উত্তাপের ম্যাচে সাইফকে হারিয়ে ফাইনালে আবাহনী

পেনাল্টি গোলে এগিয়ে গেল আবাহনী লিমিটেড। এরপর সুযোগ নষ্টের মিছিলে যোগ দিলেন জীবন-রাকিবরা। প্রথমার্ধেই সমতায় ফেরা সাইফ স্পোর্টিং দ্বিতীয়ার্ধে দুটো পেনাল্টি পেয়ে কাজে লাগাতে পারল একটি। মাঝপথে রেফারি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করায় বাকি সময় ম্যাচ পরিচালনা করলেন চতুর্থ অফিসিয়াল। অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা সময়ে সমতায় ফিরে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিল সাইফ স্পোর্টিং। এতসব ঘটনার ম্যাচে সাইফ স্পোর্টিংকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠল আবাহনী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2022, 04:19 PM
Updated : 7 Jan 2022, 12:43 PM

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতেছে আবাহনী। দুই দলের নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে খেলা শেষ হয়েছিল ৩-৩ সমতায়।

টাইব্রেকারে আবাহনীর মিলাদ শেখ সোলাইমানি, রেজাউল করিম, মেহেদি হাসান রয়েল, নুরুল নাইম ফয়সাল লক্ষ্যভেদ করেন। সাইফের এমেরি বাইসেঙ্গে, সাজ্জাদ হোসেন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম লক্ষ্যভেদ করেন। জামাল ভূইয়া ও এমফন সানডে উদোহর শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে জয়ের নায়ক গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল।

আগামী রোববার শিরোপা লড়াইয়ে আবাহনী মুখোমুখি হবে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটির। দিনের প্রথম সেমি-ফাইনালে তারা ২-১ গোলে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিংকে।

চতুর্থ মিনিটেই দুর্ভাগ্য পথ আগলে দাঁড়ায় সাইফ স্পোর্টিংয়ের। মাঝমাঠের একটু উপর থেকে সাদ্দাম হোসেনের লং পাস ধরে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে এমফন সানডে উদোহর নেওয়া কোনাকুনি শট ক্রসবার কাঁপায়।

চার মিনিট পর রাফায়েল অগাস্তো সান্তোস দা সিলভার সফল স্পট কিকে এগিয়ে যায় আবাহনী। রাকিব হোসেনকে বক্সে মঞ্জুরুর রহমান মানিক ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।

একাদশ মিনিটে দেনিয়েল কলিনদ্রেসের আড়াআড়ি ক্রসে রাকিবের ভলি গোললাইন থেকে ফিরিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি এমেরি বাইসেঙ্গে। সাত মিনিট পর আরেকটি দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় আবাহনীর। দি সিলভার নিখুঁত থ্রু পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন রাকিব। কিন্তু গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা সফল হয়নি তার। ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকান পাপ্পু হোসেন।

তিন মিনিট পর সমতায় ফেরে গত আসরের রানার্সআপ সাইফ স্পোর্টিং। ডান দিকের বাইলাইনের একটু উপর থেকে ওগবাহর কাট ব্যাকে আসরোরভ গফুরভের শট শহীদুল ইসলাম সোহেল ফিস্ট করে ফেরানোর পর উদোহর ফিরতি শট জাল খুঁজে নেয়।

২৭তম মিনিটে ফ্লিকে কলিনদ্রেসকে বল দিয়ে বক্সের দিকে এগিয়ে যান নাবীব নেওয়াজ জীবন। ফিরতি পাস পেয়ে আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে চিপে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করেন তিনি, কিন্তু পাপ্পু অনেকটা লাফিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন।

একটু পর বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে দুর্বল শটে গোলরক্ষকের হাতে বল তুলে দেন আবাহনীর রাকিব। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোলরক্ষক শহিদুলের উদ্দেশে টুটুল হোসেন বাদশার ব্যাক পাস ছুটে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন উদোহ, কিন্তু সাইফের এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড গোলরক্ষকের গায়ে মেরে নষ্ট করেন দারুণ সুযোগ।

দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলের খেলায় গতি ছিল; তবে প্রথমার্ধের মতো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না কেউই। ৭১তম মিনিটে আক্রমণে ওঠা সাদ্দাম হোসেনকে বক্সে ফাউল করেন মনির হোসেন; পেনাল্টি পায় সাইফ। নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ওগবাহ গোলরক্ষককে বিপরীত দিকে ছিটকে দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন।

৮০তম মিনিটে উদোহকে বক্সে জুয়েল রানা ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। রেফারিকে ঘিরে ধরেন আবাহনীর খেলোয়াড়ররা। এক পর্যায়ে ধাক্কাও দেয় রেফারিকে।

কিন্তু পেনাল্টি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি সাইফ স্পোর্টিং। বাইসেঙ্গের প্রথম শট জালে জড়ালেও আগেই খেলোয়াড়রা বক্সে ঢুকে যাওয়ায় গোল বাতিল হয়। ফের পেনাল্টি নিতে গিয়ে শট নেওয়ার খুব কাছাকাছি এসে গোলরক্ষককে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ডজ দিতে যান বাইসেঙ্গে। তাতে বাতিল হয় পেনাল্টি, রুয়াণ্ডার এই ফরোয়ার্ডও পান হলুদ কার্ড। ইনডিরেক্ট ফ্রি কিক পায় আবাহনী।

দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সতীর্থের লং পাস বক্সে পেয়ে যান জুয়েল। ফাঁকায় থাকলেও নিজে শট না নিয়ে বাড়ান কলিনদ্রেসকে। কোস্টারিকার এই ফরোয়ার্ড প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জোরালো শট নেন, বল বাইসেঙ্গের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। সমতার স্বস্তির উল্লাসে ফেটে পড়ে আবাহনীর ডাগআউট।

অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে কলিনদ্রেসের ছোট পাস ধরে জুয়েল আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান। গোলমুখে তালগোল পাকিয়ে মেহেদি হাসান রয়েল শট নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর পাশে থাকা রাকিব লক্ষ্যভেদ করেন। দলকে এগিয়ে নেওয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে জার্সি খুলে হলুদ কার্ডও দেখেন তিনি।

১০১তম মিনিটে শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করায় মাঠ ছাড়েন রেফারি সাইমুন হাসান। ম্যাচ পরিচালনায় নামেন মাহমুদ জামাল ফারুকী নাহিদ।

এই অর্ধের শেষ দিকে ওগবাহর শট এক হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন শহিদুল। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় অর্ধের যোগ করা সময়ে আরেকটি দারুণ সেভ করেন শহিদুল। এরপর কলিনদ্রেসের শট ক্রসবার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

শেষের বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে বাম দিক থেকে উদোহর বাড়ানো ক্রসে গোলমুখে থেকে প্লেসিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন সাজ্জাদ হোসেন। ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে।

সেই ‘ভাগ্য পরীক্ষায়’ জিতে ফেডারেশন কাপের রেকর্ড ১১ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী এ নিয়ে ১৯তম বারের মতো ফাইনালে উঠল। এবার শিরোপা সংখ্যা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তাদের সামনে।