সবার আগে মনে পড়ে, ঠিক পাঁচ বছর আগে বার্সেলোনার মাঠে দলটির সেই ছয় গোলের ভরাডুবি। ২০১৬-১৭ আসরে সেবারও শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ৪-০ গোলে জিতে চালকের আসনে ছিল পিএসজি। কিন্তু ফিরতি পর্বে কাম্প নউয়ে গিয়ে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে ছিটকে যায় টুর্নামেন্ট থেকে।
২০১৭ সালে ৮ মার্চের সেই ম্যাচে নির্ধারিত সময় শেষের আগমুহূর্তে চতুর্থ গোল হজম করার পরেও লড়াইয়ে ভালোভাবেই ছিল পিএসজি। কিন্তু যোগ করা সময়ে আরও দুটি গোল খেয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে তারা। বার্সেলোনার সেই মহাকাব্যে নায়ক ছিলেন নেইমার। পিএসজির এবারের ব্যর্থতায় ব্রাজিলিয়ান তারকা ছিলেন একরকম নিজের ছায়া হয়ে।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে মাঠে নামার আগে পিএসজির ঝুলিতে ছিল গত মাসের প্রথম লেগে পাওয়া ১-০ গোলের জয়। ফিরতি দেখায় প্রথমার্ধে মিলে যায় আরেক গোল। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তখন পুরোটাই তাদের দখলে। সেখান থেকে শেষ ৩০ মিনিটে যা হলো, যেভাবে রিয়াল মাদ্রিদ পট পাল্টে দিল, ১৭ মিনিটের হ্যাটট্রিকে প্রত্যাবর্তনের যে মঞ্চ গড়ে দিলেন করিম বেনজেমা-সবকিছুই বিস্ময়কর।
তাদের ওই দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়ানোর মাঝে পিএসজির হুড়মুড় করে ভেঙে পড়াটাও আলাদা নজর কাড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাদের ব্যর্থতার তথ্য ঘাটলে অবশ্য মনে হয়, কাম্প নউয়ের সেই ভরাডুবি আর বের্নাবেউয়ে এই বিধ্বস্ত হওয়াটা যেন এক সুতোয় গাঁথা। উদাহরণ আছে এর মাঝেও।
এমন জোরাল আঘাত কাটিয়ে উঠতে কতটা সময় লাগবে, জানেন না পিএসজি কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনো।
“আমরা কিছু ভুল করেছি, ভুল করিনি এমনটা আমরা বলতে পারব না। সবচেয়ে খারাপ লাগাটা হলো, আমরা (অনেকটা সময় ধরে) তুলনামূলক ভালো দল ছিলাম।”
“আগামী কয়েক সপ্তাহ সহজ হবে না।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে প্রথম লেগে জয় পাওয়া ৯টি লড়াইয়ে এই নিয়ে চারবার ছিটকে গেল পিএসজি। এর তিনটিই হলো গত ছয় মৌসুমে।
কাম্প নউ বিপর্যয়ের দুই বছর পর আবারও শেষ ষোলোয় এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় প্যারিসের দলটির। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে প্রথম লেগে ২-০ গোলে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘরের মাঠে খেলতে নামে তারা।
স্কোয়াডে তারকার ছড়াছড়ি থাকলেও দলগতভাবে তা কতটা কার্যকর হবে, সেটা আবারও ভেবে দেখার সময় এসেছে পিএসজির।
এমবাপে, নেইমাররা তো আগে থেকেই ছিলেন। মৌসুমের শুরুতে ক্লাবটি আরও দলে টানে লিওনেল মেসি, সের্হিও রামোস, গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মাদের।
দলে এত বেশি তারকা যে, দারুণ সফল গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে পর্যন্ত বেঞ্চে সময় কাটাতে হয়। রামোসের মতো অভিজ্ঞ সেন্টার-ব্যাক মাসের পর মাস চোটে বাইরে থাকলেও এই পজিশনে তারকাঘাটতি হয় না। কিন্তু ফলাফলের বিচারে?
স্কোয়াড এত বেশি সমৃদ্ধ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ যোগ হয়। এই বিষয়ে মৌসুমের শুরুতে পচেত্তিনো কয়েকবার বলেছিলেন, এখন তাদের মূল চ্যালেঞ্জ সবাই মিলে একটা দল হয়ে ওঠার এবং দলগতভাবে নিজেদের মেলে ধরার।
কেবল আক্রমণভাগকেই দায়ী করা যাচ্ছে না। শেষ ৩০ মিনিটে দলটির মাঝমাঠ বলতে যেন কিছুই ছিল না। আর রক্ষণ তো পুরোটাই ভেঙে পড়ে। গোলরক্ষক দোন্নারুম্মার অমার্জনীয় ভুলে ম্যাচে ফেরে রিয়াল। তাদের শেষ দুই গোলে দায় আছে মার্কিনিয়োসের। বেনজেমার নিচু শটে বল তার পায়ে লেগে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। আর তার উপহারস্বরূপ বল পেয়েই ব্যবধান গড়ে দেন বেনজেমা।
পিএসজির বারবার এমনভাবে পথ হারানোর পর একটা ভাবনা তাই ঘুরে ফিরে আসছে, বড় মঞ্চে চাপে পড়লেই কী ভেঙে পড়ে তারা? ভিন্ন মত থাকতেই পারে, তবে আপাত দৃষ্টিতে ফলের বিচারে সেটাই বড় সত্যি বলে মনে হচ্ছে।
ম্যাচ শেষে রিয়ালের জয়ের নায়ক বেনজেমার কণ্ঠেও তাই শোনা যায়।
“যারা পেছন থেকে বল সামনে বাড়িয়ে আক্রমণে উঠতে চায়, (চাপের মুখে) এই সমস্যা সেই সব দলের হয়। যখন ওদের চেপে ধরা হয়, তখন ওরা সমস্যায় পড়ে যায়।”