‘রোনালদো একটা জিনিয়াস’

মোটেও ভালো যাচ্ছিল না সময়। থাবা বসিয়েছিল চোট। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছিল সমালোচনার তীর। কিন্তু ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ছিলেন স্থির, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ছিলেন তুড়ি মেরে পাল্টা জবাব দেওয়ার অপেক্ষায়। টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে সুযোগ মিলল। মেলে ধরলেন নিজেকে। সমালোচকদের পাল্টা জবাব দেওয়া, আরও একবার নিজের শ্রেষ্ঠত্ব মেলে ধরা রোনালদোকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তিরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2022, 12:57 PM
Updated : 13 March 2022, 01:14 PM

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শনিবার টটেনহ্যামের বিপক্ষে পাঁচ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানোর ম্যাচটি ৩-২ গোলে জেতে ইউনাইটেড। তিনটি গোলই করেন গোলমেশিন রোনালদো। এই হ্যাটট্রিকে তর্কসাপেক্ষে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার মুকুট এখন শোভা পাচ্ছে এই পুর্তগিজ ফরোয়ার্ডের মাথায়।

চূড়ার পথে রোনালদোর যাত্রা শুরু দ্বাদশ মিনিটে। ফ্রেদের ফ্লিকে বল পেয়ে একটু জায়গা বানিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে চোখ ধাঁধানো শটে ওপরের কোণা দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। গোলটি নিয়ে মুগ্ধতার শেষ নেই ইউনাইটেডের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও আটটি প্রিমিয়ার লিগ ছাড়াও আরও অনেক শিরোপা জেতা গ্যারি নেভিলের।

“ম্যাচে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ছিল সেনসেশনাল। চোটের কারণে গত সপ্তাহে বাইরে থাকার পর কী পাল্টা জবাবটাই না দিল। প্রথম গোলটা ছিল দুর্দান্ত। এই শো’য়ের তারকা রোনালদো। এটা বিশেষ একটা গোল।”

এক পর্যায়ে পয়েন্ট হারানোর শঙ্কাও পেয়ে বসেছিল ইউনাইটেডকে। কিন্তু শেষ দিকে আবারও দলের ত্রাতা রোনালদো। কর্নার থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করে জয়ের পাশাপাশি হ্যাটট্রিক পূরণের আনন্দে ডানা মেলেন তিনি। এ গোলটিও চমকে দিয়েছে নেভিলকে।

“এটা আমাকে চমকে দিয়েছে, অনেক মেধাবী ও দক্ষ কেউই পারে এমন দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করতে।”

“সে ভীষণ একমনা স্বভাবের। সে মনে করে, সে সর্বকালের সেরা এবং সে সবসময় খেলতে চায়। এই গোলগুলো সে করেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।”

একমনা, একগুঁয়ে রোনালদো এর আগেও পড়েছেন সমালোচকদের তোপের মুখে। পারফরম্যান্স দিয়েই জবাব দিয়েছেন প্রতিবার। রোনালদোর এই জবাব দেওয়ার ধরন ইউনাইটেডের হয়ে সাতটি লিগ ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা রয় কিনের দারুণ লাগে।

“রোনালদো সমালোচনার মুখে পড়েছিল, কিন্তু আজ রাতে সে যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল-এটা সে তার ক্যারিয়ারজুড়েই করে আসছে। দুর্দান্ত।”

“এই ক্লাবের পূনর্গঠনে তার বিশাল ভূমিকা আছে। যখন রোনালদো এমন পারফরম্যান্স করছে, তখন তাকে আপনার দলে প্রয়োজন।”

দিনে দিনে বয়স হয়ে গেছে ৩৭ বছর। কিন্তু বয়সকে স্রেফ সংখ্যা বানিয়ে অদম্য গতিতে ছুটে চলেছেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তবে ‘বয়সী’ রোনালদোকে একটু বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর পক্ষে কিন।

“সে কী এই মৌসুমে তার সেরা ছন্দে আছে? সম্ভবত না। কিন্তু, সে যখন খেলে, তখন দলের ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। সে যদি এক সপ্তাহ খেলে, এক সপ্তাহ বিশ্রাম নেয়, তাহলে সে ফল বয়ে আনবে।”

“এমন কিছু করা তার জন্য মুহূর্তের ব্যাপার। রোনালদো এই কাজটা বছরের পর বছর ধরে করে আসছে। এই মুহূর্তগুলো তৈরি করেছে। গোল করা ম্যাচের কঠিনতম অংশ। সেখানে এত বেশি গোল করা…আর কীই বা বলা যায়? সে একটা জিনিয়াস।”

অফিসিয়াল পরিসংখ্যানবিদদের হিসেবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন রোনালদো। সেই হিসেবে ৭৫৯ গোল নিয়ে শীর্ষে ছিলেন অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়ার (সেই সময়কার) ফুটবলার বিকান। গত বছরের জানুয়ারিতে তাকে টপকে যান রোনালদো।

ওই হিসেবেই পেলের গোল ৭৫৭টি। তবে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির মতে, তার অফিসিয়াল গোল ৭৬৭। গত বছর সেটাকেও ছাড়িয়ে যান তিনি।

আনঅফিসিয়াল পরিসংখ্যানবিদদের সংগঠন ‘আরএসএসএফ-এর মতে, ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় চেকোস্লোভাকিয়ার ক্লাব স্লাভা প্রাগে খেলা বিকানের গোল ৮০৫টি। টটেনহ্যামের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকে সেটাকেও টপকে গেছেন রোনালদো। তার গোল এখন ৮০৭।

অবশ্য সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড নিয়ে এখনও কিছুটা ‘কিন্তু’ আছে। গত বছরেই চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে যে বিকানের ক্যারিয়ার পুনরায় পর্যালোচনা করে তারা এই স্ট্রাইকারের গোল পেয়েছেন ৮২১টি! সেক্ষেত্রে চূড়ায় বসতে আরও কিছুটা পথ এগোতে হবে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারকে।

রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির গোল ৭৫৯টি। আর্জেন্টিনার হয়ে ৮০টি, বার্সেলোনার জার্সিতে ৬৭২টি এবং বর্তমান ক্লাব পিএসজির হয়ে এ পর্যন্ত সাত গোল করেছেন এই তারকা ফরোয়ার্ড।