বায়ার্নে আবারও ধরাশায়ী বার্সেলোনা

‘এটা প্রতিশোধের মঞ্চ, পুরনো ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ’-কোচের দেওয়া হুঙ্কারে তাল মেলাতে পারলেন না সের্হিও বুসকেতস ও তার সতীর্থরা। বরং পুরোটা সময়ই মাঠের দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে রইল বার্সেলোনা। ম্যাচজুড়ে তাদেরকে কোণঠাসা করে রেখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নতুন অভিযান শুরু করল বায়ার্ন মিউনিখ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2021, 08:50 PM
Updated : 14 Sept 2021, 09:49 PM

মেসি-পরবর্তী যুগে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে খেলতে নেমে একরাশ হতাশাই উপহার দিল বার্সেলোনা। কাম্প নউয়ে মঙ্গলবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে তাদেরকে ৩-০ গোলে হারায় বায়ার্ন। টমাস মুলারের সৌভাগ্যসূচক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জোড়া গোল করেন রবের্ত লেভানদোভস্কি।

আর্থিক দুর্গতিতে লিওনেল মেসি চলে গেছেন। ধারে অন্যত্র পাঠাতে হয়েছে অঁতোয়ান গ্রিজমানকে। শক্তি কমেছে অনেক। আছে চোট ধাক্কাও। তারপরও বার্সেলোনার এমন বিবর্ণ রূপ সমর্থকদের জন্য ভীষণ হতাশার।

বল দখলে দুই দলের মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে আক্রমণে কিছুই করতে পারেনি বার্সেলোনা। গোলের উদ্দেশে তারা পাঁচটি শট নিলেও তার কোনোটিই ছিল না লক্ষ্যে। বিপরীতে একচেটিয়া আধিপত্য করা বায়ার্নের ১৭ শটের সাতটি ছিল লক্ষ্যে।  

বায়ার্নের বিপক্ষে তাদের হতাশার রেকর্ড আরও বাজে হলো। এই নিয়ে জার্মান ক্লাবটির বিপক্ষে অষ্টমবার হারল তারা; ১২ ম্যাচে বায়ার্ন জিতেছে ৮বার, বার্সেলোনা ২বার, বাকি দুটি ড্র।

১১ মাস আগে লিসবনে বার্সেলোনার সেই ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার ম্যাচে দু’দল মিলিয়ে প্রথম আধা ঘণ্টায়ই পাঁচবার গোল উদযাপন করেছিল। সেখানে এবার প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগের দেখা মেলে ১৯তম মিনিটে। লেরয় সানের শট বার্সেলোনার একজনের পায়ে লেগে সামান্য দিক পাল্টানোয় বিপদ হতে পারত, দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন মার্ক আন্ড্রে টের স্টেগেন।

২৭তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পায় বায়ার্ন। ডি-বক্সে ডান দিকে ফাঁকায় দাঁড়ানো জামাল মুসিয়ালাকে খুঁজে নেন মুলার। তরুণ মিডফিল্ডার জায়গা বানিয়ে শট নিতে একটু দেরি করে ফেলেন, ছুটে গিয়ে স্লাইডে ব্লক করেন জেরার্দ পিকে।

ছয় মিনিট পর আরেকটি ডিফ্লেক্টেড শটে দলকে আর বাঁচাতে পারেননি টের স্টেগেন। বলা ভালো, কোনো সুযোগই পাননি তিনি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মুলারের শট এরিক গার্সিয়ার গায়ে লেগে অনেকখানি দিক পাল্টে বল জালে জড়ায়। অন্যদিকে ঝুঁকে পড়া জার্মান গোলরক্ষকের কিছুই করার ছিল না।

প্রথমার্ধে আক্রমণে বার্সেলোনা ছিল বিবর্ণ। তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা, পারেনি গোলের উদ্দেশে কোনো শট নিতেও। অন্তত ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের কোনো হোম ম্যাচে প্রথমার্ধে একটি শটও নিতে পারল না তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নেয় বার্সেলোনা। তবে বুসকেতসের শট পা বাড়িয়ে রুখে দেন মুলার। তিন মিনিট পর দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান বাড়তে দেননি টের স্টেগেন। সানের শট পা বাড়িয়ে ঠেকান তিনি।

৫৬তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করে বায়ার্ন। ১৮ বছর বয়সী মুসিয়ালার বুলেট গতির শট পোস্টে লেগে ফেরার পর ছয় গজ বক্সের মুখে থাকা লেভানদোভস্কি সহজেই বল জালে পাঠান।

৮৫তম মিনিটে অনেকটা একইভাবে ব্যবধান আরও বাড়ান লেভানদোভস্কি। সের্গে জিনাব্রির শট পোস্টে লেগে ফেরার পর বল ধরে এক ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন পোলিশ তারকা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার মোট গোল হলো ৭৫টি, ৯৭ ম্যাচে।

চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জালের দেখা পেয়েছেন লেভানদোভস্কি। ৬ ম্যাচে তার গোল হলো ১০টি।

বাকি কয়েক মিনিটেই অন্তত আরও দুটি গোল পেতে পারত ২০১৯-২০ আসরের চ্যাম্পিয়নরা। নিজেদের ভুলেই পারেনি তারা।

শেষ দিকে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় ছিল যেন প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ, লক্ষ্যহীন। ডাগআউটে কোচের চোখে-মুখে একইসঙ্গে হতাশা ও বিরক্তি। সামনের ব্যস্ত সূচিতে দলকে পথে ফেরাতে চটজলদি কোনো পরিকল্পনা আঁটতে হবে কুমানকে।  

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারল বার্সেলোনা। সবশেষ, আসরে প্রথম ম্যাচে তাদের হারের তেতো স্বাদ দিয়েছিল নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ৩-২ গোলে।

বেনফিকা ও দিনামো কিয়েভের মধ্যে গ্রুপের অন্য ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে।