জুট স্পিনার্স, সমতা লেদার ও জিল বাংলার হিসাবে গরমিল

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ত্রুটি ও নানা অনিয়ম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2017, 12:29 PM
Updated : 21 Dec 2017, 12:29 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এগুলো হল- জুট স্পিনার্স, সমতা লেদার কমপ্লেক্স ও জিল বাংলা সুগার মিলস।

জুট স্পিনার্সের ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম নিয়েও নিরীক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। জুট স্পিনার্সের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এতে মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালের বাংলাদেশের শ্রম আইনের ২৩৪ (বি) ধারা পরিপালন করেনি। এছাড়া শ্রমিক ফান্ডের টাকার সুদ দেওয়া হয়নি বলে নিরীক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।

কোম্পানিটির ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তারপরেও আর্থিক হিসাবে এ সংক্রান্ত উৎপাদন ব্যয় ও প্রশাসনিক ব্যয় দেখানো হয়। এছাড়া আয়েশা কাদিরের ৩৫ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ না করেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত সুদজনিত ব্যয় আর্থিক হিসাবে দেখায়নি। এতে দায় কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে নিরীক্ষক জানিয়েছেন।

এদিকে কোম্পানির সঙ্গে সর্ম্পকিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন হলেও বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস)-২৪ অনুযায়ি, তা প্রকাশ করা হয় না। এছাড়া কোম্পানির পরিচালকদের সঙ্গে অধিকাংশ লেনদেন নগদে করায় নিরীক্ষক আপত্তি জানিয়েছেন।

সমতা লেদার

সমতা লেদার কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জমির বিপরীতে অগ্রিম টাকা না দিয়েও পরিশোধের বিষয়ে আর্থিক হিসাবে তথ্য প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে নিরীক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।

সমতা লেদার কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জমি কেনার জন্য অগ্রিম না দিয়েও ১৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা প্রদান করেছে বলে দেখিয়েছেন। আর কোম্পানিটির ব্যবসা রপ্তানিমুখী হলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোনো ধরনের রপ্তানি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস)-১২ অনুযায়ী, সমতা লেদারে ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করা হয় না বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপর অবচয় গণনা করলেও তা হিসাব মান অনুযায়ী সংরক্ষিত আয়ে স্থানান্তর করে না। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন কেনা স্থায়ী সম্পদের উপরে পূর্ণ বছরের অবচয় গণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেদিন কেনা হয়েছে, তা বিবেচনায় না নিয়ে বেশি অবচয় গণনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

জিল বাংলা সুগার মিলস

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জিল বাংলা সুগার মিলসের ২৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত লোকসানের কারণে ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

জিল বাংলা সুগার দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩০ জুন কোম্পানিটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকায়, যা শেয়ারপ্রতি হিসাবে ৪১৮ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটি থেকে প্রতি মেট্রিক টন চিনি বিক্রয় করা হয় ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা করে। কিন্তু এই ১ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনে ৮১ হাজার ১৪৯ টাকা ব্যয় হয়, যাতে প্রতি মেট্রিক টনে কোম্পানির লোকসান হয় ২১ হাজার ৩৪৯ টাকা। কোম্পানিটির বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওনা ১ লাখ ২২ হাজার টাকা আদায় নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারপরেও এই পাওনার বিপরীতে কোন সঞ্চিতি গঠন করা হয় না বলে নিরীক্ষক জানিয়েছেন।

কোম্পানির মূলধন ঘাটিত, লোকসান ও পাওনা আদায়ের অসম্ভাব্যতা নিয়ে কোম্পানিটির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যদি সরকার সহায়তা না করে, তাহলে নিকট ভবিষ্যতে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করে নিরীক্ষক।