‘নাম যখন রিয়াল মাদ্রিদ, সম্ভব তখন সবকিছুই’

দ্বিতীয় লেগের ৬০ মিনিট পর্যন্ত পিএসজির কাছে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা। দ্বিতীয় লেগের নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট বাকি থাকার সময়ও চেলসির বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হারের মুখে। দ্বিতীয় লেগের ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ৫-৩ গোলে পরাজয়ের শঙ্কা। তবে ম্যাচ তো শেষ হয় কেবল শেষ বাঁশি বাজার পরই! ম্যাচজুড়ে পিছিয়ে থেকেও প্রতিবারই ম্যাচ শেষে উল্লাস করা দলটি রিয়াল মাদ্রিদ। দলের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া যেমন বলছেন, ক্লাবের নামেই মিশে আছে হার না মানার প্রেরণা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2022, 05:08 AM
Updated : 5 May 2022, 09:06 AM

পিএসজি, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি-একেকটি বড় নাম, ফেভারিট প্রতিপক্ষ, শিরোপা জয়ের দাবিদার। শেষ ষোলো থেকে সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত বাধার এরকম পাহাড় ডিঙিয়েই এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ।

পিএসজির বিপক্ষে নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর চেলসির বিপক্ষে অসাধারণ প্রত্যাবর্তন। মনে হচ্ছিল, সবকিছুই দেখিয়ে দিয়েছে রিয়াল। কিন্তু রোমাঞ্চ-উত্তেজনার নতুন উপাখ্যান রচনা করল তারা ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে।

সিটির বিপক্ষে প্রথম লেগে এক পর্যায়ে ৩-১ গোলে পিছিয়ে ছিল রিয়াল, পরে স্কোরলাইন ছিল ৪-২। সেখান থেকে ব্যবধান এক গোলে রাখতে পারে তারা। এরপর দ্বিতীয় লেগে বুধবার ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা, দুই লেগ মিলিয়ে দুই গোলের ব্যবধান থাকার পরও অসাধারণ জয়। রিয়াল রূপকথার নতুন অধ্যায় যেন।

লা লিগার সফলতম দল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন দল, যে ক্লাবের ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটবলারদের জন্য নিরন্তর প্রেরণা, যে জার্সির ওজন দলকে উজ্জীবিত করে আর শক্তি জোগায় শেষ বাঁশি পর্যন্ত লড়ে যেতে, সেই দলের পক্ষেই সম্ভব বুঝি একের পর এক এরকম স্মরণীয় জয়ে নিজেদের রাঙাতে।

ম্যাচের পর মুভিস্টার প্লাসকে কোর্তোয়া যা বললেন, তাতেই যেন ফুটে উঠল প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার আবেগ-অনুভূতি-বাস্তবতার সবটুকু। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা গোলরক্ষক জানিয়ে রাখলেন ফাইনাল নিয়ে আশাবাদও।

“নামটি যখন রিয়াল মাদ্রিদ, সম্ভব তখন সবকিছুই। এটা স্রেফ অসাধারণ। আমরা এমন সব বড় ক্লাবকে ছিটকে দিয়েছি, যারা অনেক অনেক অর্থ খরচ করে তাদের দল গড়েছে।”

“ওরা অর্থ দিয়ে দল গড়েছে, আমাদের আছে ইতিহাস! আর রিয়াল মাদ্রিদ যখন ফাইনাল খেলে, তারা জয়ের জন্যই সেখানে পা রাখে।”

কার্লো আনচেলত্তির কোচিংয়ে স্বপ্নের ‘লা দেসিমা’ জয় করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এই ক্লাবের ইতিহাসের অংশ তিনি। ক্লাবের ‘ডিএনএ’ তার ভালোই জানা। চিরচেনা শান্ত ভঙ্গিতেই তিনি মুভিস্টার প্লাসকে শোনালেন সাফল্যগাঁথার প্রেরণার উৎস কোথায়।

“এই ক্লাবের গ্রেটনেস হলো, যখন মনে হয় সবকিছুর সমাপ্তি, তখনও এই ক্লাব হাল ছাড়তে দেয় না। লড়ার প্রেরণা জোগায়। এটা এমন একটা অনুভূতি, যা শক্তি জোগায় লড়াই চালিয়ে যেতে, বিশ্বাস জোগায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা রাখার।”

“শেষ সময়ে সমতা ফেরালে মনস্তাত্ত্বিক একটা সুবিধা থাকে। সেটি কাজে লাগিয়েছি আমরা। আমাদের ঘরের দর্শকদের সামনে অতিরিক্ত সময়ে খেলা মানে প্রতিপক্ষের জন্য দুর্দশা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো তিনটি দলকে আমরা বিদায় করে দিয়েছি, এটা বড় এক সাফল্য।”

রিয়ালের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মানসিকতার কথা বললেন কাসেমিরোও। পাশাপাশি এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার বললেন ঘরের দর্শকের কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণার কথা।

“সমর্থকদের থেকে দুই বছর দূরে থাকতে হয়েছে আমাদের (কোভিডের কারণে)। তাদের উপভোগের উপলক্ষ তৈরি করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, কারণ তারাই আমাদের এভাবে লড়ার শক্তি জোগায়, আজকে রাতে যেমন জুগিয়েছে।”

“এই ক্লাবের সবচেয়ে মহৎ গুণ, কখনও হাল না ছাড়া ও শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া। আমাদের দলীয় সঙ্গীতে এটা মিশে আছে, ‘আনটিল দা এন্ড উই গো, রিয়াল!’ এটাই আমাদের চেতনা, কখনোই আত্মসমর্পণ না করা।”