‘দুটি দেশের প্রেসিডেন্ট ফোন করে এমবাপেকে চাপ দিয়েছে’

কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল বলে জানালেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস। তবে হুট করেই ফরাসি এই তারকার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখতে পান তিনি। রিয়াল সভাপতির দাবি, ফ্রান্স আর কাতারের রাষ্ট্র প্রধান ও প্যারিসের মেয়র ফোন করে চাপ দেওয়ার পর ভাবনায় বদল আসে এমবাপের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2022, 07:16 AM
Updated : 16 June 2022, 08:31 AM

পিএসজির সঙ্গে এমবাপের নতুন চুক্তি ছিল এই বছরের ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলির একটি। ছেলেবেলার স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ আসবেন এমবাপে, অনেকেই এটি নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু নাটকীয় কয়েকটি দিনের পর বদলে যায় চিত্র। পিএসজির সঙ্গে তিন মৌসুমের জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ান তিনি।

রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের অনেকের কাছেই তখন এমবাপের পরিচয় হয়ে যায় ‘বিশ্বাসঘাতক।’ তবে এল চিরিঙ্গিতো টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত আলোচনায় পেরেস তুলে ধরলেন, পিএসজিতে থেকে যেতে উচ্চ পর্যায় থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল এমবাপেকে।

“এমবাপের ব্যাপারটি সহজ, সে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা সে সবাইকে বলেছিল। সে বলেছে, এটা তার স্বপ্ন। গত অগাস্টে ওরা তাকে ছাড়েনি, আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি পিএসজি।”

“আমরা অপেক্ষা করেছি (মৌসুম শেষ হওয়ার)। এমবাপে সবসময় বলেছে, তার স্বপ্ন রিয়ালে আসা। কিন্তু (সম্ভাব্য সময়ের) ১৫ দিন আগে সব বদলে যায়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে তার মধ্যে কিছু বাধ্যবাধকতা চলে আসে। তার ভেতরে এই পরিবর্তন আমরা খেয়াল করেছিলাম। হুট করেই তখন এমন এক এমবাপকে দেখলাম, যে আর আগের মতো নেই। যে এমবাপেকে আমি আনতে চেয়েছিলাম, এই এমবাপে সেরকম নয়। মনে হচ্ছিল, তার স্বপ্নই বদলে গেছে।”

সেই চাপ কতটা তীব্র ছিল, সেটির নমুনাও তুলে ধরলেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি।

“তাকে ফোন করেছিল (ইমানুয়েল) ম্যাক্রোঁ, প্রচণ্ড চাপ ছিল। রাজনৈতিক চাপ, দুটি দেশের ব্যাপার… ২৩ বছর বয়সী একজনের জন্য অনেক চাপ এসব। আইনগত কারণে আমরা প্রাক-চুক্তি করতে পারিনি। তবে যাই হোক, বদলে যাওয়া এমবাপেকে আমি চিনি না। বলা ভালো, এই এমবাপে আমার এমবাপে নয়।”

“দুটি দেশের প্রেসিডেন্ট ফোন করা মানে সেটা স্বাভাভিক ব্যাপার নয়, এমনকি প্যারিসের মেয়রও ফোন করেছিল… এরপর কাতার থেকে এত লোভনীয় প্রস্তাব… সে চাপে পড়েছে এবং সহজ পথটা বেছে নিয়েছে। আমার মাথায় আসে না এটা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কীভাবে তাকে ফোন করেন! স্পেনের রাজা কি এভাবে কোনো ফুটবলারকে বলতে পারেন? ফ্রান্স ও কাতারের মতো দুটি দেশের প্রেসিডেন্ট ফোন করে তাকে চাপ দিয়েছেন।”

এমবাপের মা ছেলেকে রিয়ালে দেখতে চেয়েছিলেন বলেও দাবি করলেন পেরেস।

“এমবাপের মা চাচ্ছিলেন ছেলে রিয়ালে আসুক, কারণ মা তো ছেলের ছোটবেলার স্বপ্নের কথা জানেন। ওর মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি আমার। তবে শুনেছি তিনি বিব্রত।”

চাপের কারণে বদলে যাওয়া মানসিকতার সেই এমবাপের প্রতি আর আগ্রহ দেখাননি পেরেস। একজন ফুটবলারের জন্য ক্লাবের মূল্যবোধের সঙ্গে কখনও আপোস করা হবে না বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন তিনি।

“এমবাপের প্রতি আমার অনুরাগ এখনও আছে। তবে ক্লাবের চেয়ে বড় কেউ নয়। আমাদের এই ক্লাবে কিছু মূল্যবোধ আছে, যা আমরা কখনোই বদলাতে চাই না। সে আমাকে একটি ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল। তবে আমি তো আগে থেকেই খেয়াল করছিলাম যে সে বদলে গেছে।”

“মাদ্রিদিস্তারা হয়তো হতাশ, তবে কোনো খেলোয়াড়ই ক্লাবের চেয়ে বড় হতে পারে না। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে কোনো ফুটবলারই ক্লাবের চেয়ে বড় নয়। আমরা কারও জন্যই ব্যতিক্রমী কিছু করে ক্লাব ব্যবস্থাপনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।”

এমবাপের জন্য রিয়াল মাদ্রিদের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়নি বলেও জানিয়ে রাখলেন ক্লাব সভাপতি।

“রিয়াল মাদ্রিদকে যে বোঝে এবং ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্ব যারা অনুধাবন করে, এমন কোনো ফুটবলারের জন্য এই ক্লাবের দুয়ার কখনও বন্ধ নয়। আমি এমবাপেকে শুভ কামনা জানাই। সে দুর্দান্ত এক ফুটবলার ও অনেক মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। তবে ক্লাবের চেয়ে বড় কেউ নয়।”