আপন ঠিকানায় ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে কিংস

চারধারে চলছে কর্মযজ্ঞ। এখনও সবকিছু গুছিয়ে ওঠা হয়নি পুরোপুরি। তবে সবুজ মাঠ নজর কাড়ছে সবার। লাল রংয়ের ব্যানার-বোর্ডের ভিড়ে মাঠটি যেন আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। রাত পেরুলে এই আঙিনায় খেলতে নামবে বসুন্ধরা কিংস। বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজেদের মাঠে খেলার ঈর্ষণীয় ইতিহাস লিখবে দলটি!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2022, 11:20 AM
Updated : 16 Feb 2022, 11:27 AM

পুলিশ এফসির বিপক্ষে বৃহস্পতিবার লিগের চতুর্থ রাউন্ড শুরু করবে কিংস। মাঠে নামতেই ইতিহাসে চিরদিনের জন্য ‘প্রথম’ হয়ে যাবে দলটি। কেবল নিজেদের মাঠ না থাকার কারণে ইতিহাসের এই পাতায় বয়সে, ঐতিহ্যে, ধারে-ভারে যোজন-যোজন এগিয়ে থাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী লিমিটেডের মতো এমন অনেক ক্লাব কিংসের পেছনে পড়ে যাবে।

মূলত বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের একটি অংশ এই কিংস অ্যারেনা। কী নেই এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে? ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, ভলিবল মাঠ হবে। আর্চারি-শুটিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। আধুনিক জিমনেশিয়াম, যোগ ব্যায়ামের জন্য জায়গাও রাখা হয়েছে। হবে ক্রিকেট মাঠও। থাকবে ওয়াটার পার্ক, কিডস জোন। মহিলা ফুটবলারদের জন্য থাকবে ‘ডেডিকেটেড’ স্টেডিয়ামও।

২০১৯ সালের শুরুতে অবশ্য পরিকল্পনা ছিল ‘ছোটখাট’, ৫৫ বিঘা জমিতে হবে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ও ফুটসাল ও ইনডোর স্টেডিয়াম। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, পরিকল্পনা ও খরচের পরিধিও বেড়েছে সমানতালে! সবশেষে ৩০০ বিঘায় ঠেকেছে কমপ্লেক্সের আয়তন। আনুমানিক খরচ দাঁড়াবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা!

৫০ বিঘা জমির ওপর এই বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা। সাত স্তর বিশিষ্ট মাঠের উপরভাগে লাগানো হয়েছে দেশি দূর্বাঘাস। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও আধুনিক। কিংস সভাপতি ইমরুল হাসানের দাবি, সারারাত বৃষ্টি হলেও জমবে না পানি।

আপাতত সাত হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা আছে। মূল পরিকল্পনায় আসন সংখ্যা রাখা হয়েছে ১৪ হাজার। অবশ্য প্রয়োজন পড়লে আরও আসন যোগ করা হবে বলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানালেন দলটির সভাপতি ইমরুল হাসান।

ইমরুল আরও জানালেন অন্যরকম গর্ব অনুভব করার কথা। নানা জটিলতায়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) লিগের ভেন্যু নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদলে গর্বের সেই অনুভূতি উবে যেতে বসেছিল! ‘হোম ভেন্যু’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার কণ্ঠেও মিশে থাকল আবেগ, শুরুর শঙ্কার মেঘ সরে যাওয়ার স্বস্তিও।

“আসলে পেশাদার লিগের প্রথম শর্ত হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ হবে। সুতরাং হোম ম্যাচে হোম টিম সুবিধা পাবে, আমরাও সেটা পাব। শেষ পর্যন্ত বাফুফে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের শুরুতে যে ভুলটুকু ছিল, তা শুধরে নিয়েছে। আপাতত ৭ হাজার, সব মিলিয়ে ১৪ হাজার আসন রাখা হয়েছে। আসন সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগও রাখা হয়েছে। বাড়াতে হলে বাড়ানো হবে।”

“দেশের প্রথম দল হিসেবে নিজেদের মাঠে খেলবে কিংস, এটা আমাদের জন্য ভীষণ গর্বের। ২০১৯ সালে যখন আমরা এর কাজ শুরু করি, তখন থেকে একেকটা দিন কাজ এগিয়েছে এবং আমাদের ভেতর অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে। এখন এই মাঠ পূর্ণতা পাওয়ার অপেক্ষায়। এই অনুভূতি অন্যরকম।”

ড্রেসিং রুম, মিডিয়া ট্রিবিউন, ব্রডকাস্টারদের রুম, ম্যাচ শেষে আইসবাথ নেওয়ার ব্যবস্থা, আলাদা অনুশীলন ভেন্যু, মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের সব সুবিধাই রাখা আছে কিংস অ্যারেনায়। ইমরুল জানালেন, কেবল ঘরোয়া ফুটবলের নয়, আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের স্বপ্নও আছে তাদের।

“আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের গর্ব করার মতো বেশি কিছু নেই। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেও আমাদের এই কমপ্লেক্স নিয়ে আর্টিকেল লেখা হয়েছে। আমরা আশা করি, এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে তুলে ধরব।”

“এখানে আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা রাখা হয়েছে, এশিয়ারই গুটিকয়েক ক্লাবে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। তিন-চার মাসের মধ্যে ফ্লাড লাইট বসবে। এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব। আগামী মৌসুমে এখানে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ আপনারা দেখতে পারবেন।

এবার এএফসি কাপ এখানে হবে না, এবার সিলেটে ভেন্যু করার জন্য আমরা আবেদন করেছি। ইনশাল্লাহ আগামী মৌসুমে এখানে হবে।”

আরও একটি চাওয়া আছে কিংস সভাপতির। ঘরোয়া ফুটবলের আর কোনো ক্লাবের নিজস্ব মাঠ নেই। তাদের দেখে যেন বাকিরাও ‘হোম ভেন্যুতে’ খেলার স্বাদ নিতে উৎসাহী ও উদ্যোগী হয়।

“নতুন দল হিসাবে আমরা যে মাঠ করেছি, ঐতিহ্যবাহী দলগুলো তাদের কাজগুলো (নিজেদের মাঠ) করবেন। কিংস অ্যারেনা তাদেরকে সেটা করতে উদ্বুদ্ধ করবে। আমরা শুনেছি আবাহনী শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। আশা করি, অন্য সব ক্লাবও উদ্যোগী হবে, তাহলে আমাদের ফুটবলের উন্নতি হবে।”

এরই মধ্যে কিংসের সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। কেবল নিজেদের সমর্থক নয়, ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও দারুণ ব্যবস্থা রেখেছে তারা। টিকেট কিনলে শাটল বাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট থেকে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হবে; ম্যাচ শেষে আবারও পৌঁছেও দেওয়া হবে!

সব মিলিয়ে সমর্থকদের দুহাত বাড়িয়ে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কিংস অ্যারেনা।