বার্সা ছাড়ার কষ্ট ভুলে সাফল্যের আশায় মেসি

শৈশবে পাড়ি জমানো ক্লাবেই ছিলেন দুই দশকের বেশি সময়। সাফল্যে ভরা ২১টি বছর। লিওনেল মেসির কাছে বার্সেলোনা হয়ে উঠেছিল নিজের বাড়ির মতো। ক্লাবটির সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছিলেন এই আর্জেন্টাইন। অন্য সবার মতো তিনিও ভাবেননি, চলে যেতে হবে অন্য কোথাও। কিন্তু বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে মেসি এখন পিএসজিতে। প্রিয় শহর, চেনা আঙিনা ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট এখনও পোড়ায় তাকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2021, 01:13 PM
Updated : 9 Oct 2021, 02:19 PM

তবে দুঃসহ সেই স্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন ক্লাবে দারুণ কিছুর ব্যাপারে আশাবাদী রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার। বললেন, পুরনো বন্ধু ও সতীর্থদের উপস্থিতি তাকে ভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।

বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল বছরের শুরু থেকেই। কিন্তু সেটা আর আলোর মুখ না দেখায় গত ১ জুলাই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যান তিনি। তবে দুই পক্ষই আশাবাদী ছিল নতুন চুক্তির ব্যাপারে। কিন্তু ক্লাবের আর্থিক দুরাবস্থা ও লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এরপর গত অগাস্টে দুই বছরের চুক্তিতে পিএসজিতে যোগ দেন অনেক সময়ের সেরা দুই ফুটবলারের একজন মেসি।

ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৩৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার তুলে ধরেন সেই সময়ের কথা।

কোপা আমেরিকা জিতে ফুরফুরে মেজাজেই বার্সেলোনায় ফিরেছিলেন মেসি। নতুন মৌসুম নিয়ে ছক কষাও শুরু করে দিয়েছিলেন। কারণ বিশ্বাস ছিল, যেভাবেই হোক তাকে ক্লাবে ধরে রাখবে কাতালান দলটি। সেটা না হওয়ায় সব দিক দিয়েই বেকায়দায় পরে যান তিনি। কেননা নতুন ক্লাব বাছাইয়ের পাশাপাশি তাকে ভাবতে হচ্ছিল পরিবারকে নিয়েও।

"কোচ (রোনাল্ড কুমান) আমাকে অতিরিক্ত কিছুদিন ছুটি দিয়েছিলেন, তারপর (জুলাই মাসে কোপা আমেরিকা শেষে) নতুন মৌসুমের প্রস্তুতি নিতে বার্সেলোনায় ফিরেছিলাম।"

"ভাবনায় ছিল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেই অনুশীলন শুরু করব। আমার ধারণা ছিল, সবকিছু ঠিক হয়েই আছে এবং কেবল (চুক্তিতে) সই করাটাই বাকি।”

শেষ মুহূর্তে স্প্যানিশ ক্লাবটির পক্ষ থেকে মেসিকে জানানো হয়, নতুন চুক্তি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিরূপ পরিস্থিতিতে নিজের পরবর্তী গন্তব্য ও পরিবারকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পরে গিয়েছিলেন বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

"আমি বার্সেলোনায় ফেরার পর আমাকে বলা হয়েছিল যে এটা (নতুন চুক্তি) আর সম্ভব নয়, আমি থাকতে পারব না এবং আমাকে অন্য ক্লাব খুঁজতে হবে। কারণ বার্সার পক্ষে আমার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব নয়। এটা আমার সব পরিকল্পনা বদলে দিয়েছিল।”

"এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন ছিল। আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে এবং আমার পরিবারকে তাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে, এই ভাবনা ছিল খুব কঠিন।"

বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে পিএসজিতে যোগ দেন এই ফুটবল মহাতারকা যেখানে আগে থেকেই আছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ নেইমার। এছাড়াও দলটিতে আছেন আর্জেন্টিনার লেয়ান্দ্রো পারেদেস, আনহেল দি মারিয়া ও মাউরো ইকার্দি। দলের কোচও আর্জেন্টাইন, মাওরিসিও পচেত্তিনো। প্যারিসের ক্লাবটিতে আসার পেছনে চেনা মুখদের উপস্থিতি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানালেন মেসি।

"এটা আমার সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছিল, কারণ জানতাম যে আমি একটি নতুন দেশে যাচ্ছি এবং আমাকে শুরু থেকে শুরু করতে হবে। ড্রেসিংরুমে বন্ধুরা থাকায় নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হবে, এই ভাবনা কাজ করেছিল আমার মধ্যে।"

"এবং আমি ভুল ছিলাম না, কারণ মানিয়ে নেওয়াটা খুব সহজ ছিল। বিশেষ করে অনেক খেলোয়াড় আছে যারা আমার মতো স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে এবং কিছু বন্ধু যেমন ‘নেই’ (নেইমার), ‘লিয়া’ (লেয়ান্দ্রো), ‘ফিদেও’ (দি মারিয়া) এখানে আসার পর আমাকে সাহায্য করেছে।"

পিএসজিতে মেসির সঙ্গে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে গড়া দলটির আক্রমণভাগকে বলা হচ্ছে বর্তমান সময়ের সেরা। ব্রাজিলিয়ান তারকার সঙ্গে আগে খেললেও এমবাপের সঙ্গে আগে খেলেননি মেসি। একসঙ্গে কয়েকটি ম্যাচ খেলার পর এখনও অবশ্য এই ত্রয়ীকে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। তবে সাবেক বার্সেলোনা তারকা আশাবাদী, সময়ের সঙ্গে তারা তিনজন ছন্দ খুঁজে পাবেন।

"তার (এমবাপে) মতো একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া সহজ। তাছাড়া, কিলিয়ান নিখুঁত স্প্যানিশ বলে, তাই মাঠেও আমাদের কথাবার্তা হয়।”

"ছোট ছোট এই বিষয়গুলো সবকিছুকে আরও সহজ করে তোলে। আমি এখানে অল্প সময় হলো এসেছি, তাই এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আমরা সফল হবো।"