শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় উঠে উন্মাতাল সেনেগাল

সাদিও মানের শট গোললাইন পেরিয়ে যেতেই শুরু হয় উৎসব। বাঁধভাঙা উল্লাসে নিজ নিজ জায়গা থেকে শামিল হন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে মাঠে থাকা দর্শক আর দেশবাসী। উদযাপনে বাদ ছিলেন না কেউই। অর্জনও তো কম বড় নয়। ছয় দশকের অপেক্ষার মধুর সমাপ্তি ঘটিয়ে মাথায় উঠল আফ্রিকার ফুটবলের মুকুট। আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেতে এই যথেষ্ট। মহামারীর কঠিন সময়ে আফ্রিকান নেশন্স কাপের শিরোপা সেনেগালের জন‍্য এলো দ্বিগুণ খুশির উপলক্ষ‍ হয়ে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2022, 10:30 AM
Updated : 7 Feb 2022, 10:30 AM

ম‍্যাচ শেষ হওয়ার পর লম্বা সময় ধরে ক‍্যামেরুনের রাজধানীতে চলছিল মানেদের নাচ, গান। পদক গলার পরার সময়ও অনেকে এক পাক নেচে নিচ্ছিলেন। না থেকেও যেন তাদের সঙ্গে ছিলেন দেশের মানুষ। তারা ভীড় করেন সমুদ্র সৈকতে। থেমে থেমে সেখানে চলছিল হর্ষধ্বনি। গাড়ির হর্ন বাজছিল মুহুর্মুহু, সঙ্গে ছিল আতশবাজি।

সেনেগালের এখন দুঃখ ভোলার দিন। অনেক দিন ধরে আফ্রিকার বড় শক্তি হলেও কিছু জিততে পারছিল না তারা। প্রত‍্যাশার সঙ্গে মিলছিল না প্রাপ্তির হিসেব। রোববারের ফাইনালে রেকর্ড সাতবারের চ‍্যাম্পিয়ন মিশরকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারানোর পর তাই প্রতিক্রিয়া হলো বিস্ফোরনের মতো।

রাস্তায় নেমে এলেন হাজারো মানুষ, রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে চিৎকার করে জানান দিলেন তারা আফ্রিকার সেরা। চেনা-অচেনা মানুষকে জড়িয়ে ধরলেন, ছিল খুশির কান্নাও। দ্রুত গতির গাড়ির খোলা ছাদ দিয়ে উড়ছিল পতাকা। তাদের সবার মনের কথাই যেন উঠে এলো ৩১ বছর বয়সী ব‍্যবসায়ী পাপে মালিক দিবার কথায়।

“সেনেগাল অনেক ট্রফি হারিয়েছে ফাইনালে। এটা যেন মুক্তি, অবশেষে আমরা এটা জিতলাম।”

ডাকারের একটি ফ‍্যান জোনে খেলা দেখছিলেন তিনি, জয় উদযাপন করছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে নেচে গেয়ে। জনাকীর্ণ সেই জায়গায় টিভি স্ক্রিন দেখাই ছিল কঠিন। এবারের দলটিকে নিয়ে তাদের প্রত‍্যাশা ছিল অনেক বেশি। ২০১৯ সালের ফাইনালে আলজেরিয়ার কাছে হেরে যাওয়া সেনেগাল এবার টুর্নামেন্ট শুরু করে ফেভারিট হিসেবে।

ইউরোপের শীর্ষ লিগে বড় বড় দলে খেলা ফুটবলারে সমৃদ্ধ দলটির সবচেয়ে বড় তারকা নিশ্চিতভাবেই লিভারপুল ফরোয়ার্ড মানে। ম‍্যাচের শুরুতেই পেনাল্টি মিস করে খলনায়ক হতে বসেছিলেন তিনি। শেষ পর্যস্ত টাইব্রেকারে তার গোলেই মিশরের হৃদয় ভেঙে শিরোপা জেতে সেনেগাল।

শিরোপার লড়াইয়ে সেনেগালের ধারাবাহিক ব‍্যর্থতার চক্র ভাঙল এই জয়। ২০০২ সালে একটুর জন‍্য আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে যেতে পারেনি তারা। অতিরিক্ত সময়ে হেরে যায় তুরস্কের বিপক্ষে। সেই বছর তারা আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সের ফাইনালেও হারে।

২০১৮ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় নতুন নিয়মে। গ্রুপ প্রতিদ্বন্দ্বী জাপানের চেয়ে বেশি কার্ড দেখায় ছিটকে যায় তারা। সে সব স্মৃতি এখন ভুলে যেতে পারে সেনেগাল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ‍্যানেলে সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম‍্যাকি সাল বললেন তেমনটাই।

“খুশির সঙ্গে চোখের জল, কারণ এটা ঐতিহাসিক জয়। ৬০ বছর ধরে আমাদের দেশ এর সন্ধানে ছিল। আজ আমরা তা খুঁজে পেয়েছি।”