নাটকীয় লড়াইয়ে বার্সাকে হারিয়ে ফাইনালে রিয়াল

দীর্ঘ ১০ মাস পর মৌসুমের শুরুতে ফিরে লা লিগায় পাঁচ ম্যাচে করেছিলেন তিন গোল। আরেক দফা চোটে ছিটকে পড়ার দুই মাস পর ফিরেই জালের দেখা পেলেন আনসু ফাতি। এই গোলেই দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। তবে অতিরিক্ত সময়ে আর পেরে ওঠেনি তারা। রোমাঞ্চ ছড়ানো ক্লাসিকোয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ।   

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 09:34 PM
Updated : 12 Jan 2022, 10:06 PM

সৌদি আরবের রিয়াদে এক লেগের সেমি-ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। নির্ধারিত সময়ের স্কোরলাইন ছিল ২-২।

জমজমাট লড়াইয়ে প্রথমার্ধে দুই দলই একটি করে গোল করে। ভিনিসিউস জুনিয়রের গোলে বার্সেলোনা পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন লুক ডি ইয়ং। করিম বেনজেমা আবারও রিয়ালকে এগিয়ে নেওয়ার পর আরেক দফায় সমতা টানেন ফাতি। আর অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন ফেদে ভালভেরদে।

পালাবদলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া বার্সেলোনার মৌসুমের শুরু থেকেই মাঠের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। তাদের পারফরম্যান্স মন ভরাতে পারছে না ফুটবলপ্রেমীদের। তবে চিরপ্রতিদ্বিন্দ্বীদের সামনে পেয়ে ঠিকই আলো ছড়াল লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের ছয় নম্বরে থাকা দলটি।

১২০ মিনিটের লড়াইয়ে গোলের উদ্দেশ্যে বেশি শট নেয় বার্সেলোনাই; ২০ শটের ছয়টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। আর রিয়ালের ১৪ শটের আটটি ছিল লক্ষ্যে।

ম্যাচের শুরু থেকে চাপ ধরে রাখলেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারছিল না রিয়াল। উনবিংশ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় তারা। প্রতিপক্ষের পরপর দুটি কর্নার সামলে প্রতি-আক্রমণে উঠে ভিনিসিউস বল বাড়ান ডি-বক্সে। মার্কো আসেনসিও ফাঁকায় বল পেয়ে উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন।

গোল পেতে অবশ্য বেশি দেরি হয়নি তাদের। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের থেকে পজেশন নিয়ে সতীর্থের পা ঘুরে বল পেয়ে থ্রু পাস বাড়ান বেনজেমা। আর দারুণ ছন্দে থাকা ভিনিসিউস গতিতে ডিফেন্ডার রোনালদ আরাহোকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে জোরালো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন।

চার দিন আগে লা লিগায় ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

পিছিয়ে পড়ে পাল্টা চাপ দেওয়া বার্সেলোনা ৩২তম মিনিটে একটি হাফ-চান্স পায়। তবে লুক ডি ইয়ংয়ের হেড ঠেকাতে কোনো সমস্যাই হয়নি রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার। পাঁচ মিনিট পর ভালো পজিশনে বল পেয়েও যথেষ্ট জোরে শট নিতে পারেননি আসেনসিও, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল নিয়ন্ত্রণে নেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।

৪১তম মিনিটে সৌভাগ্যসূচক গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। উসমান দেম্বেলের বাঁ দিক থেকে গোলমুখে বাড়ানো বল ক্লিয়ার করতে শট নেন এদের মিলিতাও, কিন্তু সেখানে ছুটে যাওয়া লুক ডি ইয়ংয়ের পায়ে লেগে বল চলে যায় জালে।

কোভিড থেকে কদিন আগে সেরে ওঠা পেদ্রিকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের বদলি নামান বার্সেলোনা কোচ। তরুণ এই মিডফিল্ডারের নৈপুণ্যেই ৫১তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো দলটি, তবে বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া শটটি পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। তিনি মিনিট পর দেম্বেলের কোনাকুনি শটও অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৬৮তম মিনিটে দুই দলই একটি করে পরিবর্তন আনে। লুক ডি ইয়ংকে তুলে চোট কাটিয়ে ফেরা আনসু ফাতিকে নামায় বার্সেলোনা। দুই মাসের বেশি সময় পর ফিরলেন তিনি। আর রিয়াল আসেনসিওকে তুলে নামায় রদ্রিগোকে।

বিরতির পর প্রথম ২০ মিনিটের বিবর্ণ রিয়াল ৬৯তম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে গোল পায়নি। বেনজেমার শট বাধা পায় পোস্টে। তিন মিনিট পর অবশ্য আর ব্যর্থ হননি তিনি।

প্রথমে বাঁ দিক থেকে ফেরলঁদ মঁদির পাস বক্সে পেয়ে বেনজেমার জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান টের স্টেগেন। ডান দিকের বাইলাইনের কাছে বল ধরে দানি কারভাহাল শট নেন। পা বাড়িয়ে টের স্টেগেন আবার ঠেকিয়ে দেন; কিন্তু বল চলে যায় ছয় গজ বক্সের বাইরে অরক্ষিত বেনজেমার পায়ে। সহজেই গোলটি করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।

গত শনিবার ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে বেনজেমাও জোড়া গোল করেছিলেন।

এরপরই ফাতির গোলে ৮৩তম মিনিটে ফের সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। সতীর্থের ছোট করে নেওয়া কর্নারে বল পেয়ে গোলমুখে ক্রস বাড়ান জর্দি আলবা আর অরক্ষিত তরুণ ফরোয়ার্ড হেডে লক্ষ্যভেদ করেন।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেও কিছুটা আধিপত্য দেখায় বার্সেলোনা। তবে ৯৮তম মিনিটে তাদের একটি আক্রমণ রুখে প্রতি-আক্রমণে আবারও এগিয়ে যায় রিয়াল।

নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে বদলি নামা ভালভেরদে এ দফায় দলকে এগিয়ে নেন। কাসেমিরোর পাস ধরে ডান দিক থেকে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল বাড়ান রদ্রিগো। প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্লেসিং শটে বাকি কাজ সারেন উরুগুয়ের মিডফিল্ডার।

পরক্ষণেই আবার সমতায় ফিরতে পারতো বার্সেলোনা। ডাবল সেভে দলকে এগিয়ে রাখেন কোর্তোয়া। একেবারে শেষ দিকে দুই দলই সুবর্ণ সুযোগ পায়। গোলমুখে ওভারহেড কিকে বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ফাতি। ওখান থেকে প্রতি-আক্রমণে টের স্টেগেনকে একা পেয়েও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রদ্রিগো। দিন শেষে যদিও তার ওই অবিশ্বাস্য ভুলে ভুগতে হয়নি রিয়ালকে।

দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বৃহস্পতিবার রাতে মুখোমুখি হবে আতলেতিকো মাদ্রিদ ও আথলেতিক বিলবাও।