মালদ্বীপে ‘সুন্দর দিনের’ অপেক্ষায় বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় ও ভারতের বিপক্ষে ড্রয়ে পথেই ছিল বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে হেরে লক্ষ্য পূরনের সম্ভাবনা পড়ে গেছে কিছুটা শঙ্কায়। তবে ফাইনাল-ভাগ্য আছে নিজেদের হাতেই। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে তাই আরেকটি ‘সুন্দর দিনের’ প্রত্যাশায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ অস্কার ব্রুসন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2021, 04:03 PM
Updated : 12 Oct 2021, 04:03 PM

মালদ্বীপের রাজধানী মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় মুখোমুখি হবে দুই দল।

শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ শুরু করা বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে। স্বাগতিক মালদ্বীপের কাছে শেষ ম্যাচে হেরে যায় ২-০ ব্যবধানে। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে বাংলাদেশ।

মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের পর নেপাল দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-২ ব্যবধানে হারায় শ্রীলঙ্কাকে। তবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় কখনও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল না খেলা নেপাল।

দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে নেপাল। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে তাদের হার এড়ালেই চলবে। বিপরীতে, ২০০৫ সালের পর প্রথম এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে হলে বাংলাদেশকে জিততেই হবে।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ের সামনে থাকা বাংলাদেশকে আশা-শঙ্কা দুটোই দেখাচ্ছে পরিসংখ্যান। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবশেষ জয়টি ১৬ বছর আগে; পাকিস্তানের ওই আসরে গ্রুপ পর্বে রোকোনুজ্জামান কাঞ্চনের নৈপুণ্যে ২-০ গোলে জিতেছিল তারা।

এরপর সাফে তিনবার দেখা হয়েছে দুই দলের। কোনোবারই পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ১-০, ২০১৩ সালে ২-০ এবং সবশেষ ২০১৮ সালে ২-০ ব্যবধানে হারে লাল-সবুজেরা।

দুই দলের সবশেষ দুই প্রীতি ম্যাচের ফল অবশ্য আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। গত বছর নভেম্বরে প্রথম প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে জয়ের পর দ্বিতীয়টি গোলশূন্য ড্র করেছিলেন জামাল-জিকোরা।

রাউন্ড রবিন লিগের এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল দেওয়া দল নেপাল (৪টি)! এরপরই স্বাগতিক মালদ্বীপ। ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা গোল পেয়েছে ২টি করে। গোল হজম করাদের তালিকায় অবশ্য বাংলাদেশ-নেপাল পাশাপাশি; দুই দলই হজম করেছে ৩টি করে।

নেপালের চার গোলই করেছেন তাদের ফরোয়ার্ডরা। অন্যদিকে, বাংলাদেশের দুটি গোল দুই ডিফেন্ডার তপু বর্মন ও ইয়াসিন আরাফাতের। বাফুফের মঙ্গলবার পাঠানো ভিডিও বার্তায় ব্রুসন জানিয়েছেন নেপালের ফরোয়ার্ডদের আটকে রাখার আশাবাদ।

“আমাদের একটা শক্তিশালী দিক হচ্ছে আমরা রক্ষণে খুব একটা ভুগিনি। মালদ্বীপ ম্যাচে আমাদের দুটো গোল খাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু ওই ম্যাচে আমরা দুটো গোল খেয়েছি সেট পিস থেকে। কেবল দলের ডিফেন্ডারদের ওপর নয়, আমাদের রক্ষণের যে কৌশল, তার ওপর আমার আস্থা রয়েছে।”

“আগামীকাল আমাদের জমাট থাকতে হবে। সেন্ট্রাল এরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, নেপালকে আমরা দ্রুত প্রতি-আক্রমণে ওঠার সুযোগ দিতে পারি না। সে অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা আছে।”

২০০৩ সালে প্রথম ও সবশেষ সাফের শিরোপা জয় এবং ২০০৫ সালে সবশেষ ফাইনালে খেলা বাংলাদেশ গত চার আসর থেকে ছিটকে যায় গ্রুপ পর্ব থেকে। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে একটি সফল দিনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ।

“পরিকল্পনা অনুযায়ী যেভাবে খেলতে চাই, আমাদের সেভাবে খেলতে হবে। দুই স্ট্রাইকার নিয়ে খেলব। দুটি ম্যাচই সেমি-ফাইনাল (অন্য ম্যাচে মুখোমুখি ভারত ও মালদ্বীপ)। ৯০ মিনিটে ম্যাচ জিততে হবে।”

“আমাদের জিততেই হবে এবং আমি আত্মবিশ্বাসী। আমাদের জন্য কাল সুন্দর দিন অপেক্ষায় আছে। নেপাল শক্তিশালী দল, ভালো ফুটবল খেলে; তবে আমাদেরও ভালো খেলোয়াড় আছে। বিপিএলের সেরা খেলোয়াড়রা খেলছে এই দলে।”

সাফ শুরুর ১৩ দিন আগে জেমি ডেকে ‘ছুটি’ দিয়ে ব্রুসনের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয় বাফুফে। অল্প কদিনের প্রস্তুতিতে দলকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছেন এই স্প্যানিয়ার্ড। রক্ষণাত্মক কৌশল থেকে বেরিয়ে এসে মতিন-সুফিলরা খেলছেন আক্রমণাত্মক ফুটবল।

মালদ্বীপ ম্যাচে অবশ্য চেনা রূপে ছিল না দল। হারের পর সাত দিনের মধ্যে তিন ম্যাচ খেলার ক্লান্তির কথা বলেছিলেন ব্রুসনও। নেপাল ম্যাচের আগে বিশ্রাম ও প্রস্তুতির জন্য পাঁচ দিন সময় পাওয়ায় দল দারুণ সতেজ আছে বলেও জানালেন তিনি।

“(বাংলাদেশ কোচ হিসেবে) এই পথচলাটা উপভোগ করছি। সবাই অনুশীলনে ফিরেছে। সবার শক্তি আগের মতো। আমি আত্মবিশ্বাসী, দল ভালো করবে। নেপাল তিন দিন আগে ম্যাচ খেলেছে। আমরা পাঁচ দিন বিশ্রাম পেয়েছি। ডু ও আর ডাই ম্যাচ।”

“বাংলাদেশের ফুটবল উঠে আসছে সেটা পারফরম করে দেখানোর সুযোগ আছে আমাদের সামনে। দল পুরো শক্তি নিয়ে ফিরতে যাচ্ছে। ছেলেরা কিছু একটা করে দেখাতে চাইছে।”