বেলজিয়ামকে কাঁদিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখল ফ্রান্স

অসাধারণ, রোমাঞ্চকর এক ফুটবল লড়াইয়ের সাক্ষী হলো তুরিনের আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়াম। উয়েফা নেশন্স লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক গল্প লিখল ফ্রান্স। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত বেলজিয়ামের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা বিরতির পর তিনবার জালে বল পাঠিয়ে পা রাখল ফাইনালে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2021, 08:41 PM
Updated : 7 Oct 2021, 09:50 PM

প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বৃহস্পতিবার রাতে ৩-২ গোলে জিতেছে ফ্রান্স। শিরোপা লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ আগের দিন ইতালির রেকর্ড অপরাজেয় যাত্রা থামানো স্পেন।

ম্যাচ শুরু হতেই ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে যায় লুকা ও থিও এরনঁদেজের নাম। ফ্রান্সের হয়ে ৪৭ বছর পর একই ম্যাচে খেলতে নামল দুই সহোদর। এর আগে ১৯৭৪ সালে রোমানিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন হার্ভে ও পাত্রিক রিভেই ভাইয়েরা।

ইতিহাসে নাম লেখানোর দিনে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করে ম্যাচের নায়ক জাতীয় দলের হয়ে মাত্রই দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা থিও এরনঁদেজ।

ম্যাচের প্রথমভাগের চিত্রটা ছিল পুরোই ভিন্ন। বল দখলে ফ্রান্স এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে আধিপত্য করে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল বেলজিয়াম। তিন মিনিটে ইয়ানিক কারাসকো ও রোমেলু লুকাকুর গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নেয় তারা।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে জেগে ওঠে ফ্রান্স। প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের তেমন কোনো পরীক্ষাই নিতে না পারা দলটি পরের ৪৫ মিনিটে একের পর এক আক্রমণে বেলজিয়ামকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। করিম বেনজেমার দারুণ গোলের পর স্পট কিকে ব্যবধান কমান কিলিয়ান এমবাপে। আর শেষে গিয়ে থিও এরনঁদেজের ওই ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোল।

বল দখলে প্রায় সমতার ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে ১৬টি শট নেয় ফ্রান্স, যার ছয়টি থাকে লক্ষ্যে। আর বেলজিয়ামের ১১ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে।

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক ও চার নম্বর দলের মধ্যে লড়াইটা প্রত্যাশিতভাবেই শুরু হয়। চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ।

তৃতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বেলজিয়াম, তবে কেভিন ডে ব্রুইনের শট দারুণ রিফ্লেক্সে ঝাঁপিয়ে ঠেকান ফরাসি গোলরক্ষক উগো লরিস। তিন মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে দ্রুত গতিতে বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন এমবাপে। তার প্রচেষ্টা অবশ্য রুখে দেন ডিফেন্ডার জেসন দিনায়ার।

শুরুর গতি কিছুক্ষণ পর কমে আসে। তবে মাঠের উভয় দিকে আক্রমণ চলতে থাকে সমানতালে। আক্রমণে বেলজিয়াম এগিয়ে থাকলেও প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণে নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না তারা।

ডেডলক অবশেষে ভাঙে ৩৭তম মিনিটে। ডে ব্রুইনের পাস ধরে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে নিখুঁত শটে প্রতিপক্ষের দুই জনের মাঝ দিয়ে বল জালে পাঠান কারাসকো। আগেই অন্যদিকে ঝুঁকে পড়া লরিস পোস্ট ঘেঁষে যাওয়া বল ঠেকানোর সুযোগই পাননি।

ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে ফ্রান্স। ডে ব্রুইনের পাস দু পায়ের মাঝ দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ফাঁকেই সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দেন লুকাকু। এরপর ক্ষিপ্র গতিতে বলের পিছু নিয়ে দুরূহ কোণ থেকে বুলেট গতির শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন চেলসি ফরোয়ার্ড।

প্রথমার্ধে বিবর্ণ অঁতোয়ান গ্রিজমান ৫৮তম মিনিটে যে সুযোগ মিস করেন, নিশ্চিতভাবেই সেই হতাশা অনেকদিন তাড়া করবে তাকে। ডান দিক দিয়ে একজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে এমবাপে পাস দেন গোলমুখে। তিন গজ দূরে বল পেয়েও শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পোস্টের বাইরে মারেন গ্রিজমান।

মরিয়া ফ্রান্সের মুখে চার মিনিট পর হাসি ফোটান এমবাপে-বেনজেমা জুটি। পিএসজি তারকা এবার বাঁ দিক দিয়ে একজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে বেনজেমাকে খুঁজে নেন। প্রতিপক্ষের চার জনে ঘিরে থাকা অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় গোলপোস্ট পেছনে রেখে বল ধরে শরীর ঘুরিয়ে নিচু শটে গোলটি করেন রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকার।

গত জুনে ইউরোর শেষ ষোলোয় সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে টাইব্রেকারে শেষ শট নিয়ে মিস করেছিলেন এমবাপে, ছিটকে গিয়েছিল ফ্রান্স। কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

৬৯তম মিনিটে বুলেট গতির স্পট কিকে সেই হতাশায় প্রলেপ দেন এমবাপে। ডি-বক্সে গ্রিজমানকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ইউরি টিলেমানস পেছন থেকে ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দেন রেফারি।

সমতায় ফিরে আরও চাপ বাড়ায় ফরাসিরা। ৭৮তম মিনিটে এগিয়েও যেতে পারত তারা; কিন্তু তাদের প্রথম প্রচেষ্টা রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর তরুণ মিডফিল্ডার ওহেলিয়ার শট ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া।

৮৭তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে লুকাকু আবারও জালে বল পাঠালে উল্লাসে মাতে বেলজিয়াম। কিন্তু অফসাইডে ছিলেন তিনি। দুই মিনিট পরই ফ্রি কিকে পোস্ট কাঁপান পল পগবা।

এর পরের মিনিটেই থিও এরনঁদেজের সেই গোল। বেলজিয়ামের রক্ষণ বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে ডি-বক্সে পেয়ে যান এসি মিলানের এই ডিফেন্ডার। পাশেই ছিলেন বেনজেমা, তবে তাকে পাস না দিয়ে নিজেই দারুণ শটে খুঁজে নেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা। উল্লাসে ফেটে পড়ে ফ্রান্স।

কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও বড় টুর্নামেন্টে গিয়ে বারবার পথ হারাচ্ছে বেলজিয়াম। ফেভারিটের মর্যাদায় এবারের ইউরোতে গিয়েও বিদায় নেয় শেষ আট থেকে। কদিন আগে দলটির কোচ রবের্তো মার্তিনেস বলেছিলেন, নেশন্স লিগ জিততে পারলে নতুন উচ্চতায় উঠতে পারবে তার দল। কিন্তু আরও একবার ব্যর্থতার কষ্ট নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বেলজিয়ামের এই সোনালী প্রজন্মকে।
আগামী রোববার নেশন্স লিগের দ্বিতীয় আসরের শিরোপা লড়াইয়ে নামবে ফ্রান্স ও স্পেন।

একই দিনে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইতালি ও বেলজিয়াম।