ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার কেনার অস্বাভাবিক ঝোঁক
ফারহান ফেরদৌস, নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 26 Nov 2017 09:15 PM BdST Updated: 27 Nov 2017 09:01 AM BdST
লভ্যাংশ নেই, নিয়মিত লোকসানে রয়েছে ও শেয়ারের দরবৃদ্ধি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে- এমন কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এমন তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে বিক্রেতাশূন্য হয়ে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
তিন কোম্পানি হলো- আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডস ও ইস্টার্ন কেবলস। এর মধ্যে প্রথম দুটি কোম্পানি জেড ক্যাটাগরির, শেষেরটি এ ক্যাটাগরির হলেও পিই রেশিওর হিসাবে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত।
তিনটি কোম্পানিরই মৌলভিত্তি ভাল নয়, এগুলোর সাম্প্রতিক কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্যও নেই। তারপরও যেভাবে শেয়ারের দর বাড়ছে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইওয়ার সাইদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লোভ আমাদেরকে তাড়িত করছে। যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম, যা হওয়ার কথা না তা হয়ে যাচ্ছে।
“হঠাত্ করেই ধস নামতে পারে অযৌক্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়া এসব শেয়ারের দরে। এসব কোম্পানি যারা কিনেছেন, তারা যে কোনো সময় ক্ষতির মুখে পরবেন।”

ক্রমাগত লোকসানে থাকা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারের দাম গত ৫২ সপ্তাহে ৩ টাকা ৯০ পয়সায় নেমেছিল। অথচ ১৩ নভেম্বর থেকে ৯ দিনে প্রায় ৫৯ শতাংশ বেড়ে শেয়ারটির দাম ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৮ টাকা ১০ পয়সায় উঠেছে।
রোববারও লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গতকালের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ (৭০ পয়সা) বেড়েছে।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল শেষে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি টাকা, যা গত বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ কোটি টাকা।
সর্বশেষ পাঁচ বছরে ২৪৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটি লোকসান করেছে ২৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪০ পয়সা।

ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, “এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম কোনোভাবেই এত হতে পারে না।”
ডিএসই শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে চাইলে গত বৃহস্পতিবার আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক জানিয়েছে, দাম বাড়ার পেছনে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই।
বড় একটি শিল্প গ্রুপ ব্যাংকটির শেয়ার বাজার থেকে কিনে নিচ্ছে বলে বাজারে জোর গুজব আছে; গত কয়েকদিনে এই ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেনও ব্যাপক বেড়েছে।
ডিএসইতে গত ১৩ নভেম্বর আইসিবি ব্যাংকের একলাখ শেয়ার লেনদেন হয়। গত বৃহস্পতিবার ৮৬ লেনদেন হয় ৮৬ লাখ শেয়ার, রোববার ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
সাধারণত ভাল কোম্পানি শেয়ারের দর কমলে কেনার চাপ বাড়ে। কিন্তু এই কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটছে। অবশ্য বেশ কিছু দিন ধরেই পুঁজিবাজারে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জেড ক্যাটাগরির প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৭৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। পরের দেড় বছরে লোকসান করেছে ১৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ নয় মাসেও লোকসান দেখিয়েছে ৩ কোটি।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো- ঋণ পরিশোধের জন্য কোম্পানিটি চট্টগ্রামের কারখানা বিক্রি করেছে, উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য ঢাকার ধামরাইয়ে জমি কিনেছে কোম্পানিটি।
অথচ এই কোম্পানির শেয়ারের দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এক মাসে কোম্পানির দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ রোববার ২৪ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়।
বাড়তি দামেও রোববার ক্রেতার চাপে মধ্যাহ্নের পর বিক্রেতাশূন্য হয়ে যায় বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডসের শেয়ার।
জুলাইয়ে বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডসের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া ও মুনাফায় থাকা কোম্পানি হলেও পিই রেশিওর (প্রাইস-আর্নিং রেশিও) হিসাবে এ ক্যাটাগরির ইস্টার্ন কেবলসের শেয়ার কেনা বিনিয়োগের জন্য বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।
এই শেয়ারের বর্তমান পিই রেশিও হচ্ছে ২০৩০, যার অর্থ হলো- কোম্পানির একটাকা মুনাফার জন্য একজন বিনিয়োগকারী ২০৩০ টাকা বিনিয়োগ করতে সম্মত।
প্রকৌশল খাতের পিই রেশিও ২২ দশমিক ১১ বিবেচনা করলে বর্তমান অবস্থায় ইস্টার্ন কেবলসের শেয়ার কিনতে ইচ্ছুকদের বিবেচনা শক্তি লোপ পেয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না।
ইস্টার্ন ক্যাবলসের শেয়ারের দর ১৩ নভেম্বর থেকে টানা ১০৩ টাকা ১০ পয়সা বা ১৩৬ শতাংশ বেড়ে রোববার ২৪৩ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন শেষ হয়েছে।
এই পরিমাণ দর বাড়ার পও রোববার ক্রেতাদের চাপে বিক্রেতাশূন্য হয়ে যায় কোম্পানিটির শেয়ার।
রোববার দুপুরে ইস্টার্ন কেবলসের ১১ হাজার ৬৬৩টি শেয়ার ২৪৩ টাকা ৬০ পয়সায় কেনার আবেদন থাকলেও বিক্রেতা ছিল না। দিন শেষে একলাখ ৮৭ হাজার ৬৪৩টি শেয়ার লেনদেন হয়।
সরকারি এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে বিআরবি কেবলস জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে বলে বাজারে আলোচনা আছে।
বিআরবি কেবলসের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সম্প্রতি গণমাধ্যমে, তারা ইস্টার্ন কেবলসের প্রায় ৪৪ লাখ শেয়ার কিনেছেন।
-
মার্জিন ঋণে ১২% সুদ: ৫ মাস সময় দিল বিএসইসি
-
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের লভ্যাংশ না দেওয়া তদন্তে বিএসইসির কমিটি
-
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ টানতে দুবাইতে মেলা করবে বিএসইসি
-
ডিএসইতে সূচক বেড়েছে
-
বার্জারের মুনাফা তৃতীয় প্রান্তিকে বেড়েছে ৩৫%
-
বাজারে তারল্য বাড়াতে শতকোটি ডলারের বন্ড
-
বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৭০ লাখ ডলার চায় বিএসইসি
-
মার্জিন ঋণে ১২% সুদ বাস্তবায়নে অনড় বিএসইসি
সর্বাধিক পঠিত
- এইচএসসির ফল প্রকাশ, সনদ বিতরণের ক্ষমতা পেল সব শিক্ষাবোর্ড
- কোভিড-১৯: নার্স রুনুর জয়বাংলা ধ্বনিতে বাংলাদেশে টিকাযজ্ঞ শুরু
- চট্টগ্রামের মেয়র পদে বিজয়ী রেজাউল
- প্রথম ফোনালাপেই পুতিনকে ‘সতর্ক’ করলেন বাইডেন
- অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলে চমক তানভির, টেস্টে স্টেকেটি
- কোভিড-১৯: দেশে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থের চেয়ে আক্রান্ত বেশি
- গোল উৎসব করে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি
- চারে মিরাজ, দশে ফিরলেন মুস্তাফিজ
- রেকর্ড গড়া স্টার্লিংকে ছাপিয়ে নায়ক রশিদ
- ‘মেসি না খেললেই বার্সা জেতে’