ঘটনাবহুল ম্যাচে পুলিশ এফসিকে হারিয়ে ফাইনালে কিংস

ঘটনাবহুল এক ম্যাচ হলো কমলাপুরে। গোল, খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, দফায় দফায় গ্যালারি থেকে দর্শকদের মাঠে বোতল ছুঁড়ে মারা- সবই হলো! এমন উত্তেজনাকর ম্যাচে শুরুতে এগিয়ে গেল পুলিশ এফসি। সমতা টেনে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিল বসুন্ধরা কিংস। সেখানে ইয়াসিন আরাফাতের গোলে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠল শিরোপাধারীরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2021, 04:47 PM
Updated : 14 Dec 2021, 05:52 PM

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে কিংস।

প্রথম সেমি-ফাইনালে দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা ও নাবীব নেওয়াজ জীবনের নৈপুণ্যে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে আবাহনী। আগামী শনিবার ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে কিংসের।

অষ্টম মিনিটে দানিলো অগাস্তো দে আজেভেদোর দারুণ হেডে এগিয়ে যায় পুলিশ। ডান দিক থেকে আদিল কুসকুসের ফ্রি কিকে খালিদ শাফিইয়ের ঠিক পেছন থেকে লাফিয়ে উঠে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার।

দ্বাদশ মিনিটে একটি ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। শাফিই ধাক্কা মেরে বসেন দানিলোকে। এরপর ‍বাকিরাও জড়িয়ে পড়েন ধাক্কাধাক্কিতে। ম্যাচে মাঝে মাঝে এমন ধাক্কাধাক্কি হয়েছে বেশ কয়েকবার।

ত্রয়োদশ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন কোয়ার্টার-ফাইনালে জোড়া গোল করা কিংসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন দে সিলভেইরা ফের্নান্দেস। বদলি নামেন আলমগীর কবির রানা। একটু পর পূর্বদিকের গ্যালারি থেকে দর্শকরা মাঠে বোতল ছুঁড়তে থাকে। পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায়। ম্যাচজুড়ে মাঝে মাঝেই মাঠে বোতল ছুঁড়েছে দর্শকরা।

২৫তম মিনিটে ইস্তয়ান ভ্রানিয়াসের ফ্রি কিক বেশ বাঁক থেকে পোস্টের বাইরে যায়। চার মিনিট পর সমতার স্বস্তি ফিরে কিংসের শিবিরে। বাইলাইনের একটু উপর থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাট ব্যকে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি ভ্রানিয়াস। ফের বল চলে যায় ইব্রাহিমের পায়ে। দূরূহ কোণ থেকে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই মিডফিল্ডার।

আসরে কিংসের জালে এটাই প্রথম গোল।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে রানা থেকে বিপলু আহমেদের পা ঘুরে ফিরতি বল পেয়ে রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো বক্সের ভেতর থেকে দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে মেরে হতাশা বাড়ান।

৫৩তম মিনিটে বেঁচে যায় পুলিশ এফসি। রবিনিয়োর ফ্রি কিকে ইয়াসিন আরাফাতের হেড গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল ফিস্ট করার পর ইব্রাহিমের ফিরতি হেড গোললাইনে থাকা ডিফেন্ডার মোহাম্মদ রকির মাথায় লেগে প্রতিহত হয়।

৭৬তম মিনিটে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষকের উদ্দেশে ব্যাকপাস বাড়িয়ে বিপদ ডেকে এনেছিলেন ইয়াসিন আরাফাত। দ্রুত ছুটে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রকি বাড়ান শরিফিকে। তালগোল পাকিয়ে ফাঁকা পোস্টে তিনি শটই নিতে পারেননি আফগানিস্তানের এই ফরোয়ার্ড; দ্রুত ক্লিয়ার করেন রানা। এর একটু আগে শরিফি আরও একবার সুযোগ নষ্ট করেন একক প্রচেষ্টায় আক্রমণে ওঠার পর তালগোল পাকিয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন রকি। একটু পর ভুল পাসে রকির পায়ে বল তুলে দেন কিংস গোলরক্ষক জিকো। পুলিশের এই ডিফেন্ডার এবারও একইভাবে উড়িয়ে মারেন।

অতিরিক্ত সময়ে ভ্রানিয়াস, ইব্রাহিম ও আতিকুর রহমান ফাহাদকে তুলে এলিটা কিংসলে, মাহবুবুর রহমান সুফিল ও বিশ্বনাথ ঘোষকে নামান কিংস কোচ। ১০৮তম মিনিটে রবিনিয়োর বুলেট গতির শট ফিস্ট করে ফেরান পুলিশের নেহাল। একটু পর বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা আল আমিনের শট দ্রুত ছুটে গিয়ে ফিরিয়ে কিংসকে ম্যাচে রাখেন গোলরক্ষক জিকো। একটু এদিক-ওদিক হলেই জালে জড়াত বল।

১১৮তম মিনিটে রবিনিয়োর কর্নারে সুফিলের হেডের পর নিখুঁত টোকায় জালে বল জড়িয়ে দেন ইয়াসিন। জার্সি খুলে বিজয় উদযাপন করে হলুদ কার্ড দেখেন এই ডিফেন্ডার। তাতে তাদের উল্লাসে একটুও ভাটা পড়েনি। এই গোলেই যে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপে খেলতে এসে উড়তে থাকা পুলিশকে হতাশ করে মুকুট ধরে রাখার শেষ ধাপে ওঠে কিংস।