বার্সাকে আবারও হারিয়ে শীর্ষে রিয়াল

মূল দায়িত্ব তার রক্ষণ সামলানো। তবে আক্রমণেও যে কম যান না, ক্যারিয়ারে প্রথম ক্লাসিকো খেলতে নেমে অসাধারণ এক গোল করে প্রমাণ দিলেন দাভিদ আলাবা। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া চেষ্টা করেও পারল না বার্সেলোনা, উল্টো যোগ করা সময়ে হজম করল আরেকটি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখল রিয়াল মাদ্রিদ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 04:12 PM
Updated : 24 Oct 2021, 09:51 PM

কাম্প নউয়ে রোববার লা লিগার ম্যাচটিতে একেবারে শেষ মুহূর্তে একটি গোল অবশ্য পেয়েছে বার্সেলোনা। তবে সেটা হয়তো কেবল তাদের আফসোসই বাড়িয়েছে। উত্তেজনায় ভরা ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তি দল।

আলাবার গোলে এগিয়ে থাকা রিয়াল যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়ায় লুকাস ভাসকেসের লক্ষ্যভেদে। বার্সেলোনার স্বান্তনাসূচক গোলটি সের্হিও আগুয়েরোর।

বার্সেলোনার সবসময়ের কৌশলের অন্যতম একটা দিক বল দখলে আধিপত্য করা। সেখানে এদিন প্রথমার্ধে দেখা মেলে উল্টো চিত্র। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য কিছুটা পুরনো রূপে ফেরে তারা; তবে ফিনিশিংয়ে হতাশা পিছু ছাড়েনি। পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে তাদের ১২ শটের মাত্র দুটি ছিল লক্ষ্যে। আর রিয়ালের ১০ শটের পাঁচটিই লক্ষ্যে।

দারুণ এই জয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে ফিরল রিয়াল।

ঢিমেতালে শুরু ম্যাচে কেউই পারছিল না তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে। ২১তম মিনিটে মাঠে প্রথম উত্তেজনা ছড়ায়। বাঁ দিকের সাইডলাইন দিয়ে আক্রমণে ওঠা ভিনিসিউস জুনিয়র দুইজনের মধ্যে দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন; তবে ডিফেন্ডার অস্কার মিনগেসার চ্যালেঞ্জে পড়ে যান তিনি।

পেনাল্টির জোরালো আবেদন ওঠে, তবে রেফারির সাড়া মেলেনি। ভিডিও রিপ্লেতেও দেখা যায়, যেন খুব সহজেই পড়ে যান তিনি। তাই সাড়া মেলেনি ভিএআরেও।

তিন মিনিট পর ডি-বক্সে ঢুকে দুই দফায় গোলক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনকে কাটিয়েও জালের দেখা পাননি ভিনিসিউস। তার শট স্লাইড ট্যাকলে ফেরান জর্দি আলবা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের এমন সুযোগ মিসের হতাশা দূর হয় শেষে অফসাইডের পতাকা উঠলে।

পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ পায় বার্সেলোনা। মেমফিস ডিপাইয়ের বাড়ানো বল ফাতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হলে পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে যান সের্জিনো দেস্ত। কিন্তু বিনা বাধায় উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই ডিফেন্ডার।

তেমনই এক প্রতি-আক্রমণে ৩২তম মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। মাঝমাঠের আগে থেকে ভিনিসিউসের বাড়ানো পাস রদ্রিগো ধরে বাড়ান বাঁদিকে দাভিদ আলাবাকে। গ্রীষ্মের দলবদলে বায়ার্ন ছেড়ে রিয়ালে পাড়ি জমানো এই অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার বিনা বাধায় বক্সে ঢুকে বুলেট গতির কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন।

তিন মিনিট পরই সমতায় ফেরার ভালো একটি সুযোগ নষ্ট হয় বার্সেলোনার। মেমফিসের কর্নারে জেরার্দ পিকের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

প্রথমার্ধে বল দখলে পিছিয়ে থাকা বার্সেলোনা বিরতির পর মনোযোগ দেয় পজেশন ধরে রাখায়। অল্প সময়ে কয়েকটি আক্রমণও করে তারা; তবে তাতে খুব বেশি ধার ছিল না। ৫৮তম মিনিটে রিয়ালের বক্সে টনি ক্রুসের বাহুতে বল লাগলে পেনাল্টির আবেদন করে বার্সেলোনা, তবে এর আগে তাকে টেনে ধরেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং।

পেনাল্টি তো মেলেইনি, উল্টো রেফারির সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করে হলুদ কার্ড দেখেন পিকে। চার মিনিট পর ১২ গজ দূর থেকে বেনজেমার ভলি ঠেকিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি টের স্টেগেন।

নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনের বাকি থাকতে জোড়া পরিবর্তন করেন বার্সেলোনা কোচ কুমান। মাঠে নামার খানিক বাদেই গোল পেতে পারতেন আগুয়েরো। তবে তার হেড যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে।

ব্যবধান মাত্র ১ গোলের হওয়ায় বার্সেলোনার ফেরার সম্ভাবনা ভালোমতোই ছিল। সাত মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন ভাসকেস।

এবারও প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেস্তে দিয়ে ওঠা পাল্টা-আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে মার্কো আসেনসিওর শট ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগেন। তবে বিপদমুক্ত করতে পারননি তিনি। আলগা বল ছুটে গিয়ে টোকায় জালে পাঠান ভাসকেস।

ম্যাচের ফলাফল একরকম নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর শেষ মুহূর্তে বার্সেলোনার জার্সিতে গোলের খাতা খোলেন আগুয়েরো। ডান দিক থেকে দেস্তের একটু উঁচু করে বাড়ানো বল ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে ভলিতে হারের ব্যবধান কমান আর্জেন্টাইন তারকা।    

এই নিয়ে রিয়ালের বিপক্ষে লিগে টানা চার ম্যাচ হারল বার্সেলোনা, যার তিনটিই কুমানের মেয়াদে। ডাচ এই কোচের ওপর যা চাপ আরও বাড়াবে বৈকি।

২০১৯-২০ আসরে ঘরের মাঠে ড্রয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে গিয়ে হেরেছিল বার্সেলোনা। আর গত মৌসুমে লিগে রিয়ালের বিপক্ষে দুই দেখায়ই হারে কুমানের দল। সব মিলিয়ে লা লিগায় রিয়ালের বিপক্ষে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়শূন্য রইল কাতালান ক্লাবটি। ২০০৮ সালের মে মাসের পর থেকে কোনো এক দলের বিপক্ষে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ টানা ব্যর্থতার চিত্র।

৯ ম্যাচে ৬ জয় ও ২ ড্রয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল। যথাক্রমে পরের দুটি স্থানে থাকা সেভিয়া ও রিয়াল সোসিয়েদাদের পয়েন্টও সমান ২০।

সমান ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরে নেমে গেছে বার্সেলোনা।