নাটক, রোমাঞ্চ আর অবিশ্বাস্য পথচলায় রিয়ালের ‘১৪’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে যেন নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতাটির নামকরণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হওয়ার পর মাদ্রিদের দলটি ফাইনালে যাওয়া মানেই তো শিরোপা নিশ্চিত! সেটি তারা করে দেখাল আরও একবার। গত ৯ বছরের মধ্যে পাঁচবার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই ম্যাচ শেষে তারা করল উৎসব।

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2022, 04:06 PM
Updated : 29 May 2022, 04:56 PM

কার্লো আনচেলত্তির হাত ধরে এলো ১৪ নম্বর ট্রফি, দ্বিতীয় সর্বাধিক শিরোপা জয়ী দলের চেয়ে যা দ্বিগুণ! কেমন ছিল তাদের আরও একবার ইউরোপের রাজা বনে যাওয়ার পথচলা? দলের শক্তি বিবেচনায় মৌসুমের শুরুতে সম্ভাবনার পাল্লাই বা কতটা হেলে ছিল তাদের দিকে?

জবাব খুঁজতে ফিরে তাকাতে হবে পেছন পানে। এক নজরে দেখলে একে একে চোখে ভাসে অবিশ্বাস্য সব মুহূর্ত, বারবার খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র। নানা নাটকীয়তা আর রোমাঞ্চের গল্পে ভরা ছিল স্প্যানিশ জায়ান্টদের এই পথচলা।

সেই গল্পই তুলে ধরা হলো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাঠকদের জন্য।    

অচেনা তিরাসপুলের ধাক্কা

২০২১-২২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেটি কেবলই রিয়াল মাদ্রিদের দ্বিতীয় ম্যাচ। আগের ম্যাচে ইন্টার মিলানের মাঠে কোনোরকমে জয় ধরা দিয়েছিল রদ্রিগোর শেষ মুহূর্তের গোলে। চিরচেনা আঙিনা সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে খেলতে নেমে আনচেলত্তির দল ২-১ গোলে হেরে গেল অচেনা শেরিফ তিরাসপুলের কাছে।

ইউরোপ সেরার ট্রফি যতদিনে রিয়াল ছয়বার ঘরে তুলে ফেলেছে, তখনও সেই ক্লাবের জন্মই হয়নি, বের্নাবেউয়ে সেই রাতের আগে যে ক্লাবের নামই শোনেনি ফুটবল বিশ্বের অনেকে, প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে মলডোভার পুঁচকে ক্লাব সেই তিরাসপুল হারিয়ে দেয় ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নদের!

চারদিকে পড়ে যায় যেন হায় হায় রব! এই রিয়াল মাদ্রিদ কতদূরই বা যাবে, উঠে যায় এমন এসব প্রশ্ন। তবে পরের চার ম্যাচ টানা জিতে শাখতার দোনেৎস্ক, তিরাসপুল, ইন্টারকে পেছনে ফেলে গ্রুপ সেরা হয়েই নকআউট পর্বে পা রাখে মাদ্রিদের দলটি। 

১৪ নম্বর মুকুট

সেদিন তারিখটা ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর, যেদিন রিয়াল বড় ধাক্কা খেয়েছিল তিরাসপুলের কাছে হেরে। অদ্ভুত কাকতাল, সেই ২৮ তারিখ, পার্থক্য শুধু মাসের, প্যারিসের ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৪তম চাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে নিজেদেরই রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করল রিয়াল।

রেফারি যখন ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজালেন, রিয়াল কোচ আনচেলত্তি মাঠে উদযাপন শুরু করে দিলেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে। এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে, কিছুদিন আগেও যা ছিল কল্পনাতীত!  

বিবিসি রেডিও ৫-এর লাইভে ফুটবল বিশেষজ্ঞ জুলিয়াঁ লহসের কণ্ঠেও যেন ফুটে উঠল সেটি, “চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মৌসুমে হয়তো খুব বেশিবার সেরা দল ছিল না তারা।"

ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ডের ভাষায়, “এই ছেলেরা অসাধারণ কিছু করে দেখাল। রিয়াল মাদ্রিদ এমনটি করতে পারবে বলে ধারণা করা হয়নি, কিন্তু প্রতিটি বাধা তারা অতিক্রম করেছে মানসিক দৃঢ়তা আর সাহসিকতা দিয়ে।”

ইউরোপের প্রত্যাবর্তনের রাজা

ফাইনালের আগে আসরে ১২ ম্যাচে ৪টিতে হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে, শিরোপা লড়াইয়ে নামার আগে পুরো মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬২ ম্যাচে লিভারপুলের হার ছিল স্রেফ ৩টি। 

তবু আনচেলত্তির দল অসাধারণ অভিযানের পর আসর শেষ করল ইউরোপের সিংহাসনে বসে। এর মাঝে তারা হয়ে উঠেছে যেন প্রত্যাবর্তনের রাজাও।

এবার নকআউট পর্বে পিএসজি, চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটি- তিন দলের বিপক্ষেই ছিটকে পড়ার দুয়ার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের ধাপে জায়গা করে নেয় রিয়াল।

শেষ ষোলোয় তারকাসমৃদ্ধ পিএসজির বিপক্ষে এক পর্যায়ে দুই লেগ মিলিয়ে রিয়াল ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। এরপর শেষ ৩০ মিনিটের জাদুকরী অধ্যায়; করিম বেনজেমার ১৭ মিনিটের হ্যাটট্রিকে বাজিমাত করে তারা।

কোয়ার্টার-ফাইনালে আবার কঠিন প্রতিপক্ষ-গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেলসি। প্রথম লেগে বেনজেমার হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলে জয়ের পর ঘরের মাঠে রিয়াল খেয়ে বসে তিন গোল। নির্ধারিত সময়ের যখন আর ১০ মিনিট বাকি, দুই লেগ মিলিয়ে পিছিয়ে তারা ৪-৩ গোলে। এরপরই মাঝমাঠের কাছ থেকে লুকা মাদ্রিচের জাদুকরী মুহূর্তের অসাধারণ এক ক্রস এবং তাতে রদ্রিগোর গোলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে বেনজেমার গোলে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা।

এরপর সেমি-ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে যেটা হয়, সেটাকে অসম্ভব বললেও কম হয়ে যায়। দুই লেগের লড়াইয়ে ১৭৯ মিনিট পর্যন্ত ৫-৩ গোলে এগিয়ে থেকে ফাইনালের সুবাশ পাচ্ছিল পেপ গুয়ার্দিওলার দল। রিয়ালের হার যখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা রদ্রিগো তখন দুই মিনিটে দুই গোল করে ম্যাচ নিয়ে যান অতিরিক্ত সময়ে। আর অতিরিক্ত সময়ে আবারও বেনজেমায় উদ্ধার, ফরাসি ফরোয়ার্ডের গোলেই পূর্ণতা পায় আরেকটি রূপকথার গল্প। সবগুলোই বের্নাবেউয়ে।

ফাইনালে যেতে এত কঠিন তিন ম্যাচ আর কোনো দলকে খেলতে হয়েছে কি-না, গবেষণার বিষয়!  

এমনকি ফাইনালে লিভারপুল শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণের তোড়ে প্রায় কোণঠাসা করে রাখে রিয়ালকে। পুরো ম্যাচে গোলের জন্য ইংলিশ দলটি যেখানে ২৪টি শট নিয়ে ৯টি রাখে লক্ষ্যে। সেখানে রিয়াল নিতে পারে মোটে চার শট, লক্ষ্যে মাত্র দুটি। তাতেই বাজিমাত।  

ফার্ডিনান্ডের ভাষায় রিয়ালের ফাইনালে যাওয়াটাই ছিল একরকম অলৌকিক ব্যাপার।

“আমার জীবনে ফাইনালে যাওয়ার এত কঠিন পথ আমি দেখিনি।”

“তারা পিএসজিকে হারিয়েছে, তারা ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে। এটা শ্বাসরুদ্ধকর এক ব্যাপার।”

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, রিয়ালের ফাইনালে ওঠা মানেই সাদার উৎসব। রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের সাবেক উইঙ্গার স্টিভ ম্যাকমানাম্যানও বললেন সেটিই।

“মাদ্রিদ সবসময় যা করে, তাই করে দেখায়। যখন তারা ফাইনালে যায়, শিরোপা জিতে নেয়। অভ্যাস এবং কৌশলের কারণে এটি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য।”

"এই মাদ্রিদ দলটি দুর্বল, তবে তারা ফাইনালে উঠল এবং শিরোপা জিতল।”

অবিশ্বাস্য বেনজেমা

মৌসুমের শুরুতে রিয়ালকে ঘিরে প্রত্যাশা খুব বেশি ছিল না। সেই দলটিই মৌসুম শেষ করল লা লিগার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘ডাবল’ জিতে। ঘরে তুলেছে সুপার কাপের শিরোপাও। এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে মূলত বেনজেমার কৃতিত্বে, ফরাসি তারকার অবিশ্বাস্য ফর্মের জন্য।

এবার রিয়ালের অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে থেকে লা লিগা জয়ের কারিগর বেনজেমা। ৩২ ম্যাচে তিনি করেন সর্বোচ্চ ২৭ গোল, তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা খেলোয়াড়ের চেয়ে যা ৯টি বেশি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জালের দেখা না পেলেও তিনিই আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। দুটি হ্যাটট্রিকসহ গোল ১৫টি, যার ১০টি নকআউট পর্বে।

প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে এক মৌসুমে বেনজেমার চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর। রিয়ালের হয়েই ২০১৫-১৬ মৌসুমে ১৬টি, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১৭ গোল করেছিলেন পর্তুগিজ মহাতারকা।

২০২১-২২ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে বেনজেমার গোল ৪৪টি, অ্যাসিস্ট ১৫টি। এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ের বড় দাবিদার তিনি নিশ্চিতভাবে।

ফার্ডিনান্ডের মতে, এ নিয়ে আর তর্কেরই সুযোগ নেই “ব্যালন ডি’অর নিয়ে তর্কাতর্কি শেষ। এটি যদি বেনজেমা না পায়, তাহলে সেটা হবে প্রতারণা।”

কোচ হিসেবে আনচেলত্তির চেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন লিগ আর কেউ জেতেনি। ইউরোপ সেরার মঞ্চে ইতালিয়ান এই কোচের এটি চতুর্থ শিরোপা।

আনচেলত্তির অর্জনের কথা ফুটে উঠল ম্যাচ শেষে তার কথায়, “আমি একজন রেকর্ড ম্যান। আমি মনে করি, আমরা সত্যিই কঠিন সব ম্যাচের মধ্য দিয়ে গেছি।"

নায়ক যখন কোর্তোয়া

ফাইনালের স্কোরশিট বলবে, ভিনিসিউস জুনিয়রের একমাত্র গোলে জিতেছে রিয়াল। কিন্তু ‘বোকা’ স্কোরশিট তো তুলে ধরতে পারবে না ম্যাচ জুড়ে থিবো কোর্তোয়ার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে কথা। গোলটি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড করলেও নায়ক আসলে বেলজিয়ান গোলরক্ষকই।

গোটা ম্যাচে গোলপোস্টের নিচে কোর্তোয়া ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। দুর্দান্ত সব সেভে হতাশ করেছেন মোহামেদ সালাহ, সাদিও মানেদের।

পুরো ম্যাচে মোট ৯টি সেভ করেন রিয়ালের গোলবারে অতন্দ্র এই প্রহরী। ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি সেভ করার রেকর্ড এটি।

ক্যারিয়ারে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এডউইন ফন ডার সারের পর প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে তিনি জেতেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

এমবাপেকে ভুলে শুধুই উৎসব

গত কয়েকটা দিন রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের জন্য ছিল বেশ কঠিন। জোরাল সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত কিলিয়ান এমবাপেকে না পাওয়াটা তাদের জন্য ছিল বড় ধাক্কা।

লম্বা সময় ধরে বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি এই ফুটবলারকে দলে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। সেটি গত সপ্তাহে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছিল বলেই খবর আসছিল চার দিক থেকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের চেয়ে এই বিষয়টি নিয়েই তাই আলোড়ন ছিল বেশি। কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর একেবারে শেষে এসে রিয়ালকে ফিরিয়ে দেন এমবাপে। সিদ্ধান্ত নেন ২০২৫ সাল পর্যন্ত পিএসজিতেই থেকে যাওয়ার।

এমবাপেকে না পাওয়ায় যে খারাপ লাগা তৈরি হয়েছিল রিয়ালের সমর্থকদের, সেটি ভুলতে খুব করে দরকার ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। সেটি হয়েছে, এই জয়ের আনন্দেই এখন ডুবে আছে রিয়াল মাদ্রিদ ও তাদের সমর্থকরা। এমবাপেকে ছাড়াই যদি তারা মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ডাবল জিততে পারে, তাহলে তাকে নিয়ে ভাবার আর সময় কই!  

ফরাসি বিশেষজ্ঞ লহস যেমন বললেন, “এটি (রিয়াল মাদ্রিদের) অবিশ্বাস্য এক প্রজন্ম। ক্লাব পর্যায়ের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা, সবচেয়ে কঠিন প্রতিযোগিতা তারা আট (৯ বছরে) বছরে পাঁচবার জিতল।”

এবং লিভারপুলের হতাশা

প্যারিসে শনিবারের রাতটা লিভারপুল ও তাদের সমর্থকদের জন্য ছিল দুর্ভাগ্যজনক, চরম হতাশার।

কিছুদিন আগেও লিভারপুলের সামনে জেগেছিল অনন্য ‘কোয়াড্রপল’ জয়ের আশা। লিগ কাপের পর তারা জিতে নেয় এফএ কাপের শিরোপা। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডে তাদের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে যায় ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ১ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে।

ছয় দিন আগের সেই হতাশা তারা ভুলতে চেয়েছিল শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে। কিন্তু রিয়ালের কাছে হেরে উল্টো দ্বিগুণ হয়েছে সেই হতাশা। 

লিভারপুল লিগ কাপ ও এফ কাপ ঘরে তুলেছিল চেলসির বিপক্ষে গোলশূন্য স্কোরলাইনের পর টাইব্রেকারে জিতে। অর্থাৎ মৌসুমে তিন ফাইনালেই ‘ওপেন প্লে’ থেকে গোল করতে ব্যর্থ হলো তারা।   

সালাহ, মানে, লুইস দিয়াস, রবের্তো ফিরমিনো ও দিয়োগো জটার মতো খেলোয়াড়রা যখন লিভারপুলের আক্রমণভাগে, সেই দলটি গোল না পেলে তা জাগায় বিস্ময়। এজন্য লিগ কাপ ও এফএ কাপের ফাইনালে হয়তো ভুগতে হয়নি দলকে, কিন্তু চরম মূল্য দিতে হলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। 

এমন না যে ফাইনালে তারা সুযোগ কম তৈরি করেছে, কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় কোর্তোয়ার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। শুধু সালাহরই ছয়টি প্রচেষ্টা সেভ করেন রিয়াল গোলরক্ষক। মানের বুলেট গতির শট তার হাত ছুঁয়ে লাগে পোস্টে।

২০১৮ সালের ফাইনালে এই রিয়ালের বিপক্ষেই সের্হিও রামোসের চ্যালেঞ্জে সালাহ কাঁধে চোট পান ৩০ মিনিটে। চোট নিয়ে কিছুক্ষণ চালিয়ে যান খেলা। তবে একটু পর মাঠ থেকে উঠে যান কান্নাভেজা চোখে। লিভারপুল হেরে যায় ৩-১ গোলে।

এবার রিয়াল ফাইনালে ওঠার পর সালাহ টুইট করেছিলেন, “কিছু হিসাব চুকানোর বাকি আছে আমাদের।” রিয়ালকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা পরেও তিনি বলেন কয়েকবার।

তার সেই চাওয়া পূরণ হলো না। আজীবন হয়তো নিজেকে প্রশ্ন করবেন, ফাইনালে অন্তত একটি গোল কীভাবে তিনি করতে পারলেন না। দুঃস্বপ্নে হয়তো ভেসে উঠবে কোর্তোয়ার মুখ!