মোহনবাগানের বিপক্ষে স্বপ্নভঙ্গ আবাহনীর

চোটে পড়া দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তোর অনুপস্থিতিতে শুরু থেকে ভুগল আবাহনীর আক্রমণভাগ। নাবীব নেওয়াজ জীবনের চোট পেয়ে প্রথমার্ধেই মাঠ ছাড়া বিপদ বাড়াল আরও। দ্বিতীয়ার্ধে দেনিয়েল কলিনদ্রেসের গোলে কিছুটা আশা জাগল বটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ডেভিড উইলিয়ামসের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর স্বপ্ন ভেঙে এএফসি কাপের মূল পর্বে উঠে গেল মোহনবাগান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2022, 03:32 PM
Updated : 19 April 2022, 03:32 PM

সল্ট লেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার এএফসি কাপের প্লে-অফে আবাহনীকে ৩-১ গোলে হারায় মোহনবাগান। প্রথমার্ধে জোড়া গোল করা উইলিয়ামস ৮৫তম মিনিটে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক।

মূল পর্বে ‘ডি’ গ্রুপে খেলবে মোহনবাগান। সেখানে আগে থেকেই আছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, ভারতের গোকুলাম কেরালা ও মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব। আগামী ১৮ মে শুরু হবে গ্রুপ পর্ব।

২০১৭ সালে এএফসি কাপে গ্রুপপর্বে দুই দলের সবশেষ দেখা হয়েছিল। সেবার কলকাতার ম্যাচে ৩-১ গোলের হারের পর ঢাকায় ১-১ ড্র করেছিল ‘আকাশী-নীল’রা। এবার এক লেগের প্লে-অফে প্রতিপক্ষের মাঠে ব্যর্থতার পরিসংখ্যান বদলাতে পারল না মারিও লেমোসের দল।

আবাহনীর চার ডিফেন্ডার নিয়ে ঘর সামলে রাখার ছক ধাক্কা খায় ষষ্ঠ মিনিটেই। প্রথম আক্রমণ থেকে গোল তুলে নেয় মোহনবাগান। লিস্টন কোলাসোর ক্রস বাঁ দিকে ফাঁকায় পেয়ে যান উইলিয়ামস। নিখুঁত প্লেসিং শটে জাল খুঁজে নেন এই অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড। পেছনেই থাকা আবাহনীর ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ সোলেমানি পারেননি উইলিয়ামসকে আটকাতে।

চোটের কারণে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দোরিয়েলতনের না পাওয়ায় আবাহনী তাকিয়ে ছিল কলিনদ্রেস ও নতুন আসা নেদো তুর্কোভিচের দিকে। তুর্কোভিচ পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে। দ্বাদশ মিনিটে কলিনদ্রেসের কর্নারে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার এই ফরোয়ার্ডের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

২৩তম মিনিটে আরেকটি ধাক্কা খায় ‘আকাশী-নীল’রা। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক ও আক্রমণভাগের অভিজ্ঞ সেনানী জীবন। তার বদলে নামেন লিগের প্রথম পর্বে ১১ ম্যাচে ২ গোল করা জুয়েল রানা।

গতি দিয়ে বারবার আবাহনীর রক্ষণে ভীতি ছড়ানো উইলিয়ামসই ৩০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ডান দিক থেকে প্রবীর দাসের ক্রসে বাঁ পায়ের ভলিতে পরাস্ত করেন শহীদুল আলম সোহেলকে।

ছয় মিনিট পর হ্যাটট্রিক পূরণের সুযোগ এসেছিল উইলিয়ামসের সামনে। কিন্তু সোহেলকে একা পেয়ে তালগোল পাকিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন। চিপ করলেই গোল পেতে পারতেন, কিন্তু স্লাইড করা গোলরক্ষকের গায়ে মেরে বসে তিনি।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোলের আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয় মোহনবাগানের। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা কোলাসোর শট সোহেল ফিস্ট করার পর বল যায় ডান দিকে ফাঁকায় থাকায় উইলিয়ামসের দিকে। কিন্তু অপ্রস্তুত থাকা অস্ট্রেলিয়ার এই ফরোয়ার্ড পারেনি পা ছোঁয়াতে।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবাহনীর সোলেমানির ফ্রি কিক যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। এই অর্ধে মাত্র তিনটি শটই নিয়েছিল লিগের রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়নরা, তার মধ্যে মাত্র একটি ছিল লক্ষ‍্যে।

৫০তম মিনিটে ডান দিকে দিয়ে আক্রমণে ওঠা মানভির সিং সোহেলকে একা পেয়েছিলেন। কিন্তু উড়িয়ে মেরে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করেন এই ফরোয়ার্ড। পরের মিনিটেই কলিনদ্রেসের নিচু ক্রসে তুর্কোভিচের ফ্লিকের চেষ্টা ব্যর্থ হয়, বল বেরিয়ে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।

আবাহনী ম্যাচে ফেরার উপলক্ষ্য পায় ৬০তম মিনিটে। রাকিব হোসেনের পাস ধরে একটু এগিয়ে গিয়ে ডান দিক থেকে দৃষ্টিনন্দন কোনাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন কলিনদ্রেস। জেগে ওঠে আবাহনী।

৬৪তম মিনিটে কোলাসোর দূরপাল্লার শট অনেকটা লাফিয়ে ফিস্ট করে ফেরান সোহেল। তিন মিনিট পর সমতার দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন জুয়েল। নুরুল নাইম ফয়সালের ক্রস বক্সে বুক দিয়ে নামিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে হতাশায় মুখ ঢাকেন এই ফরোয়ার্ড।

কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া মোহনবাগান শেষ দিকে ফের চাপ দিতে থাকে। ৭৮তম মিনিটে সোলেমানিকে কাটিয়ে জায়গা করে নেওয়া কোলাসোর শট দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়। কোলাসোর বদলি নেমেই ৮০তম মিনিটে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে মেরে হতাশ করেন কিয়ান নাসিরি।

৮৫তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে সতীর্থের পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নেন উইলিয়ামস। আবারও সোহেলকে একা পেয়ে যান তিনি। আবাহনী গোলরক্ষককে কাটিয়ে এবার আর সুযোগ নষ্টের হতাশায় পুড়তে হয়নি তাকে। এ গোলেই শেষ হয়ে যায় আবাহনীর ম্যাচে ফেরার আশা।