যেভাবে শেষ হয়ে যায় আগুয়েরোর ক্যারিয়ার

ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। সের্হিও আগুয়েরোর দিকে চেয়ে নিয়তি তখন হয়তো মুচকি হেসেছিল! শরীরে বাসা বাঁধল কঠিন ব্যাধি। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন জটিলতা সংক্রান্ত অ্যারিথমিয়া রোগের কারণে কদিন পর ফুটবলকেই বিদায় বলে দিতে বাধ্য হলেন তিনি। দীর্ঘদিন বাদে পেছনে ফিরে তাকিয়ে কঠিন সেই সময়ের কথা শোনালেন সাবেক আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2022, 04:08 PM
Updated : 18 May 2022, 04:08 PM

গত গ্রীষ্মে ম্যানচেস্টার সিটিতে ১০ বছরের অধ্যায়ের ইতি টেনে ফ্রি ট্রান্সফারে বার্সেলোনায় যোগ দেন আগুয়েরো। স্বপ্ন ছিল বন্ধু লিওনেল মেসির সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলার। কিন্তু নিজেদের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে পারেনি কাতালান ক্লাবটি।

বলতে গেলে কাম্প নউয়ের ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পর আগুয়েরোর জন্য এটি ছিল প্রথম ধাক্কা। এরপর তো চোটের সঙ্গে লড়তে হয় কিছু দিন। সেরে উঠে নামেন নতুন অভিযানে। দ্রুতই জায়গা করে নেন বার্সেলোনার শুরুর একাদশে। এমনকি রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোলও করেন।

কিন্তু গত ৩০ অক্টোবর লা লিগায় আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচের এক পর্যায়ে বুকে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, অ্যারিথমিয়া রোগে ভুগছেন তিনি।

তখনই গুঞ্জন শুরু হয়, এ রোগের কারণে ফুটবল ছাড়তে হতে পারে আগুয়েরোকে। যা সত্যি হয় ডিসেম্বরে। চোখের জলে তিনি বিদায় জানান ফুটবলকে।

স্প্যানিশ টিভি অনুষ্ঠান ‘এল হরমিগেরো’তে ৩৩ বছর বয়সী আগুয়েরো সেই সময়ের নানা পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। মৌসুমের শুরুতেই তার মধ্যে কিছু উপসর্গ ছিল বলে জানান তিনি।

“অদ্ভুত কিছু লক্ষণসহ প্রাক-মৌসুমে আমার খারাপ লাগতে শুরু করে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, অনুশীলনের সময়ে গরমের কারণে এরকম হচ্ছে। এরপর আমি চোটে পড়ি এবং এক মাসের জন্য ছিটকে যাই। তবে আমি তখনও অস্বস্তি বোধ করছিলাম।”

“এরপর আমি দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করি এবং অনুশীলন সেশনে শ্বাসকষ্ট অনুভব করি। একদিন আমি চিকিৎসককে বললাম, খারাপ বোধ করছি। তারপর মাথা ঘোরা অনুভব করতে শুরু করি এবং অ্যারিথমিয়া শুরু হয়।”

এজন্য যে ফুটবলই ছেড়ে দিতে হবে, তখন আগুয়েরোর কল্পনাতেও ছিল না।

“চিকিৎসক আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু পরের সপ্তাহেই মাঠে আমার সঙ্গে সেটা ঘটে (অক্টোবরে আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচে)।”

সেদিন মাঠে নিজের অস্বস্তির বিষয়ে রেফারির দৃষ্টি কাড়তেও অনেক বেগ পেতে হয়েছিল ইংলিশ ক্লাব সিটির ইতিহাসে রেকর্ড ২৬০ গোল করা আগুয়েরোকে।

“আমার খারাপ লাগতে শুরু করল এবং আমি খেলা বন্ধ করার জন্য রেফারিকে চিৎকার করে বলতে চাইলাম। কিন্তু শব্দই বের করতে পারলাম না। তারপর আমার মাথা ঘোরা শুরু হলো, তাই আমি একজন ডিফেন্ডারের হাত ধরে তাকে খেলা বন্ধ করার কথা বললাম।”

“এরপর আমার খুব মাথা ঘোরা অনুভব হচ্ছিল, শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছিলাম না। অ্যারিথমিয়া শুরু হয়েছিল। খেলা বন্ধ হওয়ার পর তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল এবং সেখানে আমাকে তিন দিন রাখা হয়েছিল।”

হাসপাতালেই একজন চিকিৎসক তাকে জানিয়েছিলেন, আবারও মাঠে নামলে কী ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে।

“চিকিৎসক আমাকে বলেছিলেন, আমি খেলতে পারব। কিন্তু সেক্ষেত্রে এটা আবার ঘটতে পারে এবং আরও খারাপ কিছু হতে পারে। এরপর এ নিয়ে অনেক ভাবলাম। নিজেকে বললাম, ‘তাহলে এখানেই শেষ। আমার বয়স এখন ৩৩। আমার একটি ছেলে আছে এবং আমার সামনে আরও জীবন পড়ে আছে।”

বার্সেলোনায় পাড়ি দেওয়ার পর ক্লাবটির হয়ে নিজেকে উড়ার করে দিতে চেয়েছিলেন আগুয়েরো। সেই চাওয়া পূরণ না হাওয়ার কষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক। তবে অনেক কষ্টের মাঝেও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারার স্মৃতি কোপা আমেরিকা জয়ী তারকার মনে আলাদা জায়গা করে আছে।