২০১৮ সালে ইতালির দায়িত্ব নেন মানচিনি। তার হাত ধরে ইউরো ২০২০ জেতার পথে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয়ে গড়া তার দলটি অন্যান্য প্রতিযোগিতায়ও নিজেদের মেলে ধরে দারুণভাবে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একটা সময় পর্যন্ত টানা অপরাজিত থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার পথে ভালোভাবেই ছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
সেখান থেকে শেষের কয়েকটি ম্যাচে খেই হারিয়ে ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপে সুইজারল্যান্ডের পেছনে থেকে রানার্সআপ হয় ইতালি।
বৈশ্বিক আসরে খেলতে এরপর ইতালিকে পার হতে হতো প্লে-অফের বাধা। কিন্তু বৃহস্পতিবারে প্লে-অফের সেমি-ফাইনালে নর্থ মেসিডোনিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে পর পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় মানচিনির দল।
ম্যাচের ধারার বিপরীতেই যোগ করা সময়ে গোল করে উৎসবে মেতে ওঠে নর্থ মেসিডোনিয়া। ৯২তম মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন আলেসান্দার ত্রাজকোভস্কি। অথচ ম্যাচ জুড়ে পরিষ্কার প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছে ইতালি। আক্রমণের ঢেউ তুলেও তাদের গোলের প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে বার বার।
নর্থ মেসিডোনিয়া প্রায় পুরোটা সময়ই ছিল ব্যস্ত ছিল রক্ষণ দুর্গ সামলাতে। কিন্তু গোলের খেলা ফুটবলে শেষ পর্যন্ত কাজের কাজটা করে ইতালির বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে দেয় তারা।
ম্যাচ শেষে রাই স্পোর্টকে মানচিনি বলেন, অভাবনীয় এই ঘটনার কোনো ব্যাখা নেই তার কাছে।
“ইউরো ২০২০ জেতাটা যেমন আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতা ছিল, এটি তেমনি সবচেয়ে বড় হতাশার। এখানে কিছু বলার কিছু নেই কারণ এটাই ফুটবল। এখানে মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে।”
“হয়তো আমাদের এখানে থাকার কথা ছিল না, আমরা ম্যাচটি জেতার জন্য সবকিছু করেছি। কিছু ম্যাচ এরকম থাকে, যা নিয়ে কথা বলা কঠিন।”
মানচিনির মতে, বাছাইয়ে ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত তাদের বাদ পড়ার পেছনে ভাগ্যও কিছুটা দায়ী।
“ইউরো জেতাটা একেবারেই প্রাপ্য ছিল, আমরা দারুণ ফুটবল খেলেছিলাম। তারপর সেই টুর্নামেন্টে পাওয়া আমাদের সৌভাগ্যের পরশগুলো দুর্ভাগ্যে পরিণত হলো, গত সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের সঙ্গে কিছু অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটল।”
“আমরা (বাছাইয়ে) গ্রুপে আধিপত্য বিস্তার করেছিলাম, আমাদের ভালো করার জন্য বিশেষ কিছু মুহূর্ত দরকার ছিল, কিন্তু তা আর হয়নি। আজকে মনে হচ্ছে, ৯২তম মিনিটে গোল হজম করাটাই হয়তো ঠিক। চমৎকার সব খেলোয়াড়ের দল এটি এবং তাদের জন্য আমার খারাপ লাগছে।”
নিজেদের ইতিহাসে ইতালি প্রথমবারের মত পরপর দুটি বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে মানচিনির ভবিষ্যৎ নিয়ে। এখনই অবশ্য তা নিয়ে ভাবছেন না ৫৭ বছর বয়সী এই কোচ। কঠিন সময়ে শিষ্যদের পাশে থাকাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
“আমরা দেখব (সামনে) কী হয়। আমি মনে করি সবাই এই মুহূর্তে এতটাই হতাশ যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে না। এটা বলতেই হবে, গত জুলাইয়ের (ইউরো ২০২০ জেতার পর) চেয়ে এখন ছেলেদের প্রতি আমার টান আরও বেশি। কঠিন একটি মুহূর্ত এটি, ওদের প্রতি আমার ভালোবাসা সীমাহীন।”
“এর পরে কী হবে, তা নিয়ে বলার সময় এখনও হয়নি, কারণ সবার মাঝে এক ধরনের হতাশা রয়েছে। তবে এটি দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের একটি দল, যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে।”