২০১৬ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগে রানার্সআপ হয়ে ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসে সাইফ স্পোর্টিং। ২০১৭-১৮ মৌসুমের লিগে চতুর্থ হয় তারা। পরের লিগেও অবস্থান একই। ২০১৯-২০ মৌসুমে এক ধাপ অবনমন। গত লিগে আবার তারা উঠে আসে চতুর্থ স্থানে। লিগে মোটামুটি এই চারের চক্করেই আটকে আছে দলটি।
কেবল লিগ নয়, ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে এখনও কোনো শিরোপার স্বাদ পায়নি সাইফ স্পোর্টিং। ২০২০-২১ মৌসুমে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলাই দলটির সেরা সাফল্য।
নতুন মৌসুমে দুই প্রতিযোগিতার মধ্যে স্বাধীনতা কাপের সেমি-ফাইনালে তারা আবাহনীর কাছে হারে ২-০ গোলে। এরপর ফেডারেশন কাপেও সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে আবাহনীর কাছে হেরে যায় ৪-৩ গোলে।
গত লিগে সেরা চারে থাকা দলগুলোর মধ্যে সাইফ স্পোর্টিংয়ের হার ছিল তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি। শিরোপা জয়ী বসুন্ধরা কিংস হেরেছিল স্রেফ মাত্র এক ম্যাচ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের হার ছিল দুটি, তৃতীয় স্থানে থাকা আবাহনীর হার তিনটি। সেখানে সাইফ হারে আট ম্যাচ!
এই আট হারের দুটি ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে, যারা লিগ শেষ করেছিল পঞ্চম স্থানে। একটি ছিল ষষ্ঠ হওয়া মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিপক্ষে ব্যবধান ৩-০ করার পর সাইফ স্পোর্টিংয়ের আসরোর গফুরভের সঙ্গে সাজ্জাদ হোসেনের (ডানে) উল্লাস। ছবি: বাফুফে
৩৭টি গোল ঢুকেছিল তাদের জালে। লিগের ১৩ দলের মধ্যে যা ছিল পঞ্চম সর্বোচ্চ। তাদের চেয়ে বেশি গোল হজম করা দল ছিল আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব (৬৬টি), উত্তর বারিধারা (৬৩টি), ব্রাদার্স ইউনিয়ন (৫১টি) ও বাংলাদেশ পুলিশ (৩৯টি)।
ক্রুসিয়ানি দলের দায়িত্ব নিয়েছেন গত অক্টোবরে। ৫৫ বছর বয়সী এই কোচের কাছে বাংলাদেশের ফুটবল অচেনা নয় মোটেও। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ জাতীয় দল ২০০৫ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছিল রানার্সআপ। পরে ক্রুসিয়ানি কোচের দায়িত্বে ছিলেন ঘরোয়া ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনীরও।
সাইফের কোচ হওয়ার পর দলে লাতিন ফুটবলের দর্শন ছড়িয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাননি ক্রুসিয়ানি। তবে অল্প সময়ে দলটিকে গুছিয়ে নিয়েছেন বেশ। স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনাল খেলতে পারায় সেটিরই প্রমাণ।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া লিগের প্রস্তুতি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ক্রুসিয়ানিও তুলে ধরলেন দলের শক্তি-দুর্বলতার নানা দিক।
“আমাদের প্রস্তুতি ভালো। দলের কারও বড় কোনো ইনজুরি নেই, দু-এক জনের ছোটখাট একটু চোট আছে, সেগুলো মোটেও গুরুতর নয় এবং আশা করি, লিগের আগে তারা পুরোপুরি সেরে উঠবে।”
“আমাদের শক্তির জায়গা হচ্ছে, গোলের সুযোগ তৈরি করার মতো খেলোয়াড় আমাদের আছে। আবার দুর্বলতার জায়গাটাও এখানেই, আমরা সুযোগ নষ্ট করি। এখন এই দিকটা নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং এখানে পরিবর্তন আনতে পারব বলে আমি আশাবাদী।”
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূইয়ার বাহুতেই সাইফ স্পোর্টিংয়ের আর্মব্যান্ড। দলটিতে আছে ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান রাফি, ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের মতো তরুণ তুর্কি। সদ্য শেষ হওয়া ফেডারেশন কাপে সাইফের পোস্টের নিচে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ছিলেন পাপ্পু হোসেন। সব মিলিয়ে লিগে আলো ছড়ানোর মতো পর্যাপ্ত রসদই মজুদ আছে দলটিতে।
ক্রুসিয়ানি তাই আপাতত ‘ফাইন-টিউনে’ মনোযোগী। স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনালে খেলা থেকেও নিচ্ছেন অনুপ্রেরণা। লিগের লক্ষ্য পূরণে এগুতে চান ধাপে-ধাপে।
“আমার, দলের এবং অবশ্যই ক্লাবের লক্ষ্য লিগ শিরোপা জয়, কিন্তু আমি সবসময় সামনের ম্যাচটি নিয়েই ভাবতে চাই। পরেরগুলো নিয়ে পরে ভাবা যাবে। ধাপে ধাপে চিন্তা করতে চাই।”
“আমি মনে করি না, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে আমরা ব্যর্থ ছিলাম। দুটি টুর্নামেন্টেই আমরা ভালো খেলেছি এবং মাত্র দুই মাসের অনুশীলনে আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছি, সেটা অর্জন করতে পেরেছি এবং ফেডারেশন কাপে আমরা ফাইনাল খেলার খুবই কাছাকাছি ছিলাম।”