‘ভাগ্যের জোরে পিএসজি-চেলসি-সিটিকে হারিয়েছে রিয়াল’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২০২১-২২ মৌসুমের শিরোপা জয়ের পথে কঠিন সব বাধার মুখে পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে অবিশ্বাস্য সব প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে একে একে তারা হারিয়ে দেয় পিএসজি, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি এবং ফাইনালে লিভারপুলকে। সিটির প্রধান নির্বাহী ফেররান সোরিয়ানো রিয়ালের এই পথচলায় বড় ভূমিকা দেখছেন ভাগ্যের। তার মতে, সৌভাগ্যের সহায়তা না পেলে এর কিছুই করতে পারত না কার্লো আনচেলত্তির দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2022, 11:39 AM
Updated : 27 June 2022, 11:54 AM

গত মৌসুম শুরুর আগে দলগুলোর শক্তির বিবেচনায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সম্ভাব্য ফেভারিটদের তালিকায় ছিল না রিয়ালের নাম। করিম বেনজেমা ছাড়া আক্রমণে ছিল না ধারাল কোনো নাম। ভিনিসিউস জুনিয়র এর আগ পর্যন্ত ছিলেন নিজের জাত চেনানোর লড়াইয়ে। গ্যারেথ বেল, এদেন আজাররা তো চোটের কারণে থেকেও নেই। মিডফিল্ড অভিজ্ঞ হলেও তাদের খেলায় দেখা যাচ্ছিল বয়সের ছাপ। আর রক্ষণে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিল সের্হিও রামোস ও রাফায়েল ভারানের চলে যাওয়া।

ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দলটির কোচের দায়িত্বে ফিরেছিলেন কার্লো আনচেলত্তি, যিনি সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন ৮ বছর আগে রিয়ালের হয়েই। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতার সফলতম দল হলেও শিরোপার দৌড়ে তাদের খুব একটা এগিয়ে রাখা ছিল কঠিন।

কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দেয় রিয়াল। বেনজেমা হয়ে ওঠেন বিধ্বংসী, ধারাবাহিকতার আরেক নাম। পুরনো সব ব্যর্থতা যেন ঝাড়া দিয়ে ওঠেন ভিনিসিউস। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ম্যাচের পর ম্যাচ চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স করেন লুকা মদ্রিচ। তার সঙ্গে টনি ক্রুস, কাসেমিরো, ফেদে ভালভেরদে, এদুয়োর্দো কামাভিঙ্গারা জ্বলে ওঠেন দলের প্রয়োজনে। আর গোলপোস্টে অতন্দ্রী প্রহরী থিবো কোর্তোয়া তো ছিলেনই।

মৌসুম জুড়ে দলগত ফুটবলের দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় লা লিগা জয়ের পাশাপাশি রেকর্ড ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল। 

ইউরোপ সেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করার পথে শেষ ষোলোয় তাদের প্রতিপক্ষ ছিল মেসি-নেইমার-এমবাপেদের পিএসজি। দুই লেগের লড়াইয়ে এক পর্যায়ে ২-০ এগিয়ে ছিল প্যারিসের ক্লাবটি। সেখান থেকে ১৭ মিনিটের হ্যাটট্রিকে তাদের বিদায় করে দেন বেনজেমা।

শেষ আটে রিয়ালের সামনে ছিল আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন চেলসি। প্রথম লেগে বেনজেমার আরেকটি হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলে জিতেছিল আনচেলত্তির দল। কিন্তু ফিরতি লেগে এক পর্যায়ে লড়াইয়ে তারা পিছিয়ে ছিল ৪-৩ গোলে। শেষ দিকে রদ্রিগো সমতা টানার পর পার্থক্য গড়ে দেন বেনজেমা। 

রিয়ালের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ছিল সেমি-ফাইনালে। তাদের প্রতিপক্ষ সিটিকে সবদিক থেকে ধরা হচ্ছিল টুর্নামেন্টের সেরা একটি দল হিসেবে। উভয় লেগেই দারুণ খেলে লড়াইয়ে তারা এক পর্যায়ে এগিয়ে ছিল ৫-৩ গোলে। 

সেখান থেকে দ্বিতীয় লেগের একেবারে শেষ সময়ে জোড়া গোলে আবার রিয়ালের ত্রাতা হন রদ্রিগো। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে, সেখানে বেনজেমার গোলে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। 

শিরোপার লড়াইয়ে লিভারপুলকে হারাতেও ভীষণ বেগ পেতে হয় রিয়ালকে। প্রতিপক্ষের টানা আক্রমণে প্রায় পুরোটা সময় কোণঠাসা হয়ে থাকলেও আরেকবার তারা প্রমাণ দেয় নিজেদের হার না মানা, যেকোনো মূল্যে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার দৃঢ় মানসিকতার।

পুরো ম্যাচে সেভাবে উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি না করতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভিনিসিউসের গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।

ম্যানচেস্টার সিটির প্রধান নির্বাহী ফেররান সোরিয়ানো (বাঁয়ে)।

ওই ফাইনালের পর প্রায় এক মাস কেটে গেলেও এখনও আলোচনা চলছে রিয়ালের সাফল্যগাথার রহস্য নিয়ে। সম্প্রতি ড. ফুটবল পডকাস্টে এই প্রসঙ্গে সোরিয়ানো বলেন, বারবার ভাগ্য পক্ষে না থাকলে শীর্ষ মানের দলগুলোকে হারিয়ে রিয়ালের পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব হতো না। 

“চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিটা আমরা খুব করে জিততে চাই। তবে আমরা এটাও জানি যে এখানে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা লাগে। মানুষ কথা বলছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় (চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবশেষ ৭ বছরে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন) মাদ্রিদের সাফল্য নিয়ে। তবে আমি মনে করি (গত মৌসুমে) পিএসজি, চেলসি, আমাদের বা লিভারপুলের বিপক্ষে রিয়ালের হার প্রাপ্য ছিল।”

“কিন্তু লোকেরা এটা ভুলে যায় যে, আশি ও নব্বই দশকে তাদের একটি দুর্দান্ত দল ছিল, ইতিহাসের সেরা দলগুলোর একটি। তাদের দলে (এমিলিও) বুত্রাগেনো ছিলেন এবং সঙ্গে ‘দা ফিফথ’ (রিয়ালের সেই সময়ের পাঁচ স্প্যানিশ তারকাকে ডাকা হতো এই নামে; বাকি চার জন হলেন মানোলো সানচিস, রাফায়েল মার্তিন ভাসকেস, মিচেল ও মিগেল পারদেসা), তারপরও রিয়াল তখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রতি বছর (এসি) মিলান তাদের বিদায় করে দিত। সেই দিক থেকে দেখলে তারা এখন কিছুটা ভাগ্যবান, তবে বছরের পর বছর ধরে তারা খুব দুর্ভাগা ছিল। আমরা ধৈর্য ধরে আছি, শিরোপাটা জয়ের প্রশ্নে আমরা আচ্ছন্ন নই, আমরা সঠিক সময়ে এটা জিতব।”

সোরিয়ানো মনে করেন, অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বাদ পেতে সিটিকে প্রক্রিয়া ঠিক রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তার বিশ্বাস, দেরিতে হলেও তাদের হাতে সাফল্য ধরা দেবেই।

“আপনাকে স্বল্প এবং মাঝারি মেয়াদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। ভাগ্য স্বল্প মেয়াদে পক্ষে থাকে। আমি বলতে পারি, মাদ্রিদে ৯০তম মিনিটে দুই গোল হজম করে আমরা যখন হেরে গেলাম, তখন সেটা ছিল দুর্ভাগ্য। কিন্তু সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের দুর্ভাগ্য।”

“বিষয়টা ভাগ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি কঠোর পরিশ্রম এবং জ্ঞানটাকে কাজে লাগানোর বিষয়। দুর্ভাগ্য যখন আসে তখন তা মেনে নেওয়ার জন্য আপনার ধৈর্য এবং মানসিক দৃঢ়তা দেখাতে হবে। কারণ, কঠোর পরিশ্রম করতে থাকলে সৌভাগ্য আসবেই।”