‘হৃদয় দিয়ে’ খেলতে চান হৃদয়

প্রাথমিক দলে তার ডাক পাওয়াটাই চমকপ্রদ ঘটনা। দুপুরে দেওয়া ২৬ জনের দলে ছিলেন না মোহাম্মদ হৃদয়। সন্ধ্যায় ডাক পেলেন ক্যাম্পে। ছয় দিনের অনুশীলনে কোচের নজর কেড়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ২৩ জনের চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নিলেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার! হৃদয়ের নিজেরও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই তরুণ জানালেন উচ্ছ্বাস, আনন্দ, আগামী দিনের ভাবনা। সেখানে বেশ পরিণত তিনি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2021, 10:12 AM
Updated : 28 Sept 2021, 10:28 AM

মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ত্রয়োদশ আসর। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ অস্কার ব্রুসনের দলে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হৃদয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক ধাপ পেরিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া ১৯ বছর বয়সী এই উঠতির সামনে এখন সেরা একাদশে জায়গা করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ।

পাইওনিয়ার দিয়ে শুরু

বাড়ির বড় ছেলে। খেলাধুলার চেয়ে পড়ালেখার দিকে ঝুঁকবে, বাবা-মায়ের চাওয়া ছিল এমনই। কিন্তু হৃদয়কে টানল ফুটবল। পরিবারের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন মাঠে; নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় কোচ জাকির হোসেনের কাছে ফুটবলের পাঠ নিতে। জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার তপু বর্মনও ছিলেন এই কোচের ছাত্র।

“এলাকার বড় ভাইদের দেখে ফুটবল খেলা শুরু করি। আস্তে আস্তে বুট পায়ে খেলা শুরু হলো। ফুটবলে আমার প্রথম কোচ জাকির হোসেন। তপু বর্মন ভাই কিন্তু এই কোচের হাতে গড়া। আমার আর তপু ভাইয়ার বাসা পাশাপাশি। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। উনাদের দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম ছোটবেলায়। শুরুর দিকে জার্সি, বুট, প্যান্ট সবই বড় ভাইদের কাছ থেকে পেতাম।”

২০১৪ সালে ঘরোয়া ফুটবলের পঞ্চম স্তরের প্রতিযোগিতা পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের আঙিনায় যাত্রা শুরু। এরপর তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগ হয়ে আবাহনী লিমিটেডে যোগ দেওয়া। ২০১৯ সালে আবাহনীতে যোগ দেওয়াও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে।

“পাইওনিয়ারে খেললাম ২০১৪ সালে, এরপর জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার পর তৃতীয় বিভাগে নারায়ণগঞ্জের একাডেমির হয়ে খেলেছি। দ্বিতীয় বিভাগ খেলেছি পূর্বাচল পরিষদের হয়ে। প্রথম বিভাগ খেলেছি ঢাকা ফ্রেন্ডস সোশাল অর্গানাইজেশনের হয়ে।”

“এরপর অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে আবাহনীর হয়ে খেলার কথা ছিল, ট্রায়াল দিলাম। বাছাইয়ে টিকে গেলাম। তখন শুনলাম যারা প্রথম বিভাগে খেলেছে, তারা অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না। ট্রায়ালে আমার খেলা দেখে আবাহনীর সিনিয়র ভাইদের অনেকের ভালো লেগেছিল। তারাই ক্লাবকে বলল, ওদের ছেড়ে না দিয়ে মূল দলে অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হোক। যদি টিকে যায়, টিকে গেল।”

সেখান থেকেই তার প্রথম সারির ফুটবলে উঠে আসা

অনুশীলনে বাংলাদেশ জাতীয় দল।

“ক্লাব থেকে ফোন করে বলা হলো মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে। চার-পাঁচ দিন অনুশীলন করলাম। এরপর আবাহনী আমাকে দলে নিয়ে নিল। ২০১৯ সালের কথা। লিগে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের বিপক্ষে, ১০ থেকে ১৫ মিনিট খেলেছিলাম। ওটা ছিল লিগে আবাহনীর শেষ ম্যাচ।”

লেমোস ও ব্রুসনের পরিচর্যা

করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া ২০১৯-২০ মৌসুমে আবাহনীর হয়ে খেলা হয়নি হৃদয়ের। ২০২০-২১ মৌসুমে খেলেন ১৪ ম্যাচ। অধিকাংশ ম্যাচেই তাকে বদলি নামান আবাহনী কোচ মারিও লেমোস। তবে এই পর্তুগিজ কোচের আন্তরিকতা হৃদয়ের বেড়ে ওঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

“এর আগে অন্য যেখানে ছিলাম, সেখানকার পরিবেশ আর আবাহনীর পরিবেশ আকাশ-পাতাল তফাত। এখানে এসে বুঝলাম এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। আবাহনীতে সতীর্থ, কোচ লেমোসের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, তবে এখনও শেখার বাকি আছে। জুনিয়রদের লেমোস আরও বেশি যত্ন নেন। যদি কোনো ভুল করি, তাহলে তিনি বলেন-কোনো সমস্যা নেই। পরেরবার আরও ভালো করে চেষ্টা কর। উনি খুব পরিশ্রমী এবং মিশুক।”

ব্রুসনের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন ছয় দিন। বোঝাপড়ার জন্য যথেষ্ট সময় নয় অবশ্যই। কিন্তু এই স্প্যানিশ কোচের ভাবনা বুঝে নিয়েছেন হৃদয়।

“আমার কাছে মনে হয়েছে ব্রুসন পাসিং ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করেন। প্রস্তুতির জন্য সময় কম বলে তার সঙ্গে সেভাবে কথা হয়নি। তবে দলীয় অনুশীলনের মধ্যে কয়েকবার এসে বেশ কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিভাবে খেলতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে কোন পজিশনে থাকতে হবে-সেগুলো বুঝিয়েছেন।”

বয়সভিত্তিক দল দিয়ে জাতীয় দলের পথে

২০১৫ সালে সিলেটে হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই দলের সাদউদ্দিন, মোহাম্মদ আতিকুজ্জামানরা শিরোনামে এসেছিলেন। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বলেই আড়ালে ছিলেন হৃদয়।

২০১৯ সালে নেপালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রার্নাসআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। হৃদয় ছিলেন দলের সঙ্গী। খেলেছিলেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়েও। এবার পালা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে রঙ ছড়ানোর। তবে তাড়াহুড়ো নেই হৃদয়ের। ধীর পায়ে এগুতে চান অভিষ্ঠ লক্ষ্যে।

“এ মুহূর্তে আমার কাছে প্রাথমিক স্কোয়াডে(২৩ জনের দলে) থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দলে আছি। খুবই খুশি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। যদি সাফে খেলতে নাও পারি, তবুও খুশি। দলে থাকাটাই বড় কথা আমার কাছে। প্রস্তুতির সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ভালো করে দলে জায়গা পেতে, সেটা পেয়েছি।”

“সত্যি বলতে দলে সুযোগ পেয়েই খুশি। আরও ভালো খেলে মূল দলে সুযোগ পেতে চাই। কিন্তু আমার পজিশনে দলে যারা আছেন, জামাল ভূইয়া, আতিকুর রহমান ফাহাদ, তারা অনেক অভিজ্ঞ, প্রিমিয়ার লিগেও তারা এই পজিশনগুলোতে দলের কাছে নির্ভরযোগ্য। তাদেরকে পেছনে ফেলে যদি সুযোগ না পাই, তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমার ভাবনা একদিন মূল দলে খেলব। দেশের মানুষ আমার কাছে অনেক কিছু আশা করবে-এই অবস্থায় পৌঁছাতে চাই একদিন।”