতাংশের বেশি কমে ১৯ হাজার ৯৮ পয়েন্টে নেমেছে।

এই বাজারের সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৭৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির, কমেছে ১৯৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির।