বায়ার্নে ধরাশায়ী বার্সার ইউরোপা লিগে অবনমন

বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে আগে কখনোই জয়ের অভিজ্ঞতা ছিল না বার্সেলোনার। লিখতে হতো তাই নতুন ইতিহাস। সাদামাটা পারফরম্যান্সে ন্যূনতম সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি তারা। মৌসুমের শুরু থেকে নিজেদের খুঁজে ফেরা দলটিকে আরেকবার নাকানিচুবানি খাইয়ে বীরের বেশেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে উঠল জার্মান চ্যাম্পিয়নরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2021, 09:54 PM
Updated : 8 Dec 2021, 10:51 PM

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বুধবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছে বায়ার্ন। টমাস মুলার দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর প্রথমার্ধেই ব্যবধান বাড়ান লেরয় সানে। দ্বিতীয়ার্ধে অন্য গোলটি করেন জামাল মুসিয়ালা।

আসরে প্রথম দেখায়ও একই স্কোরলাইনে জিতেছিল বায়ার্ন। এই হারে দুই দশক পর শীর্ষ টুর্নামেন্ট থেকে ইউরোপা লিগে নেমে যাওয়ার তেতো অভিজ্ঞতা হলো বার্সেলোনার।  

অন্য ম্যাচে দিনামো কিয়েভকে ২-০ গোলে হারিয়ে এই গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে নকআউট পর্বে উঠেছে বেনফিকা।

গ্রুপে ছয় ম্যাচের সবকটি জেতা বায়ার্নের পয়েন্ট ১৮। রানার্সআপ বেনফিকার পয়েন্ট ৮। ৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় বার্সেলোনা।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দর্শক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ঘরের মাঠে খেলার বড় সুবিধাই পায়নি বায়ার্ন। ম্যাচের শুরুর ভাগে তাদের পারফরম্যান্সও ছিল সাদামাটা। বিপরীতে নিজেদের চেনা রূপে হাজির হওয়ার চেষ্টা করে বার্সেলোনা, বল দখলে রেখে আক্রমণে প্রয়াস চালায়।

ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় তেমন কোনো সুযোগ অবশ্য তৈরি করতে পারছিল না সফরকারীরা। ২৭তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম নিশ্চিত সুযোগ পায় বায়ার্ন। মুলারের ক্রস ঝাঁপিয়ে পড়া গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় দূরের পোস্টে গোলমুখে রবের্ত লেভানদোভস্কির পায়ে। তবে আগেই একটু বেশি এগিয়ে যাওয়া পোলিশ ফরোয়ার্ড প্রয়োজনীয় টোকাটা দিতে পারেননি।

পেছন থেকে জর্দি আলবা বল ক্লিয়ার করেন ঠিকই, তবে ওই সময়েই হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান তিনি। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। এরপরই গোল খেয়ে বসে তারা।

৩৪তম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে জেরার্দ পিকের বাধা এড়িয়ে ছয় গজ বক্সে ক্রস বাড়ান লেভানদোভস্কি। মুলারের নেওয়া হেড অবশ্য ঠেকিয়ে দেন রোনালদো আরাহো। তবে গোললাইন প্রযুক্তিতে দেখা যায়, বল আগেই গোললাইন পেরিয়ে গিয়েছিল।

ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় মুলারের গোল হলো ৫০টি, জার্মান খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে বার্সেলোনার বিপক্ষে সর্বোচ্চ গোলের কীর্তিও গড়লেন তিনি, ৮টি।

এতেই বার্সেলোনার নকআউট পর্বের আশা অনেকটা মিইয়ে যায়। কারণ নিজেরা তো পিছিয়ে আছেই, অন্য ম্যাচে প্রথম ২২ মিনিটের মধ্যেই দিনামো কিয়েভের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বেনফিকা।

ওখান থেকে বার্সেলোনা ঘুরে দাঁড়াবে কী, নিজেদের যেন আরও হারিয়ে ফেলে তারা। সেই সুযোগে ৪৩তম মিনিটে অনেক দূর থেকে নেওয়া জোরালো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সানে। গোলটিতে অবশ্য যথেষ্ট দায় আছে টের স্টেগেনের। বল তার নাগালের মধ্যেই ছিল, কিন্তু বলের গতি-প্রকৃতি বুঝতে না পেরে গুলিয়ে ফেলেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও গোল খেতে বসেছিল বার্সেলোনা। তবে কিংসলে কোমানের ছোট পাস গোলমুখে পেয়ে সানে টোকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় সফরকারীরা।

ক্ষণিকের সেই স্বস্তি অবশ্য বার্সেলোনার জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনেনি। ৬২তম মিনিটে ঠিকই ব্যবধান আরও বাড়ায় বায়ার্ন। বাঁ দিকের বাইলাইনের ওপর থেকে আলফুঁস ডেভিসের বাড়ানো বল ছয় গজ বক্সে পেয়ে জালে পাঠান মুসিয়ালা।

এই গোলের পর পিকে-বুসকেতসদের চোখেমুখে ফুটে ওঠে তীব্র হতাশার ছাপ। বাকি সময়ে তাদের শরীরী ভাষায় শুরুর তেজ বলতে গেলে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। যেন কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া।

শেষ দিকে সানে আরেকটি দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন। ডি-বক্সে গোল করার মতো পজিশন থেকে উড়িয়ে মারেন এই জার্মান ফরোয়ার্ড। তাতে ব্যবধান না বাড়লেও বার্সেলোনার ভোগান্তি কমেনি একটুও।

এর আগে সবশেষ বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ২০০০-০১ আসরে। এসি মিলান ও লিডস ইউনাইটেডের পেছনে থেকে তৃতীয় হয়ে উয়েফা কাপে (এখনকার ইউরোপা লিগ) নেমে গিয়েছিল কাতালান ক্লাবটি।

আর ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতাটিতে তারা সবশেষ খেলেছে ২০০৩-০৪ আসরে। ওই আসরে চতুর্থ রাউন্ডে সেল্টিকের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছিল বার্সেলোনা। 

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বায়ার্ন। ২০১৯-২০ আসরেও এই সাফল্য পেয়েছিল তারা। সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল দলটি।

তাদের মতো দুইবার গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জয়ের কীর্তি আছে আর কেবল রিয়াল মাদ্রিদের।