ক্যামেরুনের ওলেম্বে স্টেডিয়ামে রোববার রাতে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও খেলা গোলশূন্য থাকলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলে জিতে প্রথম শিরোপার উচ্ছ্বাসে ভাসে সেনেগাল।
২০০২ ও সবশেষ ২০১৯ আসরের রানার্সআপ সেনেগাল তৃতীয় চেষ্টায় পারল। ঘরে নিল আফ্রিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি।
মহামারীকালে কঠিন এক অবস্থায় হয়েছে এবারের আফ্রিকান নেশন্স কাপ। সেখানে প্রাণবন্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে সেনেগাল। আর মিশর যেন বারবার ম্যাচ টেনে নিতে চেয়েছে টাইব্রেকারে। নকআউট পর্বের শুরু থেকে তাদের টানা চার ম্যাচই গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। এর তিনটির নিষ্পত্তি হলো টাইব্রেকারে।
আগের দুইবার গোলরক্ষকের বীরত্ব আর নিজেদের সবাই জালের দেখা পাওয়ায় জয়ের খুশিতে মাঠ ছাড়ে মিশর। এবার চোখের জলে বিদায় নিতে হলো মোহামেদ সালাহদের।
সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন গোলরক্ষক মোহামেদ আবু গাবাল। মূল ম্যাচে মানের স্পট কিক ঠেকানোর পর টাইব্রেকারে ফেরান বোনা সারের শট। সেনেগালের হয়ে কালিদু কলিবালি, আব্দু দিয়ালো, বাম্বা ও মানে জালের দেখা পান। বেশির ভাগ শটেই ঠিক দিকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মিশরের গোলরক্ষক।
এর আগে মূল ম্যাচে সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত সেনেগাল। কিন্তু সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে দুই শট ঠেকিয়ে মিশরকে ফাইনালে নেওয়া গোলরক্ষক আবু গাবাল ঠেকিয়ে দেন মানের বুলেট গতির স্পট কিক।
তরুণ ডিফেন্ডার আব্দেলমোনেম ফরোয়ার্ড মানেকে ফাউল করায় পেনাল্টি পেয়েছিল সেনেগাল। লিভারপুলে দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলায় মোহামেদ সালাহ বেশ ভালো করেই জানেন মানেকে। তিনি শট নেওয়ার আগে গোলরক্ষককে পরামর্শ দিতে দেখা যায় মিশরের তারকা স্ট্রাইকারকে।
সালাহ এগিয়ে গিয়ে মানেকেও কিছু একটা বলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি শট নেন জোরেই, কিন্তু গোলরক্ষকের থেকে যথেষ্ট দূরে রাখতে পারেননি। ঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন দেন আবু গাবাল, পোলিশ স্ত্রীর জন্য যিনি নিজের নাম বেছে নিয়েছেন গাবাস্কি।
২৮তম মিনিটে সালাহর দারুণ কারিকুরিতে সুযোগ আসে মিশরের সামনে। তিনি কয়েকজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢোকার কঠিন কাজটা করেন অনায়াসে। কিন্তু এরপর গোলরক্ষক বরাবর দুর্বল শট নিয়ে হতাশ করেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে দুই দলই কিছু হাফ-চান্স তৈরি করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি কেউই।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক শুরু করে সেনেগাল। ভীতি ছড়ায় মিশরের রক্ষণে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশা বাড়ায় তারা।
বল দখলে পিছিয়ে না থাকলেও আক্রমণ গড়া ও সুযোগ তৈরি করায় বেশ পিছিয়ে ছিল মিশর। খেলার ধারার বিপরীতে ৭৪তম মিনিটে সুযোগ পেয়ে যান মারওয়ান হামদি। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে সবার ওপরে লাফিয়ে তিনি হেড নেন ঠিকই, কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
১১৬তম মিনিটে বাম্বার দূরপাল্লার শট আবার কর্নারের বিনিময়ে ফেরান আবু গাবাল। এদিন তিনি যেন ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। পরের মিনিটে অন্য প্রান্তে বুলেট গতির শট ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠান সেনেগালের গোলরক্ষক এদুয়াঁ মঁদি।
১২০ মিনিটে খুব বেশি পরীক্ষা দিতে না হলেও টাইব্রেকারে মঁদি ছড়ালেন আলো। খলনায়ক হতে হতে নায়ক হলেন মানে। শেষ হলো সেনেগালের অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের অপেক্ষা।