গোল হলো চারটি। লাল কার্ড দেখলেন দুই দলের দুজন। দুই দলের ফরোয়ার্ডরা নষ্ট করলেন সুযোগ। মাঠের উত্তাপ মাঝমধ্যে আছড়ে পড়ল ডাগআউটেও। আবাহনী লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচটি ছিল এমনই ঘটনাবহুল এবং রোমাঞ্চকর। জয়ের হাতছানি ছিল দুই দলের সামনে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে ড্র।
Published : 03 Apr 2022, 07:54 PM
সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে রোববার দুই দলের ম্যাচটি ২-২ ড্র হয়েছে। দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরার গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। এলিটা কিংসলে সমতা ফেরানোর পর কিংসকে এগিয়ে নেন রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো। শেষ দিকে রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের স্বস্তির নায়ন দোরিয়েলতন গোমেজ নাসিমেন্তো।
চলতি লিগে এই প্রথম পয়েন্ট ভাগাভাগি করল কিংস। ১০ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে অস্কার ব্রুসনের দল। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আবাহনী; এই ড্রয়ে অবশ্য শিরোপা লড়াই থেকে কিছুটা পিছিড়ে পড়ল মারিও লেমোসের দল। ২০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব।
শুরু থেকেই মিলেছিল উত্তেজনাকর ম্যাচের ইঙ্গিত। চতুর্থ মিনিটে আক্রমণে শাণায় আবাহনী। বাঁ দিক থেকে কলিনদ্রেসের ক্রসে দোরিয়েলতনের দুর্বল হেড জমে যায় আনিসুর রহমান জিকোর গ্লাভস।
ষষ্ঠ মিনিটে রবিনিয়োকে লাথি মেনে বসেন মনির হোসেন। কিংসের খেলোয়াড়রা লালকার্ডের জোরালো দাবি জানালেও রেফারি আনিসুর রহমান হলুদ কার্ড দেখান আবাহনীর ডিফেন্ডারকে।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচের পঞ্চদশ মিনিটে বাঁ দিক থেকে রাফায়েল অগোস্তোর বাঁকানো ক্রসে দরিয়েলতনের হেড আটকে আবারও কিংসের ত্রাতা জিকো।
২০তম মিনিটে জিকো আর পারেননি। মনিরের ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেননি খালিদ শাফিই। বক্সেই বল পেয়ে যান কলিনদ্রেস। ২০১৮ থেকে ২০ পর্যন্ত কিংসে খেলা কোস্টা রিকার এই ফরোয়ার্ডের নিখুঁত কোনাকুণি শটে পরাস্ত জিকো।
ছয় মিনিট পর মাঝ মাঠে বল দখলের লড়াইয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সোহেল রানাকে পিছন থেকে দুইবার চার্জ করেন ইমন বাবু। তাতে মেজাজ হারিয়ে কনুঁই চালিয়ে বসেন সোহেল। তা ইমনের মুখে সেভাবে লাগলেও কিংসের মিডফিল্ডার আচরণের কারলে লালকার্ড পান। ইমন পান হলুদ কার্ড। এই ঘটনায় তর্কে জড়িয়ে হলুদ কার্ড দেখেন আবাহনীর রাফায়েলও।
৩৮তম মিনিটে আবাহনীর রাকিবের শট উড়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বিপদ বাড়াতে বসেছিলেন জিকো। তবে রাফায়েল অগাস্তোর শট তার গ্লাভস গলে বেরিয়ে যাওয়ার পর সামনে থাকা দোরিয়েলতনের ফিরতে প্রচেষ্টা আটকান তিনি।
বিরতির আগে কিংসের মতো আবাহনীও দশ জনের দলে পরিণত হয়। মাঝ মাঠে রিমন হোসেনকে অহেতুক আঘাত করেন রাকিব। চতুর্থ অফিসিয়ালের সঙ্গে আলোচনা করে আবাহনীর এই ফরোয়ার্ডকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধে কিংস ফিরে চেনা আগ্রাসী রূপে। ৫৯তম মিনিটে কিংসলের বুলেট গতির কোনাকুনি শট বলের লাইনে থাকা শহীদুল আলম সোহেলের হাত লেগে দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এরপরই পিছিয়ে থাকার ঘাটতি পুষিয়ে এগিয়ে যায় কিংস। ৬৪তম মিনিটে বাইলাইনের একটু উপর থেকে রবিনিয়োর কাট ব্যাকে পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন কিংসলে। বল এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে কিছুটা দিক পাল্টে জালে জড়ায়।
পাঁচ মিনিট পর মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পাস ধরে মাশুক মিয়া জনি বাড়ান রবিনিয়োর উদ্দেশ্যে। বক্সের একটু উপর থেকে প্রথম ছোঁয়ায় বল একটু এগিয়ে নিয়ে ডান পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
৮৪তম মিনিটে সমতার স্বস্তি ফিরে আবাহনীর শিবিরে। নাবীব নেওয়ার জীবনের ক্রস মুক্ত করা নিয়ে দোটানায় ছিলেন জিকো; শেষ পর্যন্ত পোস্টেই ফিরে যান তিনি। দূরের পোস্টে বল পেয়ে জুয়েল রানা কাট ব্যাক করেন গোলমুখে; প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দোরিয়েলতন।
পরের মিনিটেই রবিনিয়োর ক্রস কিংসলে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নিতে দেরি করেন; পরে তার বাঁ পায়ের দুর্বল শট সোহেল আটকালো পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় দুই দলকে।