এক বছরের কম সময় আগে কাতালুনিয়ার দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের মাঠে অপরাজিত ছিল টানা ৩৮ ম্যাচ। কিন্তু বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে একেবারেই ভিন্ন কথা। কাম্প নউয়ে তাদের শেষ তিন ম্যাচের ফল- ইউভেন্তুসের বিপক্ষে ৩-০ গোলের হার, পিএসজির বিপক্ষে ৪-১ গোলের হার এবং সবশেষ বায়ার্নের কাছে ভরাডুবি।
এবারের স্কোরলাইন হয়ত ২০১৯-২০ মৌসুমের কোয়ার্টার-ফাইনালের সেই ৮-২ গোলে হারের মতো মহাবিপর্যয়কর, নির্মম নয়; কিন্তু ওই ম্যাচে দলের পারফম্যান্সে কিছুটা হলেও মরিয়া ভাব ছিল। কিন্তু এবার কুমানের দল শেষ করেছে বায়ার্নের পোস্টে কোনো শট নিতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে!
অতীতেও মাঝে মধ্যে দল খারাপ সময় কাটিয়েছে, কিন্তু কাম্প নউয়ে সমর্থকরা প্রায় সবসময়ই দলের পাশে থেকেছে। সেখানে এবার কিছু সমর্থকরা দলের পারফরম্যান্স দেখে দুয়ো দিয়েছেন। দলের বল দখলে নেওয়ার মুহূর্তে করতালি দেওয়ার ঘটনাও ছিল বিরল।
কোচ কুমানও একমত পিকের সঙ্গে। অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে এই ডাচ কোচের কথায়। বলেছেন, চোটের ছোবলের কারণে ৩-৫-২ রক্ষণাত্মক ফরমেশনের বাইরে তার ভাবার সুযোগ ছিল খুবই কম। যে কারণে আগের রাতে জ্বরে আক্রান্ত হলেও লেফট-ব্যাক জর্দি আলবাকে খেলাতে হয়েছে। হাতে ছিল মাত্র দুজন ফরোয়ার্ড। সের্হি রবের্তোকে তাই খেলাতে হয়েছে রাইট উইংয়ে।
বার্সেলোনা ম্যাচটি শেষ করেছে মাঠে চার টিনএজার নিয়ে এবং ‘ঘোর অন্ধকারে’ মোড়ানো সন্ধ্যায় তাদের জন্য একটু আশার আলো ছিল এই প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ খেলোয়াড়রা। কুমানও জোর দিয়ে বলেছেন, গাবি এবং আলেক্স বালদের মতো খেলোয়াড়রা আরও অভিজ্ঞ হলে আগামী কয়েক বছর পর বার্সেলোনা ভালো দল হয়ে উঠবে।
অবশ্য বর্তমান চোট সমস্যার সমাধান হলে দলের কিছুটা উন্নতি হবে এবং সেই সঙ্গে সৌভাগ্যও ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করলেন কুমান। কিন্তু দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা খুবই কম। বার্সেলোনায় আসার পর থেকে অনেকটা সময়ই চোটে ভুগেছেন উসমান দেম্বেলে। চোটের কারণেই প্রায় ১০ মাস ধরে মাঠের বাইরে আছেন আনসু ফাতি। হাঁটুতে দুটি অস্ত্রোপচারের পর এখন ফেরার অপেক্ষায় আছেন দারুণ সম্ভাবনাময় এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
কাতালানদের ভাগ্য ভালো যে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে তারা দিনামো কিয়েভ ও বেনফিকার মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলকে পেয়েছে। এই দুই দলকে পেছনে ফেলে তারা গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোয় ওঠার আশা করতেই পারে।
কিন্তু নকআউট পর্বের মঞ্চে ওঠার পর তাদের মুখোমুখি হতে হবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের। সেখানে আবারও বিপর্যয়কর রাতে তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে পারে কুমানের দলের।
পরিস্থিতি এমন যে, গত এক দশকে যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তিনবার জিতেছে বার্সেলোনা, সেই দলের ডিফেন্ডার পিকে সোজাসাপ্টা স্বীকার করে নিয়েছেন, তারা এই প্রতিযোগিতার ফেভারিটদের মধ্যে নেই। আর পিকের সৎ স্বীকারোক্তি স্থানীয় গণমাধ্যমের শিরোনামেও প্রতিফলিত হয়েছে।
স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা তাদের প্রচ্ছদে লিখেছে ‘নিম্নমানের বার্সা’। কাতালান দৈনিক পত্রিকা স্পোর্ত বিষন্ন বদনে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের কাম্প নউ ছাড়ার ছবি দিয়ে শিরোনাম দিয়েছে, “করুণ বাস্তবতা”।