২০০৭ সালে প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের ত্রয়োদশ আসর। সর্বোচ্চ ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন এখানে আবাহনী। তবে এই রেকর্ডের সুখস্মৃতিতে পলি পড়ে গেছে বেশ আগেই। সবশেষ শিরোপার স্বাদ আকাশী-নীলরা পেয়েছিল ২০১৭-১৮ মৌসুমে।
গত লিগ তো আবাহনীর ভালো কাটেনি একদমই। শুরু থেকে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা বসুন্ধরা কিংসের জন্য কখনোই তারা দুর্ভাবনার কারণ হয়ে উঠতে পারেনি। মূলত ২৪ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতে ড্র করেই সর্বনাশ হয়েছিল তাদের। সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারেনি তারা। প্রায় সব বড় প্রতিপক্ষের সঙ্গেই পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল লেমোসের দল। চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ব্যবধান ছিল ১৮ পয়েন্টের!
২৪ ম্যাচে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগের সেরা হয়েছিল কিংস। ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়েছিল আবাহনী।
২০২১-২২ মৌসুমের শুরুটা আবাহনী করে সব শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে তো বটেই, শিরোপার সঙ্গেও নিজেদের দুরত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়ে। কিংসকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে স্বাধীনতা কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ঘটনাবহুল ফেডারেশন কাপেও তারা অপরাজেয়। ফাইনালে লেমোসের দল ২-১ গোলে জেতে টুর্নামেন্টের চমক রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটির বিপক্ষে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আবাহনীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এ মৌসুমে এসে যেন দুহাত ভরে পাচ্ছেন লেমোস। তবে এই সাফল্যে তিনি উড়ে যাচ্ছেন না। বরং পা রাখছেন বাস্তবতার কঠিন জমিনে।
“আমরা লিগ শিরোপা জয়ের চেষ্টা করব। নিশ্চিতভাবেই এই চাওয়া পূরণ সহজ নয় মোটেও। লিগ দীর্ঘ একটা প্রতিযোগিতা; সব মিলিয়ে ২২টি ম্যাচ খেলতে হবে। দীর্ঘ এই পথচলায় অনেক কিছু হতে পারে। তবে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, লিগ শিরোপা জয়ের জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
গত লিগে তৃতীয় হলেও একটি জায়গায় তারা ছিল সবার ওপরে। গোলের জন্য হাপিত্যেশ করতে হয়নি আবাহনীকে। সর্বোচ্চ ৬৫ গোল দিয়েছিল তারাই।
সেবার ১৭ গোল করা কেরভেন্স ফিলস বেলফোর্ট ও ৯ গোল করা সানডে চিজোবা চলে যাওয়ায় আক্রমণভাগ নিয়ে দুর্ভাবনার অবকাশ অবশ্য ছিল। তবে নতুন মৌসুমে দলে আসা কোস্টারিকার দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা, ব্রাজিলিয়ান দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো আকাশী-নীলদের সে দুঃশ্চিন্তা উড়িয়ে দিয়েছেন।
স্বাধীনতা কাপ আর ফেডারেশন কাপে দোরিয়েলতন ও কলিনদ্রেসের গোল যথাক্রমে ৪টি ও ৩টি করেন। রহমতগঞ্জের ফিলিপ আজাহর সঙ্গে দোরিয়েলতন ফেডারেশন কাপে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ গোলাদাতা।
দুই আসরে দুটি করে গোল করেন আরেক ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্তো সান্তোস দি সিলভা। গত দুই আসরে মূলত রাফায়েলই তৈরি করে দিয়েছেন আবাহনীর অধিকাংশ আক্রমণ। গোল পাচ্ছেন স্থানীয় ফরোয়ার্ড নাবীব নেওয়াজ জীবনও। আক্রমণ ভাগ নিয়ে তাই আবাহনী নিশ্চিন্তই থাকতে পারে।
রেজাউল করিম, নুরুল নাঈম ফয়সাল ও টুটুল হোসেন বাদশার সঙ্গে ইরানি ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ সোলাইমানি যোগ হওয়ায় দলের রক্ষণও বেশ জমাট। পোস্টের নিচে আস্থা হয়ে আছেন শহীদুল আলম সোহেল। ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে সাইফ স্পোর্টিংয়ের জামাল ভূইয়া ও এমফন উদোহর শট আটকে তিনি ছিলেন দলের জয়ের নায়ক।
লিগ শুরুর আগে অবশ্য পুরো শক্তির দল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী লেমোস। বরাবরের মতোই দলীয় শক্তিতে আস্থা রাখছেন ৩৫ বছর বয়সী এই কোচ।
“কিছু চোট সমস্যা নিয়ে এখনও দুর্ভাবনা আছে। রাফায়েল, হৃদয় ও ত্রিপুরা চোট পেয়েছে। আশা করি, লিগ শুরুর আগেই সবাই পুরোপুরি সেরে উঠবে।”
“মৌসুমের প্রস্তুতির জন্য আমরা মাত্র দুই মাস সময় পেয়েছি। এরই মধ্যে যতটুকু পেরেছি, গুছিয়ে নিয়েছি। উন্নতির জায়গা সবসময়ই থাকে। আমি অনুভব করি, একটা দল হিসাবে আমরা আরও উন্নতি করতে পারি। বল পজিশনে আরও এগিয়ে থেকে, আরও বেশি সুযোগ তৈরি করে ম্যাচে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি।”
প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর লিগ, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ-এই তিন শিরোপা এক মৌসুমে কখনও জেতা হয়নি আবাহনীর। এবার হাতছানি আছে স্বপ্নের এই ট্রেবল-এর। লেমোস বরাবরের মতোই আশাবাদী এবং নির্ভার!
“কোনো বাড়তি চাপ নিচ্ছি না। আবাহনী সবসময় সবকিছু জিততে চায় এবং লিগের ক্ষেত্রেও সে চাওয়ার কোনো ব্যতীক্রম হবে না। স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের জয় আমাদেরকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করেছে, কিন্তু লিগ জিততে হলে আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে।”