আইনের কোর্টে জিতে টেনিস কোর্টে ফিরলেন জোকোভিচ

আদালতের রায় এসেছে পক্ষে। বন্দিদশা থেকে মিলেছে মুক্তি। এবার টেনিস কোর্টেও ফিরলেন নোভাক জোকোভিচ। বিশ্বের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়ের পুরো মনোযোগ এখন আসন্ন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলার দিকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2022, 02:36 PM
Updated : 10 Jan 2022, 03:54 PM

ক্রীড়া জগত ছাপিয়ে গোটা বিশ্বেই গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে জোকোভিচ। সার্বিয়ান তারকা অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পর তার ভিসা বাতিল করে তাকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হোটেলে আটকে রাখার ঘটনা নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা।

অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত সোমবার অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেলবোর্ন পার্কে অনুশীলনে করতে যান ২০ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী সার্বিয়ান তারকা।

রড লেভার অ্যারেনায় তার কোচ ও আরও কয়েক জনের সঙ্গে নিজের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে জোকোভিচ লিখেছেন, “যা কিছু ঘটেছে তা সত্ত্বেও আমি এখানে থাকতে চাই এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করতে চাই।”

“আমার মনোযোগ এখন সেদিকেই। চমৎকার সব সমর্থকদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলির একটিতে খেলতে আমি এখানে এসেছি।”

জোকোভিচ যখন টুইট করেন, তখন একই সঙ্গে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন তার পরিবারের সদস্যরা- বাবা, মা ও ভাই।

মা দিয়ানা জোকোভিচের মতে, ভিসা বাতিলের বিরুদ্ধে আদালতের রায় তার ছেলের ক্যারিয়ারের ‘সবচেয়ে বড় জয়।’ তিনি দাবি করেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে হোটেলে থাকার সময় জোকোভিচ ‘নির্যাতন ও হয়রানির শিকার’ হয়েছেন।

‘ন্যায়বিচারের জয় হয়েছে বলে পরিবার খুশি’- বলেছেন ভাই জর্জ জোকোভিচ।

“নোভাক আরেকটি রেকর্ড গড়তে গিয়েছে। সে একজন ক্রীড়াবিদ এবং বিশ্বের সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়দের একজন। নোভাক সবসময়ই পছন্দের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছে, এর বেশি কিছু নয়।”

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের জন্য এখন কোভিড টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১৭ জানুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলার সুযোগ দিতে জোকোভিচের ক্ষেত্রে ওই শর্ত শিথিল করে ভিসা দেওয়া হয়েছিল।

টিকা না নিয়েও জোকোভিচের ভিসা পাওয়ার সেই খবরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কট মরিসনের সরকার। সরকার করদাতাদের ক্ষেত্রে নিয়মের কড়াকড়ি করলেও বিদেশিদের ছাড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এরপর গত ৬ জানুয়ারি জোকোভিচ মেলবোর্নের টুলামারিন বিমানবন্দরে নামার পর তাকে আটকে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে পরে জানানো হয়, অস্ট্রেলিয়ায় আসার ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ না হওয়ায় তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে, সে কারণে তাকে ফেরত পাঠানো হবে।

এরপর জোকোভিচকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি হোটেলে রাখা হয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে। ফেরত পাঠানো এড়াতে অস্ট্রেলিয়ার হাই কোর্টে আবেদন করেন জোকোভিচ।

সোমবার এ বিষয়ে শুনানিতে বিচারক অ্যান্থনি কেলি বলেন, বিমানবন্দরে জোকোভিচকে যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং যেভাবে তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তার কোনোটিই ‘যৌক্তিক ছিল না।’

ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যখন জোকোভিচকে জানাল যে তার ভিসা বাতিল করা হবে, তখন টেনিস সংস্থা বা আইনজীবীর সাথে কথা বলার জন্য এবং জবাব দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও তাকে দেওয়া হয়নি বলে মনে করেছেন বিচারক।

কেলি তার রায়ে বলেন, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র ফেরত দিয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে জোকোভিচকে ছেড়ে দিতে হবে এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে পারবেন।

তখন বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মামলা চালাতে জোকোভিচের যে খরচ হয়েছে, সেটাও অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বহন করতে বলেছে আদালত।

এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলে রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালকে টপকে পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড একার করে নেবেন জোকোভিচ। গত জুলাইয়ে উইম্বলডন জিতে ফেদেরার ও নাদালের ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি।

তবে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রীর এখনও ভিসা বাতিল করার এবং টিকা না নেওয়া খেলোয়াড়কে বহিষ্কার করার ক্ষমতা আছে।