ইতালির অজেয় যাত্রা থামিয়ে ফাইনালে স্পেন

তিন মাস পরেই এসে গেল প্রতিশোধের সুযোগ! সেটা দারুণভাবে কাজে লাগাল স্পেন। ইতালির অজেয় যাত্রা থামাল তাদের মাঠেই। মধুর প্রতিশোধ নিয়ে লুইস এনরিকের দল পৌঁছাল নেশন্স লিগের ফাইনালে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2021, 08:44 PM
Updated : 6 Oct 2021, 09:19 PM

সান সিরোয় বুধবার রাতের সেমি-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে স্পেন। প্রথমার্ধে জোড়া গোলে সফরকারীদের চালকের আসনে বসান ফেররান তরেস। শেষ দিকে একটি গোল শোধ করেন লরেন্সো পেল্লেগ্রিনি। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা অবশ্য ১০ জন নিয়ে খেলে স্বাগতিকরা।

মিলানের এই মাঠে এবারই প্রথম হারল ইতালি। আর সব মিলিয়ে বিশ্ব রেকর্ড ৩৭ ম্যাচ পর হারের তেতো স্বাদ পেল রবের্তো মানচিনির দল।

চোটের জন্য দুই দলই শক্তি হারিয়েছে আক্রমণে। গোলের সংখ্যাতেই আছে এর ছাপ। এই ম্যাচে নামার আগে দুই দলেরই কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোল স্রেফ ১০টি করে! মাঠে অবশ্য এর প্রভাব পড়েনি খুব একটা। আক্রমণের পসরা মেলে প্রাণবন্ত ফুটবলই উপহার দিয়েছে দুই দল।

ম্যাচে ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে স্পেন গোলের জন্য শট নেয় ১৩টি, যার চারটি ছিল লক্ষ্যে। আর স্বাগতিকদের আট শটের পাঁচটি লক্ষ্যে ছিল।

গত জুলাইয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে স্পেনকে হারায় ইতালি। পরে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপাও জিতে নেয় তারা। ডাবল জেতা হলো না মানচিনির দলের। নেশন্স লিগে তাদের যাত্রা থেমে গেল শেষ চারেই।

ম্যাচে প্রথম সুযোগটা ইতালিই পায়। তবে ফেদেরিকো চিয়েসার দূরপাল্লার শট ঠেকিয়ে দেন উনাই সিমোন।

স্বাগতিকদের আক্রমণের ঝাপটা সামলে ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেয় স্পেন। পঞ্চদশ মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় তারা। মার্কোস আলনসোর ক্রস বিপজ্জনক জায়গায় পেয়ে যান পাবলো সারাবিয়া। তবে তার শট ঠেকিয়ে ইতালির ত্রাতা আলেস্সান্দ্রো বাস্তোনি।

এর দুই মিনিট পরেই তরেসের দারুণ ফিনিশিংয়ে এগিয়ে যায় স্পেন। মিকেল ওইয়ারসাবালের কাছ থেকে অস্বস্তিকর উচ্চতায় বল পেলেও ঠিকই জাল খুঁজে নেন ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড।

১৯তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ হতে বসেছিল। আলনসোর শট জানলুইজি দোন্নারুম্মার গ্লাভস থেকে ফস্কে গিয়ে লাগে পোস্টে। কয়েকগজ দূর থেকে কোনোমতে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান লিওনার্দো বোনুচ্চি।

৩৪তম মিনিটে ইতালির একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় পোস্ট লেগে। ফেদেরিকো বের্নারদেস্কির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন সিমন। যতটা চেয়েছিলেন ততটা দূরে পাঠাতে পারেননি, বল লাগে পোস্টে।

পরের মিনিটে সমতা আনার দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন লরেন্সো ইনসিনিয়ে। গোলরক্ষককে একা পেয়েও ১২ গজ দূর থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।

৪২তম মিনিটে বড় একটি ধাক্কা খায় ইতালি। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বোনুচ্চি।

এক জন কম নিয়ে খেলা ইউরো চ্যাম্পিয়নরা আরও পিছিয়ে যায় প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে। ওইয়ারসাবালের চমৎকার ক্রসে অরক্ষিত তরেস নিখুঁত হেডে খুঁজে নেন জাল।

এই গোলে আর্লিং হলান্ডের পাশে বসলেন তিনি। নেশন্স লিগে দুই জনেরই গোল ছয়টি করে।

সব মিলিয়ে জাতীয় দলের হয়ে ২১ ম্যাচে এটি তরেসের ১২তম গোল।

২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া ইতালি আক্রমণাত্মক ফুটবলে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে। তবে পাল্টা আক্রমণেই তাদের জবাব দেয় স্পেন।

৬৩তম মিনিটে স্কোরলাইন ৩-০ প্রায় করেই ফেলেছিল এনরিকের দল। ইয়েরেমি পিনোর দারুণ ক্রসে দূরের পোস্টে একটুর জন্য হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ওইয়ারসাবাল।

৭৮তম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন আলনসো। তার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন দোন্নারুম্মা। ফিরতি বলে ব্রায়ান গিলের শট ব্লক করেন ইতালির এক ডিফেন্ডার।

৮২তম মিনিটে প্রতি আক্রমণে দারুণ এক গোলে ব্যবধান কমায় ইতালি। স্পেনের কর্নার থেকে বল পেয়ে দারুণ গতিতে এগিয়ে যান চিয়েসা। স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের দুর্বল দুটি চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে পৌঁছে যান ডি-বক্সে। সিমোনকে এগিয়ে আসতে দেখে বল বাড়ান পেল্লেগ্রিনিকে। বাকিটা তিনি সারেন অনায়াসে।

বাকি সময়ে স্পেনকে বেশ চাপে রাখে ইতালি। কিন্তু ভাঙতে পারেনি সফরকারীদের জমাটরক্ষণ।

আগামী রোববারের ফাইনালে বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে খেলবে স্পেন।