বুয়েনস আইরেসে সোমবার লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। মেসি দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর প্রথমার্ধেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রদ্রিগো দে পল। দ্বিতীয়ার্ধে জালের দেখা পান লাউতারো মার্তিনেস।
২০১২ সালের পর এই প্রথম উরুগুয়ের জালে তিনবার বল পাঠাতে পারল আর্জেন্টিনা।
রিভার প্লেটের মাঠ এল মনুমেন্তালে ৬২ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা আর্জেন্টিনা গোলের জন্য শট নেয় ২৩টি। এর ১০টি ছিল লক্ষ্যে। দারুণ কিছু সেভে ব্যবধান আরও বড় হতে দেননি ফের্নান্দো মুসলেরা। উরুগুয়ের ১০ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। শুরুতে দারুণ দুটি সেভে আর্জেন্টিনাকে পিছিয়ে যেতে দেননি গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও শুরুতে গোলের পরিষ্কার সুযোগ বেশি পেয়েছিল অস্কার তাবারেসের দলই। ২৮ মিনিটের মধ্যে তিনবার গোলের খুব কাছে গিয়েও জালের দেখা পায়নি সফরকারীরা। এরপর ভাগ্যের ছোঁয়া থাকা দুই গোলে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নেয় আর্জেন্টিনা।
আগের ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করা আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই খেলে আক্রমণাত্মক ফুটবল।
পঞ্চম মিনিটে গতি ও পায়ের কারিকুরিতে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। কিন্তু তার ক্রস খুঁজে পায়নি নিকোলাস তাগলিফিয়াকো ও লেয়ান্দ্রো পারেদেসকে। পরের মিনিটে ঝাঁপিয়ে লুইস সুয়ারেসের শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনার ত্রাতা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ফেদে ভালভেরদের ফিরতি শটও ব্যর্থ করে দেন তিনি।
অষ্টম মিনিটে জিওভানি লো সেলসোর বাঁকানো শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
২৬তম মিনিটে দে পলের চমৎকার ক্রসে খুব কাছ থেকে লাউতারো মার্তিনেসের স্লাইড একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। দুই মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে সুয়ারেসের শট ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।
৩৩তম মিনিটে একটুর জন্য এগিয়ে যেতে পারেনি আর্জেন্টিনা। এমিলিয়ানো মার্তিনেসের লম্বা করে বাড়ানো থ্রো ধরে দে পল খুঁজে নেন অরক্ষিত লো সেলসোকে। গোলরক্ষক মুসলেরাকে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যান এই মিডফিল্ডার। তার শট ক্রসবারে লেগে গোললাইনে পড়ে ফিরে আসে!
৩৬তম মিনিটে ডি বক্সের মাথা থেকে মেসির শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে তিনি শট নেন গোলরক্ষক বরাবর। ৩৮তম মিনিটে সৌভাগ্যের এক গোলে অধিনায়ক এগিয়ে নেন আর্জেন্টিনাকে।
পায়ের বাইরের অংশ দিয়ে মেসির উঁচু করে বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি নিকোলাস গনসালেস। এগিয়ে এসে বলের নাগাল পাননি উরুগুয়ে গোলরক্ষকও। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়ায় জালে! আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটি মেসির ৮০তম গোল।
৪৪তম মিনিটে স্কোর লাইন ২-০ করে ফেলেন দে পল। মেসির বাড়ানো বল এক জনের গায়ে লাগলে পেয়ে যান লাউতারো মার্তিনেস। তিনি ঠিক মতো শট নিতে পারেননি। কেউ ক্লিয়ার করার আগেই ছুটে গিয়ে আলগা বল জালে পাঠান দে পল। দেশের হয়ে এটি তার দ্বিতীয় গোল।
যোগ করা সময়ে ব্যবধান আরও বাড়তে দেননি মুসলেরা। লো সেলসোর ক্রসে লাউতারো মার্তিনেসের শট ফিরিয়ে দেন তিনি।
প্রথমার্ধে ৭৪ শতাংশ সময় বল নিয়ন্ত্রণে রাখা আর্জেন্টিনা গোলের জন্য শট নেয় ১৫টি। এর পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। উরুগুয়ের ৬ শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে।
আক্রমণে ধার বাড়াতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এদিনসন কাভানিকে নামান উরুগুয়ে কোচ। তবে প্রথম সুযোগটা পায় স্বাগতিকরা। ৪৮তম মিনিটে দে পলের ফ্রি-কিকে তাগলিফিয়াকো হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
মেসির বাড়ানো বল পেয়ে ডি বক্সে ক্রস করেন দে পল। স্লাইড করেও নাগাল পাননি লো সেলসো। দূরের পোস্টে অরক্ষিত লাউতারো মার্তিনেস বাকিটা সারেন অনায়াসে। কিছুই করার ছিল না মুসলেরার।
৬৮তম মিনিটে হোয়াকিন কোররেয়ার শট ঠেকিয়ে স্কোর লাইন ৪-০ হতে দেননি তিনি। ছয় মিনিট পর অরক্ষিত আনহেল দি মারিয়ার শট বেরিয়ে এসে ব্লক করেন মুসলেরা।
৮০তম মিনিটে ডি-বক্সে বাইরে থেকে মেসির বাঁ পায়ের ‘ট্রেডমার্ক’ শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৯০তম মিনিটে দি মারিয়ার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকানোর পর মেসির শটও ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক।
১০ ম্যাচে ছয় জয় ও চার ড্রয়ে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে আর্জেন্টিনা। দিনের আরেক ম্যা কলম্বিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করা ব্রাজিলের সঙ্গে কমিয়েছে ব্যবধান। ১০ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২৮।
১৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে রয়েছে একুয়েডর। গোল ব্যবধানে পিছিয়ে চারে উরুগুয়ে।