স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে বাফুফের সংবর্ধনা

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়, সংগঠকদের মিলনমেলা বসল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে। তাদের জবানীতে উঠে এলো মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির গড়ে ওঠা, ১৬টি ম্যাচ খেলা, মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে সহায়তা দেওয়াসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2021, 03:48 PM
Updated : 8 Dec 2021, 03:48 PM

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বাফুফে বুধবার স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ১৮ ফুটবলার ও দুই কর্মকর্তা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন ও তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে একঝাঁক স্বাধীনতাকামী ও সাহসী ফুটবলার ও ফুটবল কর্মকর্তা দল গঠন করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাচ খেলেছিলেন ১৬টি। সেই ম্যাচ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শংকর হাজরা, শেখ আশরাফ আলী, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, কাজী সালাউদ্দিন, বিমল কর, সুভাষ চন্দ্র সাহা, ফজলে সাদাইন খোকন, আমিনুল ইসলাম সুরুজ, আব্দুল মোমিন জোয়ার্দার, আব্দুস সাত্তার, মোহাম্মদ মজিবর রহমান, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বিরেন দাস বিরু, দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না এবং অন্যতম সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেলসহ আরও অনেকে।

খেলোয়াড় ও সংগঠকদের হাতে ফুটবল ও স্মরক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। নজিরবিহীন এক উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান তাদের।

“ধন্যবাদ দিতে চাই তাদের, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন দল গঠন করেছিল, যা ছিল নজিরবিহীন। যাদের কারণে, যাদের অবদান, ত্যাগের কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করতে পারছি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যুদ্ধের সময় তারা বসে না থেকে ফুটবলের মাধ্যমে তারা যুদ্ধ করেছে। টাকার অংক দিয়ে বিচার করতে চাই না। তারা যা করেছে, তা কোনো কিছু দিয়ে তুলনা করা যাবে না।”

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তান্না স্বাধীনতা যুদ্ধে জনমত গঠনে দলের অবদানের কথা তুলে ধরেন।

“মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। আমরা জনমত গঠন ছাড়াও বড় অঙ্কের তহবিল গঠনে ভূমিকা রাখি। ভারতবাসীদের বোঝাতে পেরেছিলাম, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কেন আমাদের এই যুদ্ধ। আমরা সেখানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছিলাম। ভারতীয়দের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম।”

দল গঠনে অন্যতম ভূমিকা রাখা সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল মেলে ধরলেন স্মৃতির ঝাঁপি। শোনালেন কীভাবে গড়ে উঠেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

“স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যখন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনের ঘোষণা এলো, তখন অনেক ফুটবলার কলকাতায় আসতে শুরু করে। মূলত তাদের ওপর পাক হানাদার বাহিনীর নজর থাকায় প্রাণ বাঁচাতে তারা কলকাতায় আসে। ফুটবলাররা সংগঠিত হয়ে ১৬টি ম্যাচ খেলে প্রায় ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ভারতীয় রুপি সংগ্রহ করে জমা দেয় সরকারের কোষাগারে।”

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। কিছুটা আক্ষেপও ঝরে তার কণ্ঠে।

“আমার সৌভাগ্যে যে আজ আমরা সবাই একসাথে বসেছি। এমন সৌভাগ্য আমার জীবনে বহুবার এসেছে। সালাউদ্দিনকে (বাফুফে সভাপতি) ধন্যবাদ এমন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য। অনেক খেলোয়াড়ের সাথে আমার মাঝেমাঝে দেখা হয়েছে; আবার দেখাও হয়নি। আমি অধিনায়ক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব, সেটা পালন করার চেষ্টা করেছি। প্রথমবারের মতো ফুটবল ফেডারেশন ব্লেজারের মাপ নিয়েছে, এটা আমার ভালো লেগেছে। অনেকেই আমাদের ভুলে গেছে।"

এমন আয়োজনেও কিছুটা আক্ষেপ হয়ে থাকল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের একজন এনায়েতুর রহমান খানের অনুপস্থিতি। দীর্ঘদিন পর কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি, কিন্তু অনুষ্ঠানে ছিলেন না এই ফরোয়ার্ড।