সালমান-বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি মামলা বাতিল

বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির আলোচিত দুই মামলা বাতিল করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 11:55 AM
Updated : 10 March 2017, 04:49 PM

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. সেলিম ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ এই রায় দেয়।

উন্মুক্ত আদালতে দেওয়া সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি দুই বছর পর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

রায় প্রকাশের খবরটি গণমাধ্যমে আসার পর মামলার বাদী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।

দুই মামলায় আসামি ছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর হোল্ডিংস, বেক্সিমকো ফার্মার চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়াত ডি এইচ খান।

সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

১৯৯৬ সালের কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ১৫টি প্রতিষ্ঠান ও ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর এই দুটি মামলা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে চলে যায়। 

এর আগেই মামলা দুটি বাতিলে উচ্চ আদালতে আসে মামলার বিবাদী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা। কেন মামলা দুটি বাতিল করা হবে না, মর্মে রুল দেয় আদালত। পাশাপাশি স্থগিতাদেশও দেয়া হয়।

দীর্ঘদিন রুলটি শুনানির অপেক্ষায় থেমে থাকার পর ২০১৫ সালের মার্চে চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত মামলা দুটি বাতিল করে দেয়।

এ বিষয়ে বুধবার দুপুরে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো এতদিন ধরে বলে আসছিলাম, মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি (মেরিট) ছিল না। হাই কোর্টের রায়ে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। আমরা যেটা বলে আসছিলাম; হাই কোর্ট সেটাই বলেছে।”

রায়ে বলা হয়, “দুই মামলার কোনোটিতে আসামি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো প্রাথমিক উপাদান পাওয়া যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কেবল অস্পষ্টই নয়, কোনোভাবে সংজ্ঞায়িতও করা হয়নি। 

“ফৌজদারি বিচারে অভিযোগ অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হতে হবে। কিন্তু উভয় অভিযোগ পড়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, অভিযোগ কেবল অস্পষ্টই নয়, বরং আইন সম্পর্কে ভুল ধারণা এবং বাস্তবিক ঘটনার ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।”

রায়ে আরও বলা হয়, “১৯৬৯ সালের অর্ডিন্যান্সের ১৭ ধারা লঙ্ঘিত হয়-এমন একটি অপরাধ, ঘটনার বিবরণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে কমিটি ব্যর্থ হয়েছে। নাম পরিচয় উল্লেখ ছাড়া ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, প্রবণতা ও প্রভাব, গণমাধ্যমের জল্পনাভিত্তিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি করা হয়েছে।”

১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের জুনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দুই মাসের মাথায় প্রথম রায়ে চিক টেক্সটাইলের দুই কর্মকর্তার সাজা হয়।

কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়ানোর দায়ে ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মাকসুদুর রসুল ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। সেই সঙ্গে ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

মামলাগুলোর বাদী বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা দুটির বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কমিশনের নিযুক্ত আইনজীবীকে এরই মধ্যে বলা হয়েছে। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বিডিনিউজ টোয়ৈন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বহুদিন পূর্বেই এই রায় হয়েছিল। আদালত রায় ঘোষণার পরপরই আমরা রায়ের অনুলিপির জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এতদিন অনুলিপি পাই নাই।

“কয়েকদিন আগে আমরা সেই কপি পেয়েছি। আমরা সেটি পর্যাোলোচনা করছি। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ শিগগিরই জানতে পারবেন।”

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আপিল দায়ের করতে বলেছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেটি আর আমি না বলি। এটা তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি এতটুকু বলবো, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ আপনারা জানতে পারবেন।”

’৯৬-এর শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অর্থনীতির অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর হোল্ডিংসের বিরুদ্ধে বাজারে কারসাজি করে দর তোলা ও নামানোর অভিযোগ তোলা হয়।

তাতে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর হোল্ডিংস সম্পর্কে বলা হয়েছিল, কোম্পানি দুটির শেয়ার নিয়ে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে কিছু ব্রোকারস, কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ারধারী এবং কিছু কর্মকর্তা জড়িত।