ভারতকে রুখে দিল ‘১০ জনের’ বাংলাদেশ

পিছিয়ে পড়ার পর বিশ্বনাথ ঘোষের লালকার্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হলো বাংলাদেশ। হারের শঙ্কা জাগল প্রবলভাবে। কিন্তু রোমাঞ্চের তখনও ঢের বাকি। দারুণ এক হেডে উৎসবে মাতলেন ইয়াসিন আরাফাত। ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে রুখে দিল অস্কার ব্রুসনের দল।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 12:02 PM
Updated : 4 Oct 2021, 02:18 PM

মালদ্বীপের রাজধানী মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে সোমবার দুই দলের ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছে। সুনিল ছেত্রি প্রথমার্ধে ভারতকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৭৪তম মিনিটে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান ইয়াসিন।

সাফের ত্রয়োদশ আসরে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা অস্কার ব্রুসনের দলের দুই ম্যাচের পয়েন্ট ৪। নিজেদের প্রথম ম্যাচের  ড্রয়ে ১ পয়েন্ট ভারতের।

দুটি পরিবর্তন এনে ভারত ম্যাচের একাদশ সাজান অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ব্রুসন। সুমন রেজা ও জুয়েল রানার জায়গায় সুযোগ পান মতিন মিয়া ও সাদউদ্দিন। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সল্ট লেকে ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র ম্যাচে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন সাদউদ্দিন।

প্রথমার্ধে আক্রমণ সামলে মাঝেমধ্যে প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দেয় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ মিনিটে জামাল ভূইয়ার পাসে ইয়াসিন আরাফাতের দূরপাল্লার শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে যায়। তিন মিনিট পর মতিনের ক্রস ক্লিয়ার করেন রাহুল ভেকে। একাদশ মিনিটে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ক্রসে শট নিতে পারেননি কিংস ফরোয়ার্ড মতিন।

২১তম মিনিটে জামালের কর্নার ফেরান গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সান্ধু। একটু পর অধিনায়কের ফ্রি কিকে সাদউদ্দিনের প্রচেষ্টা যায় পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে।

বাংলাদেশের রক্ষণে চিড় ধরে ২৬তম মিনিটে। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা উদান্তা সিংয়ের কাটব্যাক খুঁজে নেয় ছেত্রিকে। প্লেসিং শটে জাল খুঁজে নেন ভারতের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

পরের মিনিটেই সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। দ্রুত পাল্টা আক্রমণে ওঠা মতিনের কাটব্যাকে শটও নিয়েছিলেন বিপলু আহমেদ। কিন্তু বল বেরিয়ে যায় দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে।

৩৫তম মিনিটে লিস্টন কোলাকোর শট সরাসরি জিকো বরাবর যায়। একটু পর ছেত্রির বাঁ পাঁয়ের বাঁকানো শট জিকোর গ্লাভস ছুঁয়ে কর্নার হয়।

কর্নার ফেরানোর পরই দ্রুত আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে মতিনের থ্রু পাস ধরে সাদউদ্দিন আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান বিপলুর উদ্দেশে। কিন্তু এ ফরোয়ার্ডের কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে আটকান ভারতের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গুরপ্রিত।

৫১তম মিনিটে সাদউদ্দিনের কাটব্যাকে বক্সে ফাঁকায় থাকা রাকিব হোসেন পা ছোঁয়ালেও বল বেরিয়ে যায় বাইরে দিয়ে।

এর পরপরই ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে কোলাকোকে পেছন থেকে টেনে ফেলে দিয়ে লাল কার্ড দেখেন বিশ্বনাথ ঘোষ। ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ।

জিকোর দৃঢ়তায় ৬১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়েনি। বাঁ দিক থেকে নেওয়া মানভির সিংয়ে শট ফেরানোর পর উদান্তার শটও আটকান বসুন্ধরা কিংসের এই গোলরক্ষক।

সাত মিনিটের মধ্যে তিনটি বদলি নামান ব্রুসন। ইব্রাহিমকে তুলে মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামানোর পর বিপলু ও মতিনের জায়গায় সোহেল রানা ও সুমন রেজাকে নামান। ১০ জনের দলে পরিণত হলেও লড়তে থাকে বাংলাদেশ। ৭৪তম মিনিটে মেলে গোলের দেখা।

বাঁ দিক থেকে নেওয়া জামালের কর্নারে লাফিয়ে ওঠা রাকিবের মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় দূরের পোস্টে। ইয়াসিন ছিলেন প্রস্তুত। কিছুটা ডাইভিং হেডে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। সমতায় ফেরার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ডাগআউট; গ্যালারিতে আসা বাংলাদেশের সমর্থকরাও। এরপরই রক্ষণের শক্তি বাড়াতে ফরোয়ার্ড রাকিবকে তুলে ডিফেন্ডার রহমত মিয়াকে নামান ব্রুসন।

৮৫তম মিনিটে মানভিরের শট ব্লক করেন তপু। বাকিটা সময় ভারত চাপ দিলেও বাংলাদেশের জালের নাগাল পায়নি। শেষের বাঁশি বাজতেই র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭২ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে মহামূল্যবান ১ পয়েন্ট পাওয়ার উৎসবে মাতে বাংলাদেশ।

২০০৩ সালের পর সাফে ভারতের বিপক্ষে জয়ের চাওয়াটা পূরণ হয়নি বটে। কিন্তু সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গত তিন ম্যাচে ছেত্রিদের দুইবার রুখে দিলেন জামাল-জিকোরা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম লেগে সল্ট লেকের ওই ড্রয়ের পর ফিরতি লেগে অবশ্য ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির এবারের আসরে আগামী বৃহস্পতিবার স্বাগতিক মালদ্বীপের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেই দলের সামনে সুযোগ থাকবে ২০০৫ সালের পর এই প্রতিযোগিতার ফাইনালের ওঠা অনেকটাই নিশ্চিত করার।