পেং শুয়াইয়ের ‘অন্তর্ধান’ ঘিরে চীনকে ‘বয়কটের’ হুমকি ডব্লিউটিএ’র

চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার ঝাং গাওলির বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলার পর টেনিস তারকা পেং শুয়াইয়ের ‘নিশ্চুপ’ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে নানারকম শঙ্কা জেগেছে। টেনিস বিশ্বজুড়ে দাবি উঠছে সঠিক তদন্তের। শুয়াইয়ের অভিযোগের বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব না মিললে চীন থেকে উইমেন্স টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সব টুর্নামেন্ট প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2021, 10:30 AM
Updated : 19 Nov 2021, 06:43 PM

চীনের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোয় গত ২ নভেম্বর এক পোস্টে টেনিস দ্বৈতের সাবেক নাম্বার ওয়ান পেং অভিযোগ তোলেন, তিন বছর আগে তাকে চীন সরকারের ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তার ও তার স্ত্রীর সঙ্গে টেনিস খেলতে আমন্ত্রণ জানান। বাড়িতে ডাকার পর তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়েন ঝাং। তবে আগে ঝাংয়ের সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল বলেও জানান পেং।

বিস্তারিত ওই পোস্টে পেং একই সঙ্গে জানান, নিজের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারবেন না। তবে কথা বলতে তাই আপত্তি নেই।

টেনিস বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া ওই পোস্ট আধ ঘণ্টা পরই সরিয়ে ফেলা হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ঝাং কিংবা চীন সরকারের পক্ষ থেকে পেংয়ের অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

আলোচিত ওই পোস্টের পর পেংয়ের পক্ষ থেকে আর কিছুই বলা হয়নি। জনসম্মুখেও তাকে আর দেখা যায়নি। মূলত এ কারণেই তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে মানুষের মনে শঙ্কা জেগেছে।

পেংয়ের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। পেং আদৌ ভালো আছেন কিনা, তা নিশ্চিত হতে মানুষকে আওয়াজ তোলার আহ্বানও জানান নারী এককের ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী খেলোয়াড় সেরেনা।

চাইনিজ স্টেট মিডিয়া পেংয়ের আইডি থেকে পাঠানো একটি মেইল প্রকাশ করেছে, যদিও এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে।

টুইটারে বৃহস্পতিবার এক দীর্ঘ পোস্টে পেংয়ের সুস্থতা কামনায় সেরেনা লিখেন, “আশা করি সে নিরাপদ আছে এবং খুব দ্রুত তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।”

পেং ঠিক আছেন কিনা, এ বিষয়ে টেনিসের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক খেলোয়াড়ই জানতে চেয়েছেন। পুরুষ টেনিসের এক নম্বর খেলোয়াড় নোভাক জোকোভিচ ও চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী জাপানের নাওমি ওসাকার পর সেরেনা এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানালেন।   

“খবরটি শুনে আমি বিধ্বস্ত ও হতবাক। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং আমাদের অবশ্যই চুপ করে থাকা উচিত নয়। অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন এই সময়ে তার ও তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা জানাচ্ছি।”

চাইনিজ তাইপের শে সু-ওয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২০১৩ উইম্বলডন ও ২০১৪ ফরাসি ওপেনের দ্বৈতে শিরোপা জয়ী পেং ২০১৪ ইউএস ওপেনের এককে সেমি-ফাইনালেও উঠেছিলেন। ২০২০ সালের মার্চের পর আর ডব্লিউটিএ-এর কোনো টুর্নামেন্টে খেলেননি তিনি।

পেংয়ের এই অভিযোগ চীনের ‘হ্যাশট্যাগ মি ঠু’ মুভমেন্টে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত ঘটনা। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দেশটির ভাইস-প্রিমিয়ারের দায়িত্ব পালন করা এবং প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের ঘনিষ্ঠ ৭৫ বছর বয়সী ঝাং এই অভিযোগের বিষয়ে এখনও কিছুই বলেননি।

চাইনিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

চারপাশে এই প্রতিবাদের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ডব্লিউটিএ-এর প্রধান নির্বাহী স্টিভ সিমোন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক গণমাধ্যমকে বলেন, পেংয়ের অভিযোগের বিষয়ে চীনের কর্তৃপক্ষের জবাব সন্তোষজনক না হলে আগামী বছর সেখানে অনুষ্ঠেয় ১০টি টুর্নামেন্ট তারা সেখান থেকে সরিয়ে নেবে।