বিদায়ের রাগিনী শোনালেন ‘লিকলিকে পায়ের’ ফেলিক্স

লিকলিকে দুটি পা। ছোটবেলায় তাই সবাই বলত ‘চিকেন লেগস’! সেই মেয়েটিই দিনের পর দিন অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে আলো ছড়াল, একের পর এক চুমু আঁকল সোনার পদকে। নিজেকে তুলে নিল অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু একদিন সবাইকে থামতে হয়। অ্যালিসন ফেলিক্সও থামতে চান। কিংবদন্তি এই অ্যাথলেট আবেগঘন বার্তায় জানালেন, মৌসুম শেষে বিদায় নেবেন প্রিয় আঙিনা থেকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2022, 10:19 PM
Updated : 13 April 2022, 10:19 PM

ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ আসর অলিম্পিকসে ফেলিক্স জিতেছেন ১১টি পদক, এর মধ্যে সাতটি সোনার। এর সঙ্গে আছে ১৩টি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার পদকও। তাকে বলা হয় মেয়েদের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের সবচেয়ে সাফল্যমন্ডিত এবং সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানদের একজন।

গত বছর টোকিও অলিম্পিকসেও দৌড়েছেন। সব মিলিয়ে বর্ণিল ক্যারিয়ারে অংশ নিয়েছেন পাঁচটি অলিম্পিকসে। ৩৬ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট এবার থামতে চান। ইনস্টাগ্রামে দৌড়ানোর একটি ছবি দিয়ে আবেগী বার্তায় লিখেছেন অনেক কথা।

“ছোট একটি মেয়ে, যার পা দুটোকে লোকে মুরগির পা বলত… আমি কখনও কল্পনাও করিনি এমন একটি ক্যারিয়ার হবে আমার।”

“আমার জীবন বদলে দেওয়া এই খেলার প্রতি আমার অপরিসীম কৃতজ্ঞতা। দৌড়ানোর জন্য আমি সবটুকু নিংড়ে দিয়েছি এবং এই প্রথমবার আমি নিশ্চিত নই…আমার দেওয়ার আর কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা।”

বিদায়বেলায় সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি।

“আমি ধন্যবাদ বলতে চাই, খেলাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই এবং যে মানুষগুলো আমার বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে, তাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর একটিমাত্র পথই আমি জানি-তাদের জন্য শেষ আরেকবার দৌড়াব।”

ফেলিক্স লিখেছেন এই ‘শেষ দৌড়ে’ ঘড়ির কাঁটায় নজর থাকবে না তার। রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে থাকার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষাও নয়। স্রেফ আনন্দ পেতে, আনন্দ দিতে দৌড়াতে চান তিনি।

“যদি আপনারা আমাকে এ বছর ট্র্যাকে দেখেন, আশা করি সেটা একটা মুহূর্ত, একটা স্মৃতি এবং আমার ভালোলাগা আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার উপলক্ষ হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র দলের হয়ে অলিম্পিকসে ৪০০ মিটার রিলেতে চারটি, ১০০ মিটার রিলেতে দুটি সোনা জিতেছেন ফেলিক্স। অলিম্পিকে একমাত্র ব্যক্তিগত ইভেন্টে তিনি সেরার মুকুট পরেন ২০০ মিটারে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে ফেলিক্স কন্যা সন্তানের জন্ম দেন, মেয়ের নাম ক্যামরিন। উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুখ প্রি-একলাম্পসিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মাত্র ৩২ সপ্তাহের পরই সন্তানের জন্ম দিতে হয়েছিল তাকে। কেননা ওই রোগ মা-মেয়ে উভয়ের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারত।

ওই কঠিন সময় পেছনে ফেলে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস অ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে ফেলিক্স সফলতম অ্যাথলেট বনে যান। দোহার সেই প্রতিযোগিতায় রিলে ইভেন্ট থেকে জয় করেন দুটি সোনা।

একই বছর, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান নাইকির কাছ থেকে সাফল্য দিয়েই মাতৃকালীন পাওনাও আদায় করে ছাড়েন ফেলিক্স। ২০১৯ সালের মে মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসে তিনি লিখেছিলেন, মা হওয়ার কারণে নাইকি তাকে চুক্তির ৭০ শতাংশ অর্থ দিতে চেয়েছিল এবং এর তিন মাস পর নাইকিই তাদের অবস্থান বদলায়।

কেবল ট্র্যাকেই বিজয়ী নন ফেলিক্স, মানুষের জন্য, বিশেষ করে কৃষাঙ্গ মানুষের জন্য কাজ করছেন। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মাতৃকালীন মৃত্যুর সমস্যাটি সম্মুখে তুলে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এ মৌসুমেও তিনি নারীদের জন্যই চান দৌড়াতে।

“এই মৌসুমে আমি নারীদের জন্য দৌড়াব। আমার মেয়ের আরও ভালো ভবিষ্যতের জন্য দৌড়াব। আমি তোমাদের জন্য দৌড়াব।”

“এ বিষয়ে আরও অনেক কিছু করব, তাই সাথেই থাকুন। এই ঘোষণা আমি কয়েক দফায় ভাগাভাগি করে দেব। আশা করি, নারীদের জন্য বিশ্বকে আরও সুন্দর করে তুলব।”

“এটাই আমার শেষ মৌসুম।”