রিয়ালে কি তাদের শেষ?

সবশেষ ক্লাসিকোয় ভরাডুবির পর রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তির কৌশল, পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে ঢের। এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এদেন আজার, গ্যারেথ বেল, লুকা ইয়োভিচ ও মারিয়ানো দিয়াসকে নিয়ে। ক্লাসিকোয় দিয়াস খেলেছেন বদলি হিসেবে। ব্রাত্য হয়ে থাকা বাকিরাও কি বাতিলের খাতায় পড়ে গেছেন?

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2022, 11:25 AM
Updated : 23 March 2022, 12:32 PM

লা লিগায় গত রোববার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া ম্যাচের স্কোয়াডে ছিলেন না বেল। আজার ও ইয়োভিচ ছিলেন, কিন্তু জায়গা হয়েছিল বেঞ্চে। দিয়াস নেমেছিলেন বদলি হিসেবে।

রিয়াল কোচের কাছে এই চারজনের অবস্থান নেই আগের মতো। চারজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পেনের দৈনিক মার্কার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিভাবে তারা সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে অপাংক্তেয় হয়ে পড়ছেন।

বেলের প্রাধান্য ওয়েলস, মাদ্রিদ নয়

রিয়ালের সঙ্গে বেলের টানাপোড়েন চলছে অনেক দিন ধরে। ওয়েলসের এই ফরোয়ার্ডের দলছুট হওয়ার গুঞ্জন এর আগেও উঠেছে একাধিকবার। কিন্তু তিনি রয়ে গেছেন রিয়ালেই। তবে সক্রিয় নন আগের মতো।

চলতি মৌসুমের শুরুতে বেলকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আনচেলত্তি। ওই খেলোয়াড়কেও তখন কিছুটা উদ্যমী দেখা যায়। তবে সেই আশা জাগানিয়া অধ্যায়টা ছিল বড়ই সংক্ষিপ্ত। এই মৌসুমে প্রথম চোট পাওয়ার পর বিষয়টা এমন হযে ওঠে যেন তিনি নিজেকে আড়াল করতে শুরু করেছেন এবং কেবল ওয়েলসের হয়ে খেলাটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন বারবার।

এই সময়ে যেখানে জাতীয় দলের প্রায় সব ম্যাচ খেলেছেন, সেখানে রিয়ালের হয়ে খেলেছেন কালেভদ্রে। শোনা গেছে, ওয়েলসের হয়ে খেলে ক্লাবে ফেরার পর রিয়ালকে ৩০ হাজার ইউরো মেডিকেল বিল ধরিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেটা তুলেছিলেনও তিনি!

রিয়ালের জার্সিতে বেলের অনুপস্থিতি দিনকে দিন বেড়েছে। অগাস্টের পর মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এমনকি ক্লাসিকোর স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়ার পর ম্যাচটি দেখতে স্টেডিয়ামে দলের সঙ্গীও হননি বেল।

এই গ্রীষ্ম পর্যন্তই বেলের সঙ্গে চুক্তি আছে বেলের। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বেল-রিয়াল জুটির শেষটা সুখকর হবে না। বেলের ভবিষ্যৎ পরিষ্কার নয়, বিশেষ করে টটেনহ্যাম হটস্পার্সে তার ধারে খেলার সময়টুকু খুব ভালোভাবে যায়নি; স্পার্স নামে পরিচিত দলটির সেসময়কার কোচ জোসে মরিনিয়োও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনুশীলনে তার আচরণ ও নিবেদন নিয়ে।

ভিনিসিউস, রদ্রিগো ও আসেনসিওর ধারেকাছেও নেই আজার

রিয়ালের প্রতি আজারের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন নেই। বেলজিয়ামের এই ফরোয়ার্ড অনুক্ষণ অনুভব করেন নিজেকে প্রমাণের তাগিদ। কিন্তু কঠিন সত্যিটা হচ্ছে, যারা তার চেয়ে বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছে, তাদের মানে নেই আজার।

কোচের ভীষণ পছন্দের খেলোয়াড় আজার, কিন্তু এই ফরোয়ার্ডের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোট তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে এবং একই কারণে তার ধার কমে গেছে। চেলসিতে যেমনটা ছিলেন, তার তুলনায় রিয়ালে আজার নিজেকে খুব অল্পই মেলে ধরতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে ফরোয়ার্ডদের কাছে আনচেলত্তির যে প্রত্যাশা, তার খুব অল্পই পূরণ করতে পেরেছেন তিনি।

ইয়োভিচে হতাশ রিয়াল

রিয়ালের আগের কোচ জিনেদিন জিদানের কাছে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন ইয়োভিচ। মনে হচ্ছে, আনচেলত্তির কাছেও তার একই অবস্থা। সুযোগ পেলেও এই সার্বিয়ান কাজে লাগাতে পারছেন না। তাছাড়া অনুশীলনেও তিনি যথেষ্ট মনোযোগী নন এবং সতীর্থরাও তার কর্মকাণ্ডে খুশি নন।

গত বছর জানুয়ারিতে ইয়োভিচকে নতুন ঠিকানা বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল এবং আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টে ধারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে শুরুটা ভালোই হয়েছিল, কিন্তু বুন্ডেসলিগা মৌসুম শেষ করেছিলেন ১৮ ম্যাচে মাত্র ৪ গোল করে।

ইয়োভিচের প্রশ্নবোধক মনোভাবের কারণে যখন আনচেলত্তির সামনে কাউকে সুযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তখনও তিনি তাকাচ্ছেন অন্যদিকে। ক্লাসিকোতে যেমন করিম বেনজেমার অনুপস্থিতিতে রিয়াল কোচ আস্থা রাখতে পারেননি এই সার্বিয়ানের উপর। ফলে মানেটাও পরিষ্কার, মাদ্রিদে তার শেষের দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে…যদি কেউ তাকে দলে টানে…গত বছরও ইয়োভিচকে নিয়ে এই সমস্যা ছিল।

রিয়ালের মানের নয় দিয়াস

বার্সেলোনার বিপক্ষে ইয়োভিচের বদলে মারিয়ানো দিয়াসকে বেছে নিয়েছিলেন আনচেলত্তি, সুযোগ দিয়েছিলেন বদলি হিসাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দিয়াস কোচের কাছে প্রথম পছন্দের নন। তার অবস্থাও ইয়োভিচের মতোই।

রিয়ালে একাধিক কোচের অধীনে খেলেছেন দিয়াস, কিন্তু মুগ্ধতা ছড়াতে পারেননি। তিনি আবার ক্লাবও ছাড়তে চান না। রিয়াল প্রতি বছর তাকে বিদায় করতে চায়, কিন্তু তিনি থেকে যান!

রায়ো ভায়েকানোর প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও সেখানে তার পারিশ্রমিক বেশি হত। সেটা লুফে না নিয়ে রিয়ালে নিজের জায়গা জন্য লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছিলেন দিয়াস।

এ মৌসুমে তিনি যতগুলো ম্যাচ খেলেছেন, ততবার চোটে পড়েছেন। কিন্তু যখন দলে থাকেন অনুশীলনে ভালো করেন, তার মনোভাব নিয়েও কোনো বাঁকা প্রশ্ন নেই, কিন্তু তিনি স্রেফ রিয়ালের মানের নন।