আমি উইনার কিন্তু জাদুকর নই: ব্রুসন

বাংলাদেশ দলের হাল ধরার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এলেন অস্কার ব্রুসন। ভাঙা বাংলায় ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে শুরু করলেন কথা। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে পাওয়া সাফল্যের উদাহরণ টেনে স্বপ্ন দেখালেন। আবার মাত্র এক সপ্তাহে ফুটবলকে বদলে দেওয়া যায় না-মনে করিয়ে দিলেন এই বাস্তবতাও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 12:28 PM
Updated : 22 Sept 2021, 12:28 PM

জেমি ডেকে দুই মাসের ‘ছুটি’ দিয়ে ব্রুসনকে দায়িত্বে এনেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। 

এরই মধ্যে নতুন কোচ ঘোষণা করেছেন তার প্রথম দল। জানিয়েছেন জাতীয় দল নিয়ে নিজের ভাবনার কথা। বুধবার বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সবার আগে স্মরণ করেছেন যার জায়গায় এসেছেন সেই জেমির কথা।   

“সাবেক কোচের প্রশংসা দিয়েই শুরু করছি। গত দুই বছর তিনি আমাদের সংস্পর্শে ছিলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন, দারুণ কাজ করেছেন, সাম্প্রতিক ট্যুরগুলোতে তিনি যে ফল করেছিলেন, সেটা হয়ত বাফুফের চাওয়া অনুযায়ী ছিল না, কিন্তু আমি নিশ্চিত তিনি সেরা চেষ্টাই করেছিলেন। একজন সহকর্মীর স্থলাভিষিক্ত হওয়া দুঃখের। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারছি। এই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছি।”

“গত কয়েকদিন ধরে আপনাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক টানাপোড়েনের কারণে আমি উত্তর দিতে পারিনি। বাফুফে সভাপতি ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতিকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার দায়িত্ব পাওয়াটা সম্ভব করেছেন তারা।”

২০০৩ সালে প্রথম ও সর্বশেষ এ শিরোপা জয়ের স্মৃতিতে ধুলো জমা পড়েছে অনেক। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ এই ফুটবল আসরে গত চার আসরে গ্রুপ পর্বেই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের অভিযান। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়া ব্রুসনের সামনের পথটা তাই ভীষণ কঠিন।

ঘরোয়া ফুটবলে অবশ্য কিংসের কোচ হিসেবে দারুণ সময় কেটেছে ব্রুসনের। ২০১৮ সালে দলটির দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি করে প্রিমিয়ার লিগ ও স্বাধীনতা কাপ এবং একটি ফেডারেশন কাপের স্বাদ পেয়েছেন ব্রুসন। ক্লাব পর্যায়ের এই সাফল্যে স্বপ্ন দেখছেন ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিলেন বাস্তবতাও।

“যখন আমি কিংসের দায়িত্বে ছিলাম, তখন আপনাদের অনেকবার বলেছি-আমি একজন উইনার। আমি জয়ের জন্য খেলি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সাফের দলগুলোর মধ্যে আমরা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় দল। কিন্তু এটাও সত্যি যে, আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে। আমি এখানে ফাইনাল খেলার জন্য এসেছি এবং এই চাওয়াটা আপনাদের কাছে লুকাচ্ছি না।”

“ক্লাব ও জাতীয় দল ভিন্ন ব্যাপার। আমি প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের কোচিং করাতে যাচ্ছি। এই সুযোগ আগে কখনও পাইনি। প্রথমবারের মতো ডাগআউটে দাঁড়াব একটা পুরো দেশের প্রতিনিধি হয়ে। আমি একজন লড়াকু সৈনিক। সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করব। কোনো সন্দেহ নেই এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সবাই জানে, বাংলাদেশের সবাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে কী ভাবে। তাই অনেক হিসেব কষে, ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে এখানে এসেছি।”

সাফে এবার অংশ নেওয়া পাঁচ দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ভারত (১০৭), এরপর মালদ্বীপ (১৬০) ও নেপাল (১৬৮)। বাংলাদেশের (১৮৯) চেয়ে পিছিয়ে কেবল শ্রীলঙ্কা (২০৫)। ব্রুসন অবশ্য নেপাল ও মালদ্বীপের সঙ্গে নিজেদের খুব বেশি ব্যবধান দেখছেন না।

“সাফের প্রতিপক্ষ নিয়ে শুরুতেই বলব, বাস্তবতাকে লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের পর কেবল শ্রীলঙ্কা আছে। বাকি তিনটি দলই উপরে। আমার কাছে বাস্তবতা ভিন্ন। যদি আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জিততে পারি এবং আমার মনে হয়, নেপাল ও মালদ্বীপ আমাদের চেয়ে ভালো দল নয়, তারা আমাদেরকে হারাতে পারে, ড্র করতে পারে আবার আমরা তাদের হারাতেও পারি। আমি বিশ্বাস করি, এই টুর্নামেন্টে মালদ্বীপ ও নেপালই আমাদের মূল প্রতিপক্ষ।”

“ভারতের ব্যাপারে যদি বলি, সেখানে অনেক বছর কাজ করেছি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে হয়তবা ওরা অনেক এগিয়ে। টেকনিক্যাল ও টেকটিক্যাল পর্যালোচনা যদি করা হয়, তারা আমাদের মানের। তাদের দলে এমন ব্যক্তিগত নৈপুণ্য নির্ভর কোনো খেলোয়াড় নেই, যারা একাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী কিছু খেলোয়াড় তাদের আছে। বেঙ্গালুরু, মোহন বাগন, চেন্নাই সিটির দলগুলো তাদের খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করছে এবং এ কারণে তাদের জাতীয় দলে সুবিধা পাচ্ছে। তারপরও আমি বলব আমাদের মূল প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।”

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনুশীলন শুরু করবে দল। ব্রুসন শুরুতেই খুব বেশি পরিবর্তন আনতে রাজি নন।

“ক্লাব ও জাতীয় দলে পার্থক্য হচ্ছে, ক্লাবে আমাকে প্রতিদিন কাজ করতে হয়। এখানে আমি মাত্র সাত দিন সময় পাচ্ছি। লজিস্টিক সাপোর্টের কথা বলতে তেমন পার্থক্য নেই-কিংসের হয়ে সেখানে খেলে এসেছি, সেখানে একই হোটেলে থাকব, একই মাঠে অনুশীলন করব। তাই এ সময়ে বলের উপর ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো, বল ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিব, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণের জন্য বলের নিয়ন্ত্রণে জোর দিব। প্রথম দু-তিন দিনের অনুশীলনে এটা গুরুত্ব দিব, সেটা হলে গেলে পজিশনভিত্তিক, স্কোরিং এসব দিক দিয়ে কাজ করব।”

প্রাথমিক দলে কিংসের ১০ শিষ্যকে পাচ্ছেন ব্রুসন। বাকিদের এই অল্প সময়ের মধ্যে দলের পরিকল্পনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বার্তাও দিলেন কোচ।

“টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল বিষয়ে (কিংস ও জাতীয় দলের) পার্থক্যটা আপনারা অনেকেই জানেন। তবে এখানে আমার সুবিধা আছে, জাতীয় দলের ১০ জন খেলোয়াড় এখানে আছে, যারা পুরোপুরি আমার ধ্যান-ধারনা জানে এবং এ কারণেই আমি কোচিং স্টাফদের নিয়ে এসেছি। কারণ, আমাদের হাতে অত সময় নেই কোচিং স্টাফদের নতুন করে আমার পরিকল্পনা বোঝানোর।”

“ক্লাবের হয়ে অনেক কিছু জিতেছি, প্রমাণ করেছি। এখন সময় এসেছে এই পজিশনে (জাতীয় দলের কোচ হিসেবে) নিজেকে প্রমাণ করার। যখন বুঝতে পেরেছি, তারা সবাই বিশ্বাস করে আমি পরিবর্তন আনতে পারি, তখন এ দায়িত্ব নিয়েছি। আমি একটা কৌশল কাজে লাগিয়ে তিন বছর এখানে সাফল্য পেয়েছি, হয়ত একই চেষ্টা আমি জাতীয় দল নিয়ে করতে পারি। সেটা ক্লিক করলে দারুণ একটা ব্যাপার হবে। যদি ক্লিক নাও করে, তাহলে বিকল্প চিন্তা করা যাবে সাফের পর।”

আপাতত ফিটনেসের মতো ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন না ব্রুসন। প্রতিযোগিতা যখন দুয়ারে তখন খেলার কৌশল সাজানোই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তার কাছে।

“এখন ফিটনেস নিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। এটা কম্পিটিশন টাইম। ট্রেনিং টার্ম নয়। টেকনিক্যাল-টেকটিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করব। ৪-৩-৩ ও ৪-৪-২ এই ফরমেশন নিয়ে কাজ করব। খুব অল্প সময়ের মধ্যে যার যার পজিশনে মানিয়ে নিতে হবে।”