গ্রামীণফোন এখন ৮ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি

সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন বেড়ে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির সর্বোচ্চ বাজার মূলধন।

রিয়াজুল বাশারও ফারহান ফেরদৌসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 03:32 AM
Updated : 14 Nov 2017, 03:36 AM

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের দর চার দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৯১ টাকা ৫০ পয়সা। গ্রামীণফোনের শেয়ারের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ দর।

এর ফলে একদিনেই এ কোম্পানি বাজার মূলধন দুই হাজার ৭১৪ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

সোমবার ঢাকার শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ হিসেবে মোট বাজার মূলধনের ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল গ্রামীণফোনের দখলে।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইয়াওয়ার সায়ীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে কখনোই এতো বড় বাজার মূলধনের কোম্পানি দেশের বাজারে লেনদেনে ছিল না।”

 

বাজার মূলধনের দিক থেকে ডিএসইতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস; প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার মূলধন রয়েছে তাদের।

চলতি বছরের প্রথম দিন গ্রামীণফোনের শেয়ারের লেনদেন শেষ হয়েছিল ২৮৩ টাকায়। এ বছর তাদের বাজার মূলধন বেড়েছে ২৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বা ৭৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২০১৭ সালে ১১ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ।

বছরের শুরুতে যেসব বিনিয়োগকারী গ্রামীণফোনে বিনিয়োগ করেছেন; লভ্যাংশসহ এক বছরে তাদের মুনাফা এসেছে ৮০ শতাংশের বেশি।

মোবাইল ফোন সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের শেয়ার দর দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে গত জুলাই মাসে। ওই সময় এ শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়তে শুরু করে।

জুলাইয়ের ৯ তারিখে গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৩৭ টাকা ৪০ পয়সা। তিন মাসের ব্যবধানে ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়ে সোমবার লেনদেন শেষ হয় ৪৯১ টাকা ৫০ পয়সায়। এ সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। 

উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে থাকা ৯০ শতাংশ শেয়ারের বাইরে গ্রামীণফোনের লেনদেনযোগ্য শেয়ার রয়েছে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দুই দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার ছিল। অগাস্টে তা বেড়ে হয় তিন দশমিক ৫৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে হয় তিন দশমিক ৫১ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার রয়েছে মাত্র দুই শতাংশের কিছু বেশি।

ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, “বাংলাদেশের বাজারে এটা বড় মূলধনের কোম্পানি হলেও বাজারে এর শেয়ারের সরবরাহ অনেক- কথাটা পুরো সত্য নয়। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার কম।

 

“আবার লেনদেনযোগ্য শেয়ার কম বলে এত কম না যে, কেউ চাইলেই মূল্য নিয়ে কারসাজি করতে পারবে।”

১৩৫০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১৩৫ কোটি। উদ্যাক্তাদের মধ্যে নরওয়ের টেলিনরের হাতে রয়েছে ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকমের কাছে রয়েছে ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ।

কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও গত চারদিন ধরে গ্রামীণফোনের শেয়ারে অতিরিক্ত ক্রয়ের চাপ রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণী একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, সোমবার এ কোম্পানির আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স) ৮২ অতিক্রম করেছে। আর অনীরিক্ষিত পিই রেশিও পৌঁছেছে ২৩ দশমিক ২১ এ।

কেনো কোম্পানির আরএসআই ৭০ পার হলেই ওই শেয়ার কেনার ‘অত্যাধিক চাপ’ রয়েছে বলে ধরা হয় এবং তখন ওই শেয়ার কেনাও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করা হয়।

ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, “এখন যারা বিনিয়োগ করবেন তাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”

গ্রামীণফোনের শেয়ার মূল্যে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মুনাফাও বাড়ছে। ২০১৫ সালে যেখানে তাদের মুনাফা ছিল ১৯৭০ কোটি টাকা, তার ২০১৬ সালে বেড়ে ২২৫২ কোটি টাকা হয়। আর চলতি বছরের নয় মাসে (তৃতীয় প্রান্তিক শেষে) মুনাফা হয়েছে ২১৪৪ কোটি টাকা।

ধারাবাহিক মুনাফায় প্রবৃদ্ধির কারণে এ শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট একজন।

৬ কোটি ৩১ লাখ গ্রহক নিয়ে দেশের মোবাইল ফোন সেবার বাজারের মোটামুটি অর্ধেক দখল করে আছে গ্রামীণফোন।

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় ১০ টাকার শেয়ারে ৬০ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ৪৮৬ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেয় এ কোম্পানি।