টাইব্রেকারে আবারও মিশরের আশা গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে সেনেগাল

মাস দুয়েক আগে টাইব্রেকারে হেরে আফ্রিকান নেশন্স কাপ থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল মিশরকে। আবারও সেই একই প্রতিপক্ষ, একইরকম পেনাল্টি শুটআউট। কিন্তু ভাগ্য বদলাল না তাদের। পুরনো ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারলেন না মোহামেদ সালাহ ও তার সতীর্থরা। ১২ গজ দূর থেকে জালে বল পাঠালেন সাদিও মানে। কাতার বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করার আনন্দে ভাসল সেনেগাল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2022, 08:22 PM
Updated : 30 March 2022, 01:06 PM

ডায়ামিনিয়াডিওয়ে মঙ্গলবার রাতে বাছাইয়ে প্লে-অফের ফিরতি লেগে টাইব্রেকারে ৩-১ ব্যবধানে জিতে বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করে সেনেগাল।

প্রথম লেগে মিশর ১-০ গোলে জয়ের পর এখানে স্বাগতিকরা একই ব্যবধানে জিতলে দুই লেগ মিলিযে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১-১। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

পেনাল্টি শুট আউটে দুই দলের নেওয়া প্রথম চার শটে একটিও গোল হয়নি। ব্যর্থতার সেই তালিকায় আছে মিশরের সবচেয়ে বড় তারকা সালাহও।

সেনেগাল তাদের বাকি তিন শটের সবকটিতেই গোল পায়। কিন্তু মিশর তৃতীয় শটে গোল পেলেও চতুর্থ শটে আবারও ব্যর্থ হয়। ফলে সেনেগালের পঞ্চম শটে মানে লক্ষ্যভেদ করলেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নদের।

এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় ও মোট তৃতীয়বার বিশ্বকাপে উঠল সেনেগাল। বিশ্বসেরা টুর্নামেন্টে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০০২ আসরে, সেবার চমক জাগিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছিল তারা।

প্রথম লেগে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে যেমন শুরু দরকার ছিল, দলকে ঠিক তাই এনে দেন বুলায়ে দিয়া। ম্যাচ শুরুর চতুর্থ মিনিটেই প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

ডি-বক্সের ডান দিক থেকে প্রতিপক্ষের নেওয়া ফ্রি-কিক দূরের পোস্টে হেডে ক্লিয়ার করার চেষ্টায় এক ডিফেন্ডার তুলে দেন দিয়ার পায়ে। ছয় গজ বক্সে ঠাণ্ডা মাথায় বুক দিয়ে বল নামিয়ে আলতো টোকায় জালে পাঠান এই ফরোয়ার্ড।

শুরুতেই গোল পাওয়ার আত্মবিশ্বাসে ম্যাচ জুড়ে একের পর এক আক্রমণ করে গেল সেনেগাল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় গোলের দেখা পেল না তারা। তেমন কিছু করতে পারল না সফরকারীরাও।

অতিরিক্ত সময়েও একই চিত্র; স্বাগতিকদের আক্রমণের ঢেউয়ের মুখে ঘর সামলানোয় ব্যস্ত সময় পার করে মিশর। ম্যাচ পরিসংখ্যানে যা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে; ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে গোলের উদ্দেশ্যে সেনেগালের নেওয়া ২৫ শটের ৯টি থাকে লক্ষ্যে। জবাবে মিশর নিতে পারে মোটে ৫ শট, একটিই মাত্র লক্ষ্যে ছিল।

১২০ মিনিটে ঘর সামলানোয় সফল হলেও টাইব্রেকারের ব্যর্থতায় বিশ্বকাপে উঠতে না পারার কষ্ট নিয়েই বাড়ি ফিরতে হলো রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া মিশরকে।

নাইজেরিয়া-ঘানা

অ্যাওয়ে গোলের নিয়মটিই ব্যবধান গড়ে দিল এই দুই দলের লড়াইয়ে। ঘানার মাঠে প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হওয়ায় সব হিসাব নিকাশ চলে আসে ফিরতি লেগে, নাইজেরিয়ার ঘরে।

তবে, নিজ আঙিনায় খেলার সুবিধা কাজে লাগাতে পারল না নাইজেরিয়া।

ম্যাচের দশম মিনিটেই টমাস পার্টির গোলে এগিয়ে যায় ঘানা। ১২ মিনিট পর তাদের আত্মঘাতী গোলে লড়াইয়ের নাটকীয়তা জমে উঠলেও সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা। বাকি সময়ে স্কোরলাইনে সমতা ধরে রেখে প্রতিপক্ষের মাঠে গোল করার সুবাদে কাতারের টিকেট কাটে ঘানা।

২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা তিন আসরে খেলার পর রাশিয়া বিশ্বকাপে সুযোগ পায়নি তারা। সেই হতাশা পেছনে ফেলে আবারও বৈশ্বিক বিশ্বসেরার মঞ্চে জায়গা করে নিল ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালিস্ট দলটি।

মরক্কো, তিউনিসিয়া ও ক্যামেরুনের বাজিমাত

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর মাঠে প্রথম লেগে ১-১ ড্রয়ের পর ঘরের মাঠে দারুণ ফুটবল খেলল মরক্কো। ফিরতি লেগে ৪-১ গোলে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ অগ্রগামিতায় বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল তারা।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো মূল পর্বে উঠল মরক্কো।

আরেক লড়াইয়ে মালির মাঠে ১-০ গোলে জিতে অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিল তিউনিসিয়া। ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে কাতারের টিকেট কাটল তারা।

টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলবে তিউনিসিয়া। আর বৈশ্বির টুর্নামেন্টটিতে খেলার অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হলো মালির।

আফ্রিকা থেকে শেষ দল হিসেবে এবারের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে ক্যামেরুন।

তাদের মাঠে প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতে শক্ত অবস্থানে ছিল আলজেরিয়া। কিন্তু ফিরতি লেগে পাল্টে গেল সব হিসাব। ম্যাচ শুরুর ২২তম মিনিটে ক্যামেরুন এগিয়ে যাওয়ায় দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১-১।

নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচের ১১৮তম মিনিটে গোল করে লক্ষ্য পূরণের খুব কাছে পৌঁছে যায় আলজেরিয়া। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা চতুর্থ মিনিটে অলিম্পিক লিওঁর ফরোয়ার্ড কার্ল তোকো একাম্বি জালে বল পাঠালে উল্লাসে ফেটে পড়ে ক্যামেরুন।

ম্যাচটি তারা জিতে যায় ২-১ গোলে। আর দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ২-২ সমতায় থাকায় অ্যাওয়ে গোল বেশি করায় বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হয় ক্যামেরুনের।

রাশিয়া বিশ্বকাপে উঠতে ব্যর্থ হওয়া দলটি অষ্টমবারের মতো মূল পর্বে পা রাখল।