রোনালদোর গোলের পর ইয়াং বয়েজের গর্জন

রেকর্ড ছোঁয়ার ম্যাচে শুরুতেই জালের দেখা পেলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। কিন্তু দারুণ শুরুর পর পথ হারিয়ে ফেলল তার দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পরিণত হলো ১০ জনের দলে। একজন বেশি থাকার সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদের চেপে ধরল ইয়াং বয়েজ। তুলে নিল স্মরণীয় এক জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2021, 06:47 PM
Updated : 14 Sept 2021, 09:19 PM

২০২১-২২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের উদ্বোধনী দিন মঙ্গলবার ঘরের মাঠে ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছে সুইজারল্যান্ডের দল ইয়াং বয়েজ।

পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশে ইউনাইটেড শট নিতে পারে কেবল দুটি, সেটিও আবার প্রথম ২৫ মিনিটে! রোনালদোর নেওয়া ওই দুটি শটই লক্ষ্যে ছিল, যার একটিতে মেলে সাফল্য। বলা যায়, ম্যাচের বাকি সময়ে আধিপত্য করে ইয়াং বয়েজ। ৫৪ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে তারা গোলের জন্য শট নেয় মোট ১৯টি, যার পাঁচটি লক্ষ্যে।

গত শনিবার প্রিমিয়ার লিগে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে দলের ৪-১ ব্যবধানের জয়ে জোড়া গোল করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দ্বিতীয় অভিষেক রাঙান রোনালদো। পুরনো দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরাটাও হতে পারত দুর্দান্ত, অন্তত আভাস তো তেমনই ছিল। মাঠে নেমেই প্রতিযোগিতাটিতে ইকের কাসিয়াসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করেন পর্তুগিজ তারকা। দুই জনেরই ম্যাচ সংখ্যা ১৭৭টি করে।

খানিক বাদে তিনি পেয়ে যান গোলের দেখাও। ত্রয়োদশ মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগেই দলকে এগিয়ে নেন রোনালদো। বাঁ দিক থেকে দারুণ এক ক্রস বাড়ান তার জাতীয় দল সতীর্থ ব্রুনো ফের্নান্দেস। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে আট গজ দূর থেকে রোনালদোর শট গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়ায়।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদোর গোল সংখ্যা বেড়ে হলো ১৩৫টি। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুটি আলাদা মৌসুমে আসরের প্রথম গোল করলেন তিনি। ২০০৯-১০ আসরের প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে, এফসি জুরিখের বিপক্ষে ৫-২ গোলে জয়ের ম্যাচে।

প্রতিযোগিতাটিতে এই নিয়ে ভিন্ন ৩৬টি দলের বিপক্ষে জালের দেখা পেলেন রোনালদো। এর বেশি নেই আর কারও। ৩৬টি দলের বিপক্ষে গোল করেছেন গ্রীষ্মের দলবদলে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যাওয়া লিওনেল মেসিও।

৩০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৬৮ ম্যাচে রোনালদো গোল করলেন ৬৩টি। প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে ৩০ বা এর বেশি বয়সে অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে যা ৩৫টি বেশি।

২৪তম মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে আচমকা শট নেন ইয়াং বয়েজের ক্রিস্টিয়ান ফাসনাখট। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়া। পরক্ষণেই পাল্টা আক্রমণে সতীর্থের পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে দুরূহ কোণ থেকে রোনালদোর নেওয়া শট ফেরান স্বাগতিক গোলরক্ষক।

৩৫তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় ইউনাইটেড। প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডার ক্রিস্টোফার পেরেইরাকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ইংলিশ ডিফেন্ডার অ্যারন ওয়ান- বিসাকা।

তিন মিনিট পর সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন ফাসনাখট। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের ক্রস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে বাইরে মেরে বসেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ডি-বক্সে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের চ্যালেঞ্জে রোনালদো পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করেন তিনি। তবে রেফারির সাড়া মেলেনি।

৬৬তম মিনিটে সমতায় ফেরে ইয়াং বয়েজ। ডান দিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো বলে কাছ থেকে গোলটি করেন ক্যামেরুনের উইঙ্গার এনগামালেও।

৭২তম মিনিটে রোনালদো ও ফের্নান্দেসকে তুলে নিয়ে জেসে লিনগার্ড ও নেমানিয়া মাতিচকে মাঠে নামান কোচ উলে গুনার সুলশার। সেই লিনগার্ডের মারাত্মক ভুলেই শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে বসে ইউনাইটেড।

পাঁচ মিনিটের যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে চারপাশে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও গোলরক্ষকের উদ্দেশে ব্যাকপাস বাড়ান তিনি। বলে জোর ছিল না তেমন। ছুটে গিয়ে দে হেয়াকে পরাস্ত করেন থিওসন সিবাচু। উল্লাসে ফেটে পড়ে ইয়াং বয়েজ।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে তিনবারের দেখায় এটাই ইয়াং বয়েজের প্রথম জয়। এর আগে ২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে দলটির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৩-০ গোলে হারের পর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল সুইজারল্যান্ডের ক্লাবটি।