‘এগিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে বলেছিলাম, সব সেভ করতে হবে’

লিভারপুল ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা- ফাইনালে এই দুইয়ের মাঝে অভেদ্য এক দেয়াল হয়ে ছিলেন থিবো কোর্তোয়া। নিজ দলের সব ভার যেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষের একের পর এক দারুণ সব প্রচেষ্টা চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় রুখে দেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক। অমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের রহস্য কী? বেলজিয়ান তারকা বললেন, প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরা হওয়ার বাসনা থেকেই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2022, 01:45 PM
Updated : 30 May 2022, 01:55 PM

প্যারিসের ফাইনালে গত রোববার ভিনিসিউস জুনিয়রের একমাত্র গোলে লিভারপুলকে হারিয়ে রেকর্ড ১৪তম বারের মতো শিরোপা জিতে নেয় রিয়াল।

ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি ভিনিসিউস করলেও পাদপ্রদীপের আলোয় ঠিকই রয়ে গেছেন কোর্তোয়া। ম্যাচ জুড়ে অসাধারণ সব সেভ করে রিয়ালের জয়ের মূল নায়ক যে তিনিই। সেদিন মোট ৯টি সেভ করেন তিনি। ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি সেভ করার রেকর্ড এটি।

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এডউইন ফন ডার সারের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ হলেন কোনো গোলরক্ষক।

ফাইনালে গোল হজমের আগে ও পরে সালাহ-মানেরা বার বার বিপদ ছড়িয়েছেন রিয়ালের রক্ষনে। তবে গোলপোস্টের নিচে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে একে একে তাদের সব প্রচেষ্টা রুখে দেন কোর্তোয়া। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন গোল না খাওয়ার পণ করে মাঠে নেমেছিলেন।

উয়েফার ওয়েবসাইটে রোববার দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোর্তোয়ার কণ্ঠেও ফুটে উঠল তাই। জানালেন, দল এগিয়ে যাওয়ার পর কোনোভাবেই গোল হজম না করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি। 

“লড়াইটা খুব কঠিন মনে হচ্ছিল। আমি সেভ করছিলাম, কিন্তু আক্রমণে আমরা সেভাবে প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নিতে পারছিলাম না। সাধারণত আমরা আরও বেশি আক্রমণ শানাই। এরপর আমরা যখন ১-০ গোলে এগিয়ে গেলাম, তখন আমি নিজেকে বলছিলাম যে, ‘এখন তোমাকে সবকিছু সেভ করতে হবে।’” 

“দারুণ কিছু সেভ করে দলকে জেতাতে সাহায্য করা অনেক তৃপ্তির। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য মৌসুমটা দারুণ ছিল এবং আমি মনে আমার আরও উন্নতি হয়েছে।”

এর আগে একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলেছিলেন কোর্তোয়া। তবে আতলেতিকো মাদ্রিদের জার্সিতে ২০১৪ সালে লিসবনের সেই ফাইনালে তাকে হারতে হয়েছিল রিয়ালের বিপক্ষেই। এবার রিয়ালের হয়ে প্রথমবার ইউরোপ সেরার ফাইনালে খেলতে নামার আগের দিন তিনি বলেছিলেন, প্যারিসে শিরোপা জিতে ভুলতে চান আট বছর আগের দুঃখ। লক্ষ্য পূরণ করতে পেরে আনন্দে ভাসছেন সাবেক চেলসি তারকা।

“এটা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। একটা স্বপ্ন সত্যি হলো। এত বছর আমি অনেক পরিশ্রম করেছি এবং এই ট্রফিটি জেতাই বাকি ছিল।”

“আমি এর আগে একবার ফাইনালে খেলেছিলাম এবং সেখানে হেরে গিয়েছিলাম। তাই আরেকটি ফাইনালে খেলতে এবং জেতার জন্য আমি মরিয়া ছিলাম। আর আজকে (শনিবার) এটা যেভাবে হলো, তা বর্ণনা করার মতো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।”

ফাইনালের আগে কোর্তোয়া বলেছিলেন, ফাইনালে খেললেই জেতে রিয়াল। তার এই মন্তব্য নিয়ে লিভারপুলের সমর্থকরা চটেছিলেন বেশ। পারফরম্যান্স দিয়ে এর জবাব দিতে পেরে খুশি তিনি।

“গতকাল (শনিবার) আমি একটি প্রশ্নের জবাবে উদাহারণ দিতে গিয়ে এটা বলেছিলাম। এমনকি আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময়ও আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল যে, রিয়াল মাদ্রিদ যখনই ফাইনাল খেলে, তারাই জেতে।”

“এটা বলার পর আমাকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে সত্যি বলতে, মাঠেই এর জবাব দিতে পেরে আমি সন্তুষ্ট।”

লা লিগা বেশ আগেভাগেই জিতে ফেলায় ফাইনালের প্রস্তুতিতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল রিয়াল। কোর্তোয়া মনে করেন, এই বিষয়টির পাশাপাশি শিরোপা জেতার তীব্র আকাঙ্ক্ষাও তাদের সাহায্য করেছে।

“এক মাস আগে লা লিগা জেতায় আমাদের প্রস্তুতিটা খুব ভালো হয়েছিল। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। আমাদের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি ছিল এবং জেতার তীব্র বাসনা ছিল।”

“এই ধরনের ম্যাচে জেতার আকাঙ্ক্ষাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। বিষয়টা এমন, যেন নিজেকে বলা, ‘আজকের দিনটা আমার। আজকে আমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে যাচ্ছি এবং আমি আরেকটি ফাইনালে হারব না।’ এটা সত্যি হতে দেখাটা অবিশ্বাস্য।”

রিয়ালের এই দলে বেশ কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাদের এবারের আগেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার অভিজ্ঞতা ছিল চার বার করে। এই তালিকায় থাকা ক্রুস-মদ্রিচ-বেনজেমার সঙ্গে ছিলেন কখনই এর স্বাদ না পাওয়া কোর্তোয়া-ভিনিসিউসরা। ৩০ বছর বয়সী এই ফুটবলার মনে করেন, দলের সবার চাওয়া এক বিন্দুতে মিলে যাওয়াতে সাফল্য ধরা দিয়েছে।

“নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য এটা বাড়তি সুবিধা। দলে আমি সহ এমন খেলোয়াড় ছিল যারা এটি জিততে যাচ্ছিল প্রথমবারের মতো। উদাহরণ হিসেবে ভিনিসিউস জুনিয়রের কথা বলতে পারি, তার চেয়ে আমার অভিজ্ঞতা বেশি। কিন্তু প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য তার মতো আমার বাসনাও একই ছিল।”

“এরপর বলতে হবে দলের সেসব খেলোয়াড়দের কথা, যারা এটি চার বার জিতেছে এবং পাঁচবার জিতে তাদের ফুটবল ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করতে চাচ্ছিল।”

ম্যাচের অধিকাংশ সময়ে প্রাধান্য বিস্তার করা লিভারপুল শেষ পর্যন্ত মরিয়া চেষ্টা করেছে সমতা টানার। সেই সময়ে চাপের মুখে ভেঙ্গে না পড়ে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে গেছে রিয়ালের খেলোয়াড়রা। কোর্তোয়ার মতে, এটি সম্ভব হয়েছিল দল হিসেবে তাদের একতাবদ্ধতার কারণে।

“আমি মনে করি দল হিসেবে আমরা খুবই একতাবদ্ধ। আমার মনে হয় আমাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা দারুণ, আমরা সবটুকু দিয়ে একে অন্যকে সাহায্য করি। আজকে আমরা যখন ডিফেন্ড করছিলাম, তখন এটা দেখা গেছে।”

“আমরা মাঠে নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিয়েছিলাম, রিয়াল মাদ্রিদের সব ভালো খেলোয়াড়দেরই যা করা উচিত। শেষ পর্যন্ত আমরা সামর্থ্যের পুরোটা নিঙরে দিয়েছিলাম।”