জোকোভিচের স্বপ্ন ভেঙে মেদভেদেভের প্রথম

ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যামে নজর রেখে এগিয়ে চলা নোভাক জোকোভিচ ফাইনালের মঞ্চে খেই হারালেন। দেখা মিলল না তার সেই হার না মানা মানসিকতার। কোর্টের অন্য প্রান্তে দানিল মেদভেদেভ নিজের সেরাটা মেলে ধরার জন্য বেছে নিলেন এই দিনটিকেই। ক্যারিয়ারে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি ইতিহাস গড়ার খুব কাছাকাছি থাকা প্রতিপক্ষকে স্রেফ গুঁড়িয়ে দিয়ে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2021, 04:04 AM
Updated : 13 Sept 2021, 04:04 AM

বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে জোকোভিচের বিপক্ষে সরাসরি সেটে হেরে মেজর শিরোপার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয়েছিল মেদভেদেভের। সাত মাস পর ইউওস ওপেনের ফাইনালে সেই একই প্রতিপক্ষ পেয়ে এবার শেষটা ঠিকই রাঙালেন এই রুশ তারকা। জোকোভিচকে হারটা ফিরিয়ে দিলেন ঠিক একইভাবে, সরাসরি সেটে।

নিউ ইয়র্কের ফ্লাশিং মিডোসে স্থানীয় সময় রোববারের ফাইনালে মেদভেদেভের জয় ৬-৪, ৬-৪, ৬-৪ গেমে।

গ্র্যান্ড স্ল্যামে তৃতীয় ফাইনালে এসে শিরোপার স্বাদ পেলেন দ্বিতীয় বাছাই মেদভেদেভ। গত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আগে ২০১৯ সালের ইউএস ওপেনে রাফায়েল নাদালের বিপক্ষে হেরেছিলেন তিনি।

বছরের প্রথম তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন জিতে জোকোভিচ সম্ভাবনা জাগান ৫২ বছর পর প্রথম কোনো পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের। সার্ব তারকা নিজেই বলেছিলেন, করতে পারলে এটা হবে তার ক্যারিয়ারের ‘সবচেয়ে বড় অর্জন।’

এর আগে দুবার বছরের তিনটি করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন জোকোভিচ, ২০১১ ও ২০১৫ সালে। হলো না এবারও। সবশেষ পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ডটা রইল রড লেভারের কাছেই। ১৯৬৯ সালে এই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। 

আরও একটি রেকর্ডের হাতছানি ছিল জোকোভিচের সামনে, রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালকে টপকে পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ গ্র্যান্ড জয়ের। গত জুলাইয়ে উইম্বলডন জিতে ফেদেরার ও নাদালের ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড ছুয়েঁছিলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা তারকা জোকোভিচ।

এত এত অর্জনের মুখে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশার চাপেই কী না, পুরো ম্যাচেই জোকোভিচ থাকেন নিজের ছায়া হয়ে। বারবার ভুল করেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ারে খুব কম সময়ই দেখা গেছে। প্রথম দুই সেটে একবারও প্রতিপক্ষের সার্ভিসে ব্রেক পয়েন্ট নিতে পারেননি। শেষ দিকে তো তার চোখে অশ্রুও দেখা যায়।

শারীরিকভাবেও যেন ঠিক চেনা তাকে দেখা যায়নি জোকোভিচকে। তবে তার ব্যর্থতাই মেদভেদেভের সাফল্যের মূল কারণ নয়।

দুই ঘণ্টা ১৫ মিনিট স্থায়ী লড়াইয়ের পুরোটা সময়ই দারুণ আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে মেদভেদেভকে। প্রথম দুই সেট জয়ের পরও আত্মতুষ্টি পেয়ে বসেনি তাকে। তৃতীয় সেটের শুরুটা করেন আরও দুর্দান্ত, দুবার সার্ভ ব্রেক করে ৫-২ গেমে এগিয়ে যান তিনি। পরে জোকোভিচ একবার ব্রেক পয়েন্ট নেন। তবে তাকে কেবল ম্যাচের দৈর্ঘ্যই বাড়ে। ফলাফলে প্রভাব পড়েনি।

তবে শেষের ওই অংশেই ম্যাচের সেরা মুহূর্তটি উপহার পান জোকোভিচ। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে তার পুরনো অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর ছিল না। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ফাইনালে ফেদেরারের বিপক্ষে তিনি পয়েন্ট হারালেই গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল দর্শকদের উল্লাস।

সেখানে এবার জোকোভিচ যখন তৃতীয় সেটে একটু ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫-৪ করেন, তখন দর্শকরা তার সমর্থনে চিৎকার করতে থাকে। দর্শকের এই ভালোবাসা তাকে ছুঁয়ে যায়। প্রথমে তাকে একটু হাসতে দেখা যায়, খানিক পরে তার চোখ ভিজে যায়, তোয়ালে দিয়ে চোখ মুছে শেষ গেমের জন্য দাঁড়ান। তখনও তার চোখ ছিল সিক্ত।

ম্যাচ শেষে জোকোভিচের কণ্ঠে শোনা যায় আবেগঘন ওই মুহূর্তের কথা, যা তার প্রলেপ হয় শিরোপা না পাওয়ার ক্ষতে।

“যদিও আমি ম্যাচ জিতিনি, তারপরও আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কারণ আজ এই কোর্টে আপনারা আমাকে খুব বিশেষ একজন হিসেবে তুলে ধরেছেন।”

“আপনারা আমার হৃদয় ছুঁয়েছেন। নিউ ইয়র্কে আমি কখনোই এমনটা অনুভব করিনি। আপনাদের ধন্যবাদ। ভালোবাসি সবাইকে।”

প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি জোকোভিচের ইতিহাস গড়ার আয়োজন ভেস্তে দেওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশও করলেন মেদভেদেভ।

“প্রথমেই, নোভাক ও তার সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমরা সবাই জানি, আজ তার লক্ষ্য কী ছিল। এই বছর ও ক্যারিয়ার জুড়েই আপনি যা অর্জন করেছেন, কথাটি আগে কখনও বলিনি, আমার কাছে আপনিই ইতিহাসের সেরা টেনিস খেলোয়াড়।”