বিশ্বকাপের আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে পেরু আর অস্ট্রেলিয়ার লড়াই যখন টাইব্রেকারে যাওয়ার অপেক্ষায়, ঠিক সেই সময়ই অধিনায়ক ও গোলরক্ষক ম্যাটি রায়ানকে তুলে রেডমেইনকে মাঠে নামান অস্ট্রেলিয়ার কোচ। পেনাল্টি ঠেকানোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে আগে থেকেই খ্যাতি তার। নিজের সেই পরিচিত আরও সমৃদ্ধ করে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে দেন রেডমেইন।
টাইব্রেকারে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শটে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মার্টিন বয়েল। কিন্তু রেডমেইনের বীরত্বে ৫-৪ গোলে টাইব্রেকার জিতে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। একটি শট তার হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়, শেষটি তিনি সরাসরি বাঁচিয়ে দলকে উল্লাসে ভাসান।
ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ান কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড সরাসরিই বলেন, মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতেই তিনি শেষ সময়ে রেডমেইনকে মাঠে নামান।
“পেনাল্টি ঠেকানোয় সে বরাবরই দারুণ। আমি তাকে নামিয়েছি যাতে মানসিকভাবে প্রতিপক্ষের ওপর তার প্রভাব ফেলে। ওরা হয়তো নিজেদেরই প্রশ্ন করছিল যে, ‘হুট করে এই গোলরক্ষক কেন নামানো হলো? নিশ্চয়ই সে খুব ভালো!’ ওরা এমন কিছু ভাবুক, এটাই চাচ্ছিলাম আমি।”
“হয়তো এ কারণেই তারা পোস্টে মেরেছে। পেরুর হয়ে পেনাল্টি যারা নেবেন, তাদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর স্রেফ ১ শতাংশ প্রচেষ্টা বলতে পারে এটি। ব্যাপারটায় ঝুঁকি ছিল, তবে কাজে লেগে গেছে।”
আগে একবার টানা তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেওয়ার কীর্তিও আছে রেডমেইনের। ম্যাচ শেষে ৩৩ বছর বয়সী গোলরক্ষক জানালেন, প্লে-অফ ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়ালে রায়ানের বদলে তাকে নামানোর পরিকল্পনা মাসখানেক আগেই করে রেখেছিলেন কোচ।
তখন থেকেই তিনি কল্পনায় ছবি এঁকেছিলেন, কীভাবে টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে ঘায়েল করবেন। এজন্য যে কোনো কিছু করতেই আপত্তি ছিল না তার। তবে দলকে জেতালেও নিজেকে নায়ক তিনি ভাবছেন না।
“স্টুপিডের মতো কিছু করে বা নিজেকে হাস্যকর করে তুলে যদি আমি ১ বা ২ শতাংশ বাড়তি সুবিধাও পাই, আমার তা করতে আপত্তি নেই।”
“তবে আমার অবদান ছোট্ট। নিজেকে নায়ক বা তেমন কিছু মনে করছি না। দারুণ এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ছেলেরা ১২০ মিনিট ধরে অসাধারণ লড়াই করেছে।”
রেডমেইন জানালেন, তার কাণ্ড দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন রেফারিও।
“আমার কৌশলে তিনি নিজেও কিছুটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলেন। প্রতিপক্ষকে প্ররোচিত করার জন্য আমাকে হলুদ কার্ড দেখাবেন বলে বার দুয়েক হুমকি দিয়েছেন তিনি। আমি বলেছি, ‘ওরকম কিছু আমি করছি না।”
“শেষ দুটি পেনাল্টির সময় তিনি আমাকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘এই শট বাঁচালে তোমরা জিতে যাবে, তবে আগেই পাগলের মতো দৌড়ানো শুরু করে দিও না। কারণ তুমি যে পরিমাণে ছুটোছুটি করছো, আগে ভিএআর দেখে নিতে হবে যে তোমার পজিশন ঠিক ছিল কিনা।”
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার পর কাতার বিশ্বকাপের স্রেফ আর একটি দল নিশ্চিত হওয়া বাকি। মঙ্গলবার কোস্টারিকা আর নিউ জিল্যান্ডের লড়াই থেকে পাওয়া যাবে সেই দলকে।