শেয়ার কিনতে যেসব বিষয় মাথায় রাখেন শাকিল রিজভী

ভালো কোম্পানি কিন্তু শেয়ারের দাম কম এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা আছে ও তার পণ্যের বাজার ভালো- এসব বিনিয়োগের আগে বিবেচনায় নিতে হয়।

ফারহান ফেরদৌস নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2018, 03:54 AM
Updated : 8 Jan 2018, 08:19 AM

এই দিকগুলোই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার আগে মাথায় রাখেন শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী।

একাধিকবার ডিএসইর সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ডিএসইর সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধনে ব্যাপক উত্থান ও ধসের সময় সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছিলেন শাকিল রিজভী।

কী দেখে বিনিয়োগ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার সময় আমি প্রথমে দেখি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কে আছে, তার অডিটর কে এবং কোম্পানিটি যে খাতে আছে সে খাতের বর্তমান অবস্থা এবং সামনে কতটুকু প্রবৃদ্ধি হবে।”

তার পর তিনি দেখেন বাজারে অন্য শেয়ারের তুলনায় ওই শেয়ারটি কম দামে বা অনেক দিন ধরে একটা দামে বিক্রি হচ্ছে কি না।

শাকিল বলেন, তার সঙ্গে কেম্পানির ব্যবসা যদি ভালো হয়, ভালো লোক দিয়ে পরিচালিত হয় তখন সেই কোম্পানিতে তিনি বিনিয়োগ করেন।

তার মতে, কোম্পানির ব্যবসা ভালো বলতে এর তৈরি পণ্যের বিক্রি ও কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এবং উত্পাদন বাড়ানোর নতুন পরিকল্পনা বোঝানো হয়।

শাকিল স্টকের এমডি বলেন, এভাবে মনস্থির করে শেয়ার কেনার পরে যদি দাম কমেও যায় তাহলেও তিনি ‘নার্ভাস’ হন না। কারণ ওই শেয়ারের দাম বৃদ্ধি ও কোম্পানির ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত থাকেন।

“বড় ব্যাপার হচ্ছে, আমি দেখি আমি যেই কোম্পানির শেয়ার কিনছি, সেই কোম্পানির লোকগুলো আমার চেয়ে ভালো ব্যবস্থাপক কি না, অর্থাৎ আমি যদি কোনো ব্যবসা শুরু করি আমি যে সফলতা পাব, এই কোম্পানির ব্যবস্থাপকরা এর চেয়ে ভালো করতে পারবে কি না।”

শাকিল রিজভী বলেন, একজন ভালো বিনিয়োগকারীকে প্রথমে ভালো কোম্পানি বাছাই করতে হবে। ভালো কোম্পানি মানে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, যার আর্থিক বিবরণীর তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্বাস করা যায়।

তার হিসেবে, সেগুলো ভালো কোম্পানি, যেগুলোর শেয়ারের দাম ও মুনাফা যুক্তিসঙ্গত এবং শেয়ারের মুল্য আয়ের অনুপাতও (পিই রেশিও) যুক্তিসঙ্গত।

শাকিল বলেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধি ভালো ও ভবিষ্যতে ভালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে এমন কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করতে হবে।

তবে কোম্পানি বাছাইয়ে ভুল হলে হলে, বুঝার সঙ্গে সঙ্গে ওই শেয়ার বিক্রির পরামর্শ দেন তিনি।

“সেটা কিন্তু এমন না যে ১০ টাকা শেয়ারের দাম কমল মানে কোম্পানিটা খারাপ। বিষয়টা হচ্ছে- কোনো এমন খবর এল যাতে বোঝা গেল যে কোম্পানিটির মুনাফা সামনে কমে যাবে। তখই শেয়ার ছেড়ে দেন।”

শাকিল রিজভী মনে করেন, কম সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মুনাফা নিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

“যেমন আমি ৫০ টাকা করে কোনো কোম্পানির একহাজার শেয়ার কিনলাম। আমার আশা, বছর শেষে ৩০ শতাংশ লাভ করব। কিন্তু  একমাস পরে কোম্পানির শেয়ারের দাম হয়ে গেল ১০০ টাকা। আমি যদি এখন ৫০০ শেয়ার ছেড়ে দেই তাহলে আমার সমস্ত বিনিয়োগ কিন্তু উঠে আসল, বাকিটা পুরাটা লাভ হল।”

অভিজ্ঞ এই বিনিয়োগকারী মনে করেন, পুঁজিবাজারে ঝুঁকির থাকলেও সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করে ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি লাভ করা যায়।

উদারহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “২০১৫ সালে যারা ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে, তাদের ২০১৭ সাল নাগাদ প্রতি বছর ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা আছে।”

পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমানতালে পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন না বাড়াকে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবে তুলে ধরেন শাকিল রিজভী।

“অর্থাত্, বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশের পুঁজিবাজার বড় হয় নাই। পুঁজিবাজার যেমন দেশের অর্থনীতির চেয়ে বেশি বড় হওয়া ভালো না। আবার অর্থনীতি আগাবে কিন্তু পুঁজিবাজার বাড়বে না সেটাও ভালো না।”

অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজার বড় না হওয়ার কারণ হিসেবে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি না হওয়া, বাজারে মানুষের আস্থার অভাব ও ভালো বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণের অভাবের কথা উল্লেখ করেন শাকিল রিজভী।

“দেখা যাচ্ছে, অনেকে কম মুনাফায় এখনো ব্যাংকে টাকা রাখছে, কিন্তু পুঁজিবাজারে আসছে না। যদিও আমাদের দেশে এখন ব্যাংকের চেয়ে পুঁজিবাজারে মুনাফা বেশি।

 

“আমাদের উচিত, ভালো বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করা। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কীভাবে তারা পুঁজিবাজারে আসবে। সেই সাথে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়াতে হবে।”

এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজার বড় করা যাবে বলে মনে করেন শাকিল রিজভী।

নতুন বছরের পুঁজিবাজার নিয়ে তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারী সবাই আশাবাদী যে, ২০১৮ সাল পুঁজিবাজারের জন্য ভালো যাবে। সবাই মনে করছে, ২০১৮ সালে নতুন ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

“বিদেশি বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়তেছে- এটা একটা ভালো দিক। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পুঁজিবাজারে নতুন কিছু ‘প্রডাক্ট’ দেখা যাবে। লেনদেনের সময় বাড়ানোর উপর কাজ হচ্ছে... ঘণ্টাখানেক বাড়ানো হতে পারে।”

সব মিলিয়ে সামনের দিনটা পুঁজিবাজারের জন্য সুদিনের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার শংকা কিছুটা থাকলেও সেটাকে পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না তিনি।

শাকিল বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছু শংকা থাকতে পারে। তবে পুঁজিবাজারের ব্যাপক সম্ভাবনার কারণে শংকাটা ম্লান হয়ে যাবে।”

কারণ বাংলাদেশ মোটা দাগে ভালো বিনিয়োগপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।